‘সারা পৃথিবীতে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি’
২০ অক্টোবর ২০২৩ ২২:৪০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামে এক আন্তঃধর্মীয় সংলাপে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা বলেছেন, শুধু আমাদের দেশে নয়, গোটা পৃথিবীব্যাপী ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি। নিজের ধর্মকে বড় করার তাগাদা নয় বরং সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহাবস্থান নির্ধারণ করা অত্যন্ত যুগোপযোগী।
শুক্রবার (২০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে খ্রিষ্টীয় ঐক্য প্রচেষ্টা ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপ কমিশনের উদ্যোগে ‘বিশ্বাসের অনুশাসনে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান’ শীর্ষক এ সংলাপের আয়োজন করা হয়।
সভায় খ্রিস্টান, হিন্দু, মুসলিম ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বিশিষ্টজনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকরা অংশ নেন। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক বোরহান উদ্দিন মো. আবু আহসান।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক মো. জাফর উল্লাহ বলেন, ‘এই বিশ্ব বৈচিত্র্যময়। এখানে নানা বর্ণ আছে, নানা ভাষা আছে, নানা ধর্মও আছে। আছে নানারকম পার্থক্য। এ সবকিছু স্বীকার করে নিয়ে তার মাঝে ঐক্য গড়ে তোলা, সমন্বয় প্রতিষ্ঠা করা এবং এভাবে এক সুশৃঙ্খল সুখী-সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলাই হচ্ছে মহান স্রষ্টার অভিপ্রায়।’
খ্রিষ্টীয় ঐক্য ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপ কমিশনের সাধারণ সম্পাদক ফাদার প্যাট্রিক গোমেজ বলেন, ‘যিশুর প্রধান আদেশই হল ঈশ্বরকে ভালবাসা ও প্রতিবেশীকে ভালোবাসা। এই ভালোবাসার স্বরূপ তুলে ধরে সাধু পল বলেছেন, ভালবাসা নিত্য-সহিষ্ণু, তার মধ্যে নেই কোনো ঈর্ষা। ভালবাসা কখনও বড়াই করে না। উদ্ধতও হয় না, রুক্ষ্ণ হয় না। সে স্বার্থপর নয়। বদমেজাজিও নয়। অধর্মে সে আনন্দ পায় না; বরং সত্যকে নিয়েই তার আনন্দ।’
ইউএসটিসির সাবেক উপাচার্য প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, ‘পরমত সহনশীলতা, ঈমান, বিশ্বাস-ভক্তি-শ্রদ্ধা-সম্মান এবং শাস্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা সকলেরই নৈতিক দায়িত্ব। রাষ্ট্র, সমাজ, বিবেকবান মানুষ মাত্রই সুখ সমৃদ্ধিতে অবস্থান করতে চায়। কিন্তু, সে সমৃদ্ধি যেন বৈষম্য, শোষণ, ঘৃণা, বঞ্চনা কিংবা মানবাধিকার বঞ্চিত না হয়। হতে হবে সুষম বণ্টন, সাম্য, মানবতাবাদী, এবং পরিবেশ ভারসাম্য ও প্রকৃতি প্রাধান্য।’
অধ্যাপক সুকান্ত ভট্টাচাৰ্য্য বলেন, ‘যত্র জীব, তত্র শিব। অর্থাৎ প্রত্যেক জীবের মধ্যেই স্রষ্টার অস্তিত্ব। তাই জীব সেবা মানেই ঈশ্বরপ্রেম। যুগাবতার রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলেছেন, যত মত, তত পথ কিংবা ভক্তের হৃদয় ভগবানের বৈঠকখানা।’
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম আর্চডায়োসিসের আর্চবিশপ লরেন্স সুব্রত হাওলাদার বলেন, ‘সবাই যেন নিজ নিজ ধর্মের বিশ্বাসকে সুদৃঢ় করে এবং সেই বিশ্বাস থেকে উৎসারিত শক্তিতে শক্তিমান হয়ে ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক, সামাজিক ও নৈতিক জীবন অনুশীলন করতে পারে এবং মহতি জীবন-সাধনায় ব্রতী হতে পারে সে জন্যে এই আন্তঃধর্মীয় সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে।’
চট্টগ্রাম আর্চডায়োসিসের সাধারণ সম্পাদক মানিক উইলভার ডি কস্টা ও মাইজভাণ্ডারী একাডেমির সদস্য আরেফিন রিয়াদের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.) ট্রাস্টের সম্মানিত সচিব অধ্যাপক এ ওয়াই এম জাফর। বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে সঙ্গীতও পরিবেশন করা হয়।
সারাবাংলা/আইসি/একে