যুক্ত হচ্ছে ৩ কাজ, আরও নিখুঁত হবে জনশুমারি
২৩ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:১৭
ঢাকা: সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জনশুমারি ও গৃহগণনা প্রক্রিয়ার অনেকটাই আধুনিকায়ন হয়েছে। এবার এই প্রক্রিয়াকে আরও আধুনিক ও নিখুঁত করতে এতে নতুন তিনটি কাজ যুক্ত করা হচ্ছে। এগুলো হলো— জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্ট্রার (এনপিআর) তৈরি; শুমারি বা জরিপ কার্যক্রমের কভারেজ এরর বা আন্ডারকাউন্ট (গণনায় ত্রুটি) কমিয়ে আনার জন্য স্থায়ী গণনা এলাকা গঠন; এবং শুমারিতে ব্যবহৃত আইসিএমএসকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, প্রক্রিয়াগুলো যুক্ত করা হলে শুমারি ও জরিপের কাজগুলো আরও সহজে ও নিখুঁতভাবে করা সম্ভব হবে। এর মধ্যে আইসিএমএসকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পারলে ভবিষ্যতে বিবিএস পরিচালিত বিভিন্ন শুমারি ও জরিপ কার্যক্রম ডিজিটাল পদ্ধতিতে সুপারভিশন ও মনিটরিং করা সহজ হবে।
বিবিএস সূত্র আরও বলছে, জনশুমারিতে নতুন এই তিন কাজ যুক্ত করতে বাড়তি কোনো অর্থও খরচ হবে না। বরং জনশুমারি প্রকল্প থেকে যে অর্থ বেঁচে গেছে, তা দিয়েই এই কাজগুলো যুক্ত করা যাবে প্রকল্পটিতে। এ কারণেই ব্যয় না বাড়িয়ে প্রকল্পটি সংশোধনের একটি প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ সেপ্টেম্বর প্রকল্পটির স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সভায় প্রকল্পটির নতুন এসব সংযোজনের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।
সভায় কমিশনের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন বলেন, প্রকল্পের মূল ডিপিপিতে এই তিনটি কাজের উল্লেখ ছিল না। প্রকল্পের অব্যয়িত অর্থ ব্যবহার করে এসব কাজ করার ক্ষেত্রে ব্যয় না বাড়িয়ে প্রকল্প সংশোধনের ক্ষেত্রে কোনো আইনি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে কি না, তা পর্যালোচনা করতে হবে।
পরে সভায় আলোচনা শেষে জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২১ প্রকল্পের ব্যয় না হওয়া অর্থ ব্যবহার করে আইসিএমএসকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া, গণনা এলাকা গঠন ও জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্ট্রার তৈরির জন্য পাইলটিং কার্যক্রম ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি এসব কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিবিএসের মহাপরিচালককে তিন থেকে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে, যে কমিটি এই কাজগুলো পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দেবে।
সভা সূত্র জানায়, জনশুমারি প্রকল্পের আওতায় যেসব কার্যক্রম চলমান আছে তার মধ্যে অন্যতম চূড়ান্ত প্রতিবেদন (ন্যাশনাল ভলিউম-১) তৈরি। পিএসসি সভায় প্রকল্প পরিচালক মো. দিলদাল হাসেন বলেন, গত বছরের ১৫ থেকে ২১ জুন পর্যন্ত জনশুমারি ও গৃহগনণা ২০২২-এর তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম শেষ হয়েছে। জনশুমারির ন্যাশনাল রিপোর্ট (ভলিউম-১) প্রকাশের জন্য তথ্য প্রক্রিয়াকরণের কাজ শেষ। এরই মধ্যে গত বছরের ন্যাশনাল রিপোর্টের (ভলিউম-১) খসড়া তৈরি করা হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, খসড়া প্রতিবেদনটি এ বছরের ২৮ আগস্ট এডিটরস ফোরামসহ প্রকল্প পরিচালক ও বিবিএসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থাপন করে মতামত নেওয়া হয়। পরে গত ১২ সেপ্টেম্বর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভাতেও ন্যাশনাল রিপোর্টের (ভলিউম-১) খসড়া রিপোর্ট উপস্থাপন করে মতামত নেওয়া হয়। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য শিগগিরই খসড়া প্রতিবেদেনটি পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো হবে।
ওই শুমারির আর্থসামাজিক ও জনমিতিক জরিপ পরিচালনার কাজটিও চলমান। প্রকল্প পরিচালক জানান, এ চলতি বছরের ২১ ও ২২ জুন আর্থসামাজিক ও জনমিতিক জরিপ ২০২৩ পরিচালনা করা হয়। এরই মধ্যে জরিপের সংগ্রহ করা তথ্যের কোডিং ও সম্পাদনা শেষ হয়েছে। জরিপের ডাটা প্রসেসিং ও অ্যানালাইসিস শেষ করার জন্য টিম গঠন করা হয়েছে। জরিপ থেকে উঠে আসা প্রধান প্রধান তথ্য (কি ফাইন্ডিংস) ও মূল প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য ডাটা প্রসেসিং ও অ্যানালাইসিস চলছে।
জনশুমারি থেকে ২৫টি বিষয়ভিত্তিক মনোগ্রাফ তৈরির কাজও চলছে। সভায় প্রকল্প পরিচালক দিলদার হোসেন জানান, শুমারিরর তথ্য ব্যবহার করে ২৫টি বিষয়ভিত্তিক মনোগ্রাফ প্রস্তুতের সংস্থান রয়েছে প্রকল্পে। প্রকল্প টিম মনোগ্রাফের বিষয়ভিত্তিক পরিধি নির্ধারণের জন্য একাধিক সভা করে খসড়া প্রস্তুত করেছে। খসড়াটি গত ২৪ সেপ্টেম্বর মনোগ্রাফ কমিটির অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে।
শুমারির তথ্য ব্যবহার করে ৩৫টি ইনফোগ্রাফ তৈরির কাজও প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রকল্প পরিচালক সভায় জানান, ইনফোগ্রাফ তৈরির জন্য পরিধি ও সূচক নির্ধারণের জন্য একটি কারিগরি টিম গঠন করা হয়েছে। এরই মধ্যে গত ৫ সেপ্টেম্বর বিবিএসেজর উপপরিচালক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে এবং গত ১৩ সেপ্টেম্বর ইনফোগ্রাফ বিষয়ক কারিগরি টিমের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর
জনশুমারি জনশুমারি ও গৃহগণনা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বিবিএস