সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ‘স্বতন্ত্র ফান্ড’ গঠনের দাবি
২১ অক্টোবর ২০২৩ ২০:২১
ঢাকা: সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ‘ইন্ডিপেনডেন্ট ফান্ড’ গঠনের দাবি জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য বাৎসরিক সর্বোচ্চ ৩ হাজার কোটি টাকার ফান্ড প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ড. মাহবুব উদ্দিন আহমেদ।
শনিবার (২১ অক্টোবর) রাজধানীর ধানমন্ডির ১০/এ-তে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান।
এই ফান্ড সংগ্রহের পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘পুলিশ কর্তৃক মোটরযান থেকে জরিমানার অর্থের একটি অংশ এবং বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের সিএসআর ও অনুদান থেকে এই অর্থ খুব সহজেই সংগ্রহ করা সম্ভব।’ ইন্ডিপেনডেন্ট ফান্ড গঠন হলে সড়ক দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আহত রোগীকে ব্যক্তিগত অর্থ ছাড়াই উপযুক্ত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ড. মাহবুব উদ্দিন বলেন, ‘রোগীকে একটি মেডিকেল কোড নম্বরে চিহ্নিত করে উপযুক্ত যেকোনো হাসপাতাল তার চিকিৎসা শুরু করবে। পরবর্তী সময়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর চিকিৎসা খরচ ইন্ডিপেনডেন্ট ফান্ড থেকে নিয়ে নেবে। এই কার্যক্রম যথাযথ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতিমুক্তভাবে বাস্তবায়নের জন্য একটি শক্তিশালী মাল্টি সেক্টরাল কেন্দ্রীয় কমিটি থাকতে হবে।’
সিভিল প্রশাসন, পুলিশ, চিকিৎসক, সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, আইনজীবী, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি, সড়ক নিরাপত্তায় কাজ করা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধি ইত্যাদির সমন্বয়ে এই কমিটি গঠনের পরামর্শ দেন তিনি।
গত পাঁচ বছরের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালে ৪ হাজার ৬৯৩টি দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ২১১ জন নিহত ও ৭ হাজার ১০৩ জন আহত হন। ২০২০ সালে ৪ হাজার ৭৩৫টি দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ৪৩১ জন নিহত ও ৭ হাজার ৩৭৯ জন আহত হন। ২০২১ সালে ৫ হাজার ৩৭১টি দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ২৮৪ জন নিহত ও আহত হন ৭৪৬৮ জন।’
তিনি জানান, ২০২২ সালে ৬ হাজার ৮২৯টি দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৭১৩ জন নিহত ও আহত হয়েছে ১২ হাজার ৬১৫ জন। অন্যদিকে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪ হাজার ২৯৬টি দুর্ঘটনায় ৪ হাজার ৩৬২ জন নিহত ও আহত হয়েছেন ৭ হাজার ৮২৩ জন।
সড়ক দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে উঠে আসে- ১. ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; ২. বেপরোয়া গতি; ৩. চালকদের অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; ৪. চালকদের
বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা; ৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; ৬. তরুণ-যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; ৭. জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; ৮. দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; ৯. বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি ও ১০.গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।
সড়ক দুর্ঘটনার রোধ করতে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেছে সংগঠনটি। সেগুলো হলো- ১. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বাড়াতে হবে; ২. চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে; ৩. বিআরটিএ’র সক্ষমতা বাড়াতে হবে; ৪. পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের সুষ্ঠুপ্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; ৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য সার্ভিস রোড তৈরি করতে হবে; ৬. পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে; ৭. গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে; ৮. রেল ও নৌ-পথ সংস্কার করে সড়ক পথের উপর চাপ কমাতে হবে; ৯. টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন করতে হবে; ১০. ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
সারাবাংলা/আরএফ/পিটিএম