গাজার হাসপাতালে বাড়ছে হতাহতদের সংখ্যা, সংকট কাফনের
২৩ অক্টোবর ২০২৩ ১১:৫৩
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে ১৬ দিন ধরে চলছে যুদ্ধ। এই যুদ্ধে দুই দেশের কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। তবে ইসরাইলের বিমান হামলায় সবচেয়ে বেশি হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ফিলিস্তিনের গাজায় উপত্যকায়। প্রতিদিন গাজার হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে হতাহতদের সংখ্যা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে, হাসপাতালগুলোতে মৃতদেহ ঢেকে রাখার কাপড়ও ফুরিয়ে যাচ্ছে। মধ্য গাজার আল-আকসা শহিদ হাসপাতালে এমন পরিস্থিতি দেখতে পায় বিবিসি।
মৃতদেহগুলো হাসপাতালের বাইরে একটি উঠানে রাখা হয়েছে, তাদের জন্য করা হচ্ছে প্রার্থনা। আর নিহতদের আত্মীয়-স্বজনরা শোকে কাঁদতে মেঝেতে লুটিয়ে পড়তে দেখা যায়।
এদিকে হাসপাতালের ভিতরে আহতদের চিকিৎসা দিতে এবং গুরুতর আহতদের বাঁচাতে লড়াই করছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু ওষুধ মজুদ ও সরবরাহ দিন দিন কমে যাচ্ছে।
একটি হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে বিবিসি’র প্রতিবেদক দেখেন, আহত ব্যক্তিকে সেবা দিয়ে পরবর্তী রোগীর কাছে যাওয়ার জন্য দৌড়াচ্ছিলেন একজন চিকিৎসক। গতকাল রোববার (২৩ অক্টোবর) হাসপাতাল থেকে নিহতদের ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে দু’টি শিশুরও মৃতদেহ ছিল।
হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, গত রাতে ইসরাইলের বিমান হামলায় ১০০ জনের অধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
এদিকে গত রাতে গাজার আল-শিফা এবং আল-কুদস হাসপাতালের আশেপাশে হামলা চালিয়ে ইসরাইল। ফিলিস্তিনির বার্তা সংস্থা ডব্লিউএএফএ বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানিয়েছে, আল-শিফা মেডিকেল কমপ্লেক্সের আশেপাশে বেশ কয়েকটি ইসরাইলি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। এই হাসপাতালে বর্তমানে গাজার সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আহত রোগী ও চিকিৎসা কর্মী রয়েছেন। এছাড়া আল-কুদস হাসপাতালের পাশে আরেকটি হামলা চালায় ইসরাইল। এতে হতাহতের খবর না পাওয়া গেলেও গত রাতের ইসরাইলি বিমান গাজায় ৩০ জন ফিলিস্তিনি হয়েছেন।
এদিকে হাসপাতালে হামলা চালানোর বিষয়ে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বিবিসি’কে জানায়, ‘হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় হামাসের একজন নেতার উপস্থিতি রয়েছেন— এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কাছাকাছি এলাকাগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। ওই এলাকা থেকেই তিনি (হামাস নেতা) ইসরাইলের দিকে হামলার চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।’
গতকাল রোববার সকালে হাসপাতালে গাড়ির স্রোত দেখা গেছে। এসব গাড়িতে করে হতাহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের একজন স্বাস্থ্যকর্মী বিবিসি’ জানায়, ‘ভোরের পর থেকে আমরা এখানে রয়েছি এবং হাসপাতালের বাহিরের খোলা স্থান মরদেহে পূর্ণ হয়ে গেছে। হাসপাতালের ভেতরে এবং বাইরের রেফ্রিজারেটর লাশে ভর্তি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে মৃতদেহের জন্য পর্যাপ্ত কাফনের ব্যবস্থা নেই, কারণ সংখ্যাটা অনেক বেশি। সবগুলো মৃতদেহের অংশবিশেষ, বিচ্ছিন্ন ও টুকরো টুকরো হয়ে আসছে। আমরা তাদের শনাক্ত করতে পারছি না। কারণ লাশগুলো বিকৃত ও থেতলে গেছে।’
গাজায় বর্তমান পরিস্থিতি ‘অসহনীয়’ উল্লেখ করে এই স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, ‘আমরা আগে যা কিছু দেখেছি তা সত্ত্বেও বলতে হচ্ছে, এমন দৃশ্য আমরা কখনো দেখিনি।’
হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ তৃতীয় সপ্তাহে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাজার সবগুলো হাসপাতালে অনুরূপ দৃশ্য দেখা গেছে। এদিকে গতকাল রোববার ইউনিসেফ সতর্ক করেছে, বর্তমানে হাসপাতালের ইনকিউবেটরে ১২০ শিশু রয়েছে। এর মধ্যে ৭০টি অকাল নবজাতকও ভেন্টিলেটরে রয়েছে। এসব মেশিন বর্তমানে ব্যাকআপ জেনারেটরের উপর নির্ভরশীল। ইসরাইল থেকে গাজার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার সময় এই জেনারেটরগুলো স্থাপন করা হয়েছিল।
ইউনিসেফ’র মুখপাত্র জোনাথন ক্রিকক্স বলেছেন, ‘বর্তমানে আমাদের ১২০ জন নবজাতক রয়েছে। তারা ইনকিউবেটরে রয়েছে। এর মধ্যে আমাদের কাছে ৭০ জন নবজাতক রয়েছে, যাদের কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।’
তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘ওই ওয়ার্ডে একটি ৩২ সপ্তাহ বয়সী শিশু আছে। যাকে চিকিৎসকরা তার মা বিমান হামলায় নিহত হওয়ার পর বাঁচাতে পেরেছিলেন। মা’সহ পুরো পরিবার মারা গেলেও শিশুটি রক্ষা পেয়েছে।’
জোনাথন ক্রিকক্স আরও বলেন, ‘ওই শিশুটি’সহ একই ওয়ার্ডে থাকা অন্য শিশুদের মৃত্যু নিশ্চিত, যদি জেনারেটর বন্ধ হয়ে যায়।’ এগুলো চালু রাখার জন্য জ্বালানির সরবরাহ কম।
চলমান যুদ্ধে ইসরাইলের বিমান হামলায় অন্তত ৪ হাজার ৬৫১ ফিলিস্তিন নিহত হয়েছেন। এদিকে হামাসের বোমায় ১ হাজার ৪০০ ইসরাইলি নিহত হয়েছেন। এছাড়া ২১২ জনকে জিম্মি করে গাজায় নেওয়া হয়।
এর আগে, গত ৭ অক্টোবর (শনিবার) ইসরাইলে অকস্মিক রকেট হামলা শুরু করে হামাস। ফিলিস্তিনিদের উপর গত কয়েক দশক ধরে চালানো পাশবিকতার জবাব দিতে ইসরাইলের উপর এই হামলা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে হামাস। যার জবাবে গাজায় বিমান হামলায় শুরু করে ইসরাইল।
সারাবাংলা/এনএস