‘নির্বাচনের পূর্বে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখবেন সিনিয়র সচিব’
১৮ অক্টোবর ২০২৩ ১৭:৩৬
ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বের দিনগুলোতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফিজুর রহমানকে সমন্বয়ের দায়িত্ব দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
বুধবার (১৮ অক্টোবর) আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা শেষে কমিটির সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্র, নাশকতামূলক কাজ, ধর্মীয় উসকানি ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি করার জন্য প্রবণতা কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে যাতে সব সময় সতর্ক থাকা যায়, অঘটন ঘটাতে যাতে না পারে, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাতে সবসময় সচেতন থাকতে পারে— সেই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।’
মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন বাহিনী সমন্বয় করার জন্য জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বাহিনীগুলোর এসব কাজ তিনি সমন্বয় করবেন।’ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানরাও সেখানে থাকবেন।’
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা অবনতি করার যদি প্রচেষ্টা থাকে, তবে বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে বসে সেসব বিষয় পর্যালোচনা করে কী করা যায়, সে বিষয়ে সমন্বয় করবেন। মূল দায়িত্ব তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওপর আছেই। এটি মন্ত্রীকে আরও সহযোগিতা করার জন্য।’
কিছু কিছু রাজনৈতিক দল বলতে কাদের বোঝানো হচ্ছে— এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দল নয়, যারাই এসব করতে চায় তাদের সম্পর্কে। রাজনৈতিক কাজে কোনো বাধা নেই। এটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টি ছাড়া প্রত্যেক দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করবে, সরকার কারও কাজেই বাধা দেয় না, দেবে না।’
‘যার যার দল কর্মসূচি নিয়ে সভা-সমিতি নির্বিঘ্নে করে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো দলের কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে বা জনজীবনের নিরাপত্তার জন্য কোনো কিছু হুমকি হলে কেবল রাজনৈতিক দল নয়, যে কোনো কর্মকাণ্ড, যারা বৈধ রাজনৈতিক দল নয় তাদের বিষয়ে বলা হয়েছে। যারা প্রকাশ্য রাজনীতি না করে গুপ্ত রাজনীতি, হত্যা, মিথ্যাচার, উসকানিমূলক তাদের কথা বলা হয়েছে।’
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আরও বলেন, ‘বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমরা উদ্বিগ্ন না। গণতান্ত্রিক অধিকারের মতো যে যার কাজ করছে। সরকারের বাধা দেওয়ার কিছু নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘পূজা আসন্ন, সে সময় যাতে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন না ঘটে, নির্বিঘ্নে যাতে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে পারেন সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নজর রাখবে। সিসি ক্যামেরা স্থাপনের নির্দেশনা দিয়েছি। এটি নিশ্চিত করতে ডিসি-ইউএনওদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ আমাদের বড় সমস্যা জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের তুলনায় আমরা মনে করি ভালো অবস্থানে আছি। মুসলিম অধ্যুষিত অন্যান্য দেশে যেভাবে জঙ্গিবাদের উত্থান, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেই জঙ্গিবাদকে পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে।’
যুবসমাজ মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা খুবই অ্যালার্মিং, এটাকে দমন করতে এসব মাদক ও নেশার দ্রব্য যাতে দেশে প্রবেশ না করে সেজন্য আরও বেশি সচেতন ও তৎপর হওয়ার জন্য, যেসব রুটে এসব আসে সে রুটগুলো বন্ধ করার জন্য কমিটি নির্দেশনা দিয়েছে। একইসঙ্গে অভিভাবকদের কাছে আবেদন থাকবে তাদের সন্তানরা কী করে সে ব্যাপারে তারা যেন সচেতন থাকেন। মসজিদ, মন্দিরসহ ধর্মীয় উপাসনালয় থেকেও যেন মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা যায়, সে ব্যাপারে তারাও কাজ করবেন, এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
কমিটির সভাপতি বলেন, ‘সংবিধান অনুসারে সাধারণ নির্বাচন আসন্ন। নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে টেনটেটিভ সময় ঘোষণা করেছে যে, নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে তারা ইলেকশনের শিডিউল ঘোষণা করবেন। এরপর সরকারের কার্যক্রম নতুন কোনো পরিকল্পনা নিতে পারে না, শুধু রুটিন ওয়ার্ক করে যায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে কাজ করে। নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে সবকিছু থাকে। নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণ সহায়তা করবে, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে যা যা করার তা পালন করবে। ভোটের পরিবেশ যাতে সুষ্ঠু থাকে সেটি নিশ্চিত করার জন্য সচেতন থাকবে।’
একটি দল নির্বাচন বর্জন করলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে কি না— জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘জনগণের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তারা জনগণের জন্য, কোনো দলের জন্য না। তারা সংবিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবেন।’
বৈঠকে কমিটির সদস্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/ইউজে/এনএস