সরকার সাংবিধানিকভাবে অবৈধ: মির্জা ফখরুল
১৬ অক্টোবর ২০২৩ ২০:২১
ঢাকা: সরকারকে সাংবিধানিকভাবে অবৈধ আখ্যা দিয়ে দ্রুত পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত যুব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সরকার পতনের এক দফা দাবিতে জাতীয়তাবাদী যুবদল এ সমাবেশ আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটি টিম এসেছিল। এই টিম কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের টিম নয়, এটি সম্পূর্ণ স্বাধীন একটি টিম। তারা এসেছিল বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিস্থিতি আছে কিনা, সেটা যাচাই করতে এবং বাংলাদশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণে বড় কোনো টিম পাঠাবে কিনা, সেটা খতিতে দেখতে— এই হলো তাদের উদ্দেশ্য। তারা স্টেক হোল্ডাদের সঙ্গে কথা বলেছে, সাংবাদিক, রাজনীতিক দল, সুশীল সমাজ, সরকার— সবার সঙ্গে আলোচনা করেছে। আমাদের সঙ্গেও কথা বলেছে। এরপর তারা একটি বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে তারা পাঁচটি সুপারিশ দিয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো সংলাপ।’
‘সেটার জবাব দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, আমরা তখনই আলোচনায় বসতে রাজি আছি, যখন বিএনপি সমস্ত শর্ত বাদ দিয়ে আলোচনায় আসবে’— বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘সবার আগে আমার প্রশ্ন আওয়ামী লীগের কাছে— আপনারা যে ক্ষমতায় বসে আছেন, আপনরা কি সাংবিধানিকভাবে বৈধ? এটা প্রমাণ করতে হবে আপনাকে। আমি প্রমাণ করছি আপনারা সাংবাধিনাকিভাবে বৈধ নন, অবৈধ।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পঞ্চদশ সংশোধনী এনে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে আপনি ক্ষমতায় বসে আছেন। তার প্রমাণ, যে রায়ের বদৌলতে… সেই রায়ে পরিষ্কার করে বিচারপতি খায়রুল হক…একটা শর্ট রায় দিয়েছিলেন যে, এটা (কেয়ারটেকার) সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তবে দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে আরও দু’টি নির্বাচন কেয়ারটেকারের অধীনে করা যেতে পারে। তার মানে শর্ত ছিল। সেই রায় ১৬ মাস পরে পূর্ণাঙ্গ রায় হিসেবে বেরিয়েছিল। কিন্তু, শর্ট ভার্ডিক্ট এবং পূর্ণাঙ্গ ভার্টিডিক্ট কোনো মিল ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ রায় বের হওয়ার আগেই এই আওয়ামী লীগ জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে পার্লামেন্টে এই আইনটা পাস করিয়েছিল। সেখানে পুরো যে প্রক্রিয়াটা ছিল, সেই প্রক্রিয়াতে দেশের সকল রাজনৈতিক দল বলেছিল, আরও দুইটা নির্বাচন কেয়ারটেকারের অধীনে হওয়া উচিত। আজকে যে সংবিধানের কথা আপনারা জোর দিয়ে বলছেন, তাহলে সবার আগে আপনাকে পদত্যাগ করতে হবে। কারণ, আপনি অবৈধভাবে আছেন।’
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সবাইকে জোর দিয়ে বলতে হবে, এই সরকার অবৈধ। শুধু ভোট চোর নয়, এই সরকার ইলিগেল সরকার, অবৈধ সরকার। এখনও এ কথাটা জোর দিয়ে আসে নাই। জোর দিয়ে বলতে হবে, যারা ক্ষমতায় বসে আছে, তারা সম্পূর্ণ অবৈধভাবে, বেইআইনিভাবে বসে আছে। সেজন্য এদেরে মুখে রাম নাম শোভা পায় না, ভুতের মুখে রাম নাম শোভা পায় না। তারা সম্পূর্ণভাবে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। আমরা সেজন্য বলেছি, আগে পদত্যাগ করেন। এক দফা মেনে নিন।’
তিনি বলেন, ‘আজকের এই সমাবেশ সাধারণ মানুষের আশা-আঙ্ক্ষা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এই সমাবেশ আগামী কয়েকদিনের মধ্যে যে চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু হতে যাচ্ছে, সেখানে নিঃসন্দেহ অনেক শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। আমাদের একটাই লক্ষ্য এখন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে বুকের ওপর যে জগদ্দল পাথর চেপে আছে, তাদের সরানো।
ফখরুল বলেন, ‘কথা একটাই, আমরা অনেক কিছু হারিয়েছি। অনেক মা সন্তান হারিয়েছে। আর পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। তাই এই সরকারকে ক্ষমতায় রেখে ঘরে ফিরলে কোনো যুবক চাকরি পাবেন না, এমনকি শান্তিতে থাকতে পারবেন না।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আজকে যত যুবক, এত যুবক আমাদের সময় ছিল না। সেই যুবকদের নিয়ে আমরা স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলন করেছিলাম। যুবদল তো এখন অনেক সংগঠিত, তোমরা কেন এই সরকারকে নাড়া দিতে পারছ না। আন্দোলন কিন্তু অল্প দিনের মধ্যে শুরু হবে। তোমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।’
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত এই সরকারের পতন ঘটাতে না পারব, ততক্ষণ পর্যন্ত সমাবেশ নিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে কোনো লাভ নেই। আমরা জানি, এই সরকার মরণ কামড় দেবে, কীভাবে উল্টা কামড় দেওয়া যায় সেই কাজ আমাদের করতে হবে। বিনা কারণে আমরা তাদের ছাড় দিতে পারি না। কোনো অন্যায় অত্যাচার, নিপীড়ন করতে সংবিধান বলেনি। রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ যে জুলুম করছে সেটা সংবিধান বলেনি।’
যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে ও সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসান, সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন, রুহুল আমিন আকিল, জাকির হোসেন নান্নু, গোলাম মোস্তফা সাগর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাবেদ হাসান স্বাধীন, সাইদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন ফেরদৌস মুরাদ, যোগাযোগ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন মামুন, গবেষণা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম