পড়ল ঢাকে কাঠি, মণ্ডপে-মণ্ডপে অধিষ্ঠান দেবীর
১৯ অক্টোবর ২০২৩ ২২:২১
চট্টগ্রাম ব্যুরো : প্রতীক্ষার প্রহর শেষ। গোধূলি বেলা বিদায় নেওয়ার পরই মণ্ডপে, মণ্ডপে বেজে উঠেছে শঙ্খ, কাসরের ধ্বনি, ঢাকে পড়েছে কাঠি। দেবীর অকাল বোধন হয়েছে পঞ্চমীতে। গিরিকন্যা দুর্গার মর্ত্যে অধিষ্ঠান চলছে। পঞ্জিকা বলছে, এবার দেবীর আগমন-ফেরা দুটোই ঘোড়ায় চড়ে। সে হিসেবে ছত্রভঙ্গ কিংবা অশুভের ইঙ্গিত। কিন্তু দেবীকে বরণে ভক্তের কী এতকিছু ভাবলে চলে!
তাই তো, মণ্ডপে-মণ্ডপে দেবী বরণের পালা শুরু হয়েছে সমারোহে। কোথাও পর্ণ কুটির কিন্তু সুখের আলয়ে, কোথাও জমিদার বাড়িতে আবার কোথাও বাঁশ-কঞ্চি, কাঠের ঘরে হচ্ছে দেবীর অধিষ্ঠান। শেষ মুহুর্তে মাকে বরণ করে ঘরে তুলতে ফুরসত নেই ভক্তদের। উৎসবে মেতেছে যেন পুরো বন্দরনগরী!
পঞ্জিকামতে, বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) অকালবোধন শেষে আগামীকাল হবে দেবীর ষষ্ঠীপূজো। তার আগেই মণ্ডপে মণ্ডপে দেবীর অধিষ্ঠান হয়ে যাচ্ছে। নগরীর বিভিন্ন মণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি মণ্ডপেই এসেছে মায়ের প্রতিমা। নজরকাড়া আলপনার সঙ্গে বর্ণিল আলপনায় সেজেছে মণ্ডপগুলো।
বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ নালাপাড়া, হাজারী লেইন ও রাজাপুকুর লেইনের তিনটি মণ্ডপে গিয়ে দেখা গেছে ব্যতিক্রমী নানা আয়োজন।
হাজারী লেইনেরে পূজামণ্ডপের নান্দনিক সজ্জা এবার সকলের নজর কাড়ছে। বরাবর ব্যতিক্রমী নানা আয়োজনের জন্য আলোচিত এ মণ্ডপের এবারের প্রতিপাদ্য ‘প্রাণ প্রকৃতির টানে’। সুবিশাল মঞ্চটি সাজানো হয়েছে পাটকাঠি, বাঁশের কঞ্চি দিয়ে। বাংলার আবহমান প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের আবহকে তুলে ধরেই এবার দেবীকে ভক্তদের সামনে আনছেন আয়োজকরা।
হাজারী লেইন পূজা উদযাপন পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রাণ, প্রকৃতি, পরিবেশ- এসব বিষয়কে আমরা এবার গুরুত্ব দিয়েছি। মঞ্চ, প্যান্ডেল করা হয়েছে পাটকাঠি, বাঁশের কঞ্চি দিয়ে। এখনকার শিশু-কিশোরদের সঙ্গে প্রকৃতির কোনো সংযোগ নেই। মোবাইল, কম্পিউটার, ডিভাইস আমাদের শিশুদের কোমল শৈশব কেড়ে নিয়েছে। অনেকে পাটকাঠি কি, বাঁশের কঞ্চি কি সেটাও জানে না। আমরা শিশু-কিশোরদের প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ ঘটানোর চেষ্টা করেছি।’
পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ম দে সারাবাংলাকে বলেন, ‘পঞ্চমীতে বোধনের মধ্য দিয়ে দেবীর দুর্গার অবয়ব উন্মোচন করা হয়েছে। এরপর মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলন করা হয়েছে। এরপর শোভাযাত্রা বের হয়। আজ (বৃহস্পতিবার) থেকেই দর্শনার্থীদের পূজামণ্ডপ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।’
দক্ষিণ নালাপাড়ার পূজামণ্ডপ এবার আড়ম্বরের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে স্বাত্ত্বিক পূজায়। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য্য ফিরিয়ে আনতে চান আয়োজকরা। তবে মঞ্চসহ আনুষাঙ্গিক সজ্জা এবং পূজোর সময় বড়পর্দায় ফুটিয়ে তোলা হবে মায়ের নিরঞ্জনের হৃদয়গ্রাহী দৃশ্য।
দক্ষিণ নালাপাড়া পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বাপ্পী দাশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এবার স্বাত্ত্বিক পূজা করছি। মায়ের প্রতিমা স্থির থাকবে। আরাধনাটাকে প্রাধান্য দিয়েছি। তবে প্রতিমা নিরঞ্জনের একটি আবহ আমরা তুলে ধরব।’
রাজাপুকুর লেইন পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাকেশ গুহ সানি জানালেন, এবার তাদের মণ্ডপ সেজেছে গঙ্গা আরতীর আবহে। ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে মণ্ডপ উন্মুক্ত করা হবে।
প্রতিটি মণ্ডপেই দেবীর শিরোদেশে অধিষ্ঠিত শিব। ডানে লক্ষ্মী-গণেশ, বামে স্বরস্বতী-কার্তিক। এই প্রতিমা কাঠামোর মধ্যে মূল দেবীশক্তি হলেন দুর্গা।
শুক্রবার ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজা শুরু হয়ে মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) দশমীতে বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে।
চট্টগ্রাম মহানগরীতে এবার ২৯৩টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। আর চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় ২ হাজার ১৭৫ মণ্ডপে দুর্গাপূজা হচ্ছে। এর মধ্যে সর্বজনীন প্রতিমা পূজা ১ হাজার ৬৫১টি ও ঘটপূজা ৫২৪টি।
ছবি : শ্যামল নন্দী, ফটোকরেসপন্ডেন্ট, সারাবাংলা
সারাবাংলা/একে