‘আন্দোলনের নামে দুর্বৃত্তপনা করলে ছেড়ে দেব না’
২১ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:২২
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, কিছু কিছু সময় আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতসহ আরও অনেকে মাঠে নামতে চায়। তারা আন্দোলন করুক, আমাদের কোনো কথা নাই। কিন্তু তারা যদি আবার ওই রকম অগ্নিসন্ত্রাস করে, ধ্বংসাত্মক কাজ করে, ওই রকম দুর্বৃত্তপণা করে তাহলে কিন্তু আমরা ছেড়ে দেব না।
শনিবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আইনজীবী মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে, সকাল ১১টা ২৪ মিনিটে সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় ১৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নবনির্মিত ১৫ তলা ভবন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আইনজীবী মহাসমাবেশে যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের প্রতিটি মানুষ একেবারে নিম্নস্তর থেকে উচ্চ স্তর সকলেই যেন ন্যায়বিচার পায়, উন্নত জীবন পায় এবং দারিদ্রমুক্ত হয় সেটাই আমাদের প্রচেষ্টা। যেখানে আগে বিএনপি সরকারের আমলে ৪১ ভাগ ছিল দারিদ্র্যের হার। আমরা তা কমিয়ে ১৮ দশমিক ৭ ভাগে নামিয়ে এনেছি। হতদরিদ্র যেখানে ২৫ দশমিক ৫ ভাগ ছিল। সেটা কমিয়ে মাত্র ৫ ভাগে নামিয়ে এনেছি। ইনশাআল্লাহ কেউ এদেশে হতদরিদ্র, ভূমিহীন-গৃহহীন, ঠিকানাবিহীন থাকবে না। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা মুজিব শতবর্ষ উদযাপন করেছি সেই লক্ষ্য নিয়ে।’
বৈশ্বিক খাদ্য মন্দা, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ স্যাংশন পাল্টা স্যাংশনসহ বর্তমানে ইসরাইল-ফিলিস্তিন হামাসের যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রসঙ্গও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘প্যালেস্টাইনের উপর যে হামলা হচ্ছে, একটা হাসপাতালে হামলা করে নারী ও শিশুদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। এর ফলে আবারও বিশ্বব্যাপী তেলের দাম বেড়ে যাচ্ছে। জিনিসের দাম বেড়ে যাচ্ছে। উন্নত দেশগুলি হিমশিম খাচ্ছে।’
করোনা ভাইসের সময় বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে সরকারপ্রধান বলেন, ‘মানুষকে সুরক্ষিত করার জন্য আমরা রিজার্ভের টাকা ব্যয় টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। আমরা মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি। কিন্তু এই যে বিশ্বব্যাপী খাদ্য মন্দা! তখন আমাদের করণীয় কি? কেউ যেন বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলতে না পারে, যেটা আগে করেছিল। আর যেন করতে পারে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমার একটা অনুরোধ আপনাদের কাছে, কোথাও যেন এক ইঞ্চি জমি অনাবাদী না থাকে। যে যাই পারেন উৎপাদন করেন। মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত থাকে। আমরা দেশে যেমন নিশ্চিত রেখেছি।’
১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ এরপর ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল অবধি ২৯টা বছর দেশের মানুষের কোনো ভাগ্যের পরিবর্তন হয় নাই বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যারা ক্ষমতায় ছিল নিজের ভাগ্য গড়তেই ব্যস্ত ছিল। দেশের মানুষের জন্য না। একমাত্র আওয়ামী লীগ যখন সরকারে এসেছে। তখনেই মানুষের ভাগ্য ফিরতে শুরু করেছে। আজকের রাস্তা ঘাট পুল ব্রিজ রেল বিমান নৌপথ সড়ক পথ সব কিছুরেই উন্নতি করছি। কোনো দিক থেকে আমরা পিছিয়ে নেই।’
আওয়ামী লীগ ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ক্ষমতায় আছে বলে বাংলাদেশ বদলে গেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘এই বাংলাদেশ বদলে গেছে। আজকে আর হাহাকার নেই। উত্তরবঙ্গে কোথাও মঙ্গা হয় না। দুর্ভিক্ষ হয় না। মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা আমরা নিশ্চিত করেছি। যেহেতু মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এক কোটি পরিবারকে আমরা বিশেষ উপকরণ কার্ড দিচ্ছি। যাতে স্বল্প দামে তারা খাদ্য ক্রয় করতে পারে। হতদরিদ্র ৫০ লাখ পরিবারকে মাত্র ১৫ টাকায় চাল কিনতে পারে। সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছি। মানুষের জন্য কল্যাণে কাজ করাটাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা সেই কাজ করে যাচ্ছি বলে মনে করি।’
বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। তাই হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান প্রত্যেককে যার যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এক্ষেত্রে কেউ কারো ধর্মের উপর আঘাত হানবে না। সে কথা তো আমাদের নবী করমি (সা.) শিখিয়েছেন। ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম। সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশে যেন এই ধরনের ঘটনা না ঘটে। সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।’
যাতে দ্রুত বিচার সম্পন্ন হয় সেই ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই এ দেশের মানুষের মানবাধিকার সুরক্ষিত থাকুক। ন্যায় বিচার নিশ্চিত হোক। আমাদের মতো যেন বিচার পেতে ৩৫ বছর না লাগে।’
তিনি বলেন, ‘আসুন সকলে মিলে ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি। যেখানে ম্মার্ট জনগোষ্ঠী হবে, স্মার্ট অর্থনীতি হবে, স্মার্ট সোসাইটি হবে, স্মার্ট গর্ভনমেন্ট হবে। মানুষের কল্যাণেই আওয়ামী লীগ কাজ করে যাবে। আর আপনারা মানুষের পাশে থাকবেন আর সেখানে অন্যায় দেখবেন, অবশ্যই সেই অন্যায়কারীরা যেন যথাযথ সাজা পায়। শুধু প্র্যাকটিস করলে হবে না, মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। মহাসমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, বার কাউন্সিলের সহ-সভাপতি সৈয়দ রেজাউর রহমান, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এবং অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন, আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক নজিবুল্লাহ হিরু।
সারাবাংলা/এনআর/ইআ