বঙ্গবন্ধু টানেলের সঙ্গে পর্দা উঠছে আরও ১৯ প্রকল্পের
২৪ অক্টোবর ২০২৩ ১০:৩৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: আগামী ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের কর্ণফুলী তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম টানেল উদ্বোধন করতে চট্টগ্রাম সফরে আসবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরকালে টানেল ছাড়া আরও ১৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন তিনি।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরসূচিতে উদ্বোধনী তালিকায় আছে- বঙ্গবন্ধু টানেল, চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স, জেলা পরিষদ টাওয়ার, রাঙ্গুনিয়া ও আনোয়ারা জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, পটিয়ায় শেখ কামাল অডিটোরিয়াম কাম মাল্টিপারপাস হল, রাউজানে শেখ কামাল কমপ্লেক্স, আগ্রাবাদে সিজিএস কলোনিতে নয়টি বহুতল আবাসিক ভবন, বিমানবন্দরে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল ও শিকলবাহা খালের ওপর পিসি গার্ডার ব্রিজ।
এর মধ্যে টানেলের কাজ প্রায় শতভাগ শেষ। টানেল নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করেছে চীনের চায়না কমিউনিকেশনস, কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসিএল) লিমিটেড। চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে গণগ্রন্থাগার অধিদফতর। এই প্রকল্পের উদ্যেগ নিয়েছিল সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৮৭ শতাংশ। প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দ ছিল ২৮ কোটি ১৩৯ লাখ কোটি টাকা। বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২০ কোটি ৭৭১ লাখ টাকা।
জেলা পরিষদ টাওয়ার প্রকল্পটি কাজের অগ্রগতি ৮০ শতাংশ। এ প্রকল্পের জন্য খরচ ধরা হয়েছিল ৮১ কোটি ২৯ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৪০ কোটি ২২ লাখ ৯৪ হাজার কোটি টাকা। নিজ অর্থায়নেই এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ। রাঙ্গুনিয়া জেলা পরিষদ ডাকবাংলোর কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। জেলা পরিষদ এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ কোটি ৬৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ২১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।
আনোয়ারা জেলা পরিষদ ডাকবাংলোর কাজও শতভাগ শেষ। এ প্রকল্পও জেলা পরিষদ বাস্তবায়ন করেছে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল দুই কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৪৮ লাখ ২১ হাজার টাকা। পটিয়ায় শেখ কামাল অডিটোরিয়াম কাম মাল্টিপারপাস হলের কাজ শেষ হয়েছে ৮৫ শতাংশ। বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০ কোটি ১২ লাখ ৬১ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ব্যয় করা হয়েছে ১৬ কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। রাউজানে শেখ কামাল কমপ্লেক্স কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল সাত কোটি ৩০ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। খরচ হয়েছে সাত কোটি ৩১ লাখ ২৭ হাজার ১১৭ টাকা।
আগ্রাবাদে সিজিএস কলোনিতে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য করা নয়টি বহুতল আবাসিক ভবনের কাজও শেষ শতভাগ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগ-৪। এ প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৮২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৪৭২ কোটি ২৩ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে করা বঙ্গবন্ধু ম্যুরালের কাজও শেষ হয়েছে। যা বাস্তবায়ন করেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। এতে খরচ ধরা হয়েছে ৮৪ লাখ টাকা।
পটিয়া উপজেলার উজিরপুর সড়কে শিকলবাহা খালের ওপর করা পিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে শতভাগ। যা বাস্তবায়ন করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর। প্রকল্পটির খরচ ধরা হয়েছিল ৪৯ কোটি ৪৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৪৫ কোটি ২৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
এদিকে, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন তালিকায় আছে- চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর, বিমানবন্দর থেকে বঙ্গবন্ধু টানেল পর্যন্ত শেখ হাসিনা সড়ক ও সিমেন্স হোস্টেল কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ।
এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। বিমানবন্দর থেকে বঙ্গবন্ধু টানেল পর্যন্ত শেখ হাসিনা সড়ক প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের কাজ প্রায় ৫০ শতাংশ শেষ হয়েছে। আর নাবিকদের জন্য করা সিমেন্স হোস্টেল কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৯ কোটি ১৪ লাখ ১৩ হাজার টাকা।
এছাড়াও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের বাস্তবায়ন করা বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে আছে ডিসি পার্ক, হাজার বছরের নৌকা জাদুঘর, ১৯১টি ইউনিয়নে খেলার মাঠ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, স্মার্ট স্কুল বাস সার্ভিস, পর্যটক বাস, রিভার ক্রুজ ও ফুল ডে ট্যুর সম্বলিত পর্যটন সেবা, বার্ডস পার্ক ও চিড়িয়াখানার আধুনিকীকরণ।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মো. ফখরুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু টানেলসহ মোট ২০টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সাতটি প্রকল্প রয়েছে। অনেকগুলোর কাজই প্রায় শেষ হয়েছে। যেগুলো হয়নি সেগুলো আগামী বছরের জুনের মধ্যে সম্পন্ন হয়ে যাবে।’
সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম