হামুনের আঘাতে কক্সবাজারে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, নিহত ২
২৫ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:২৮
কক্সবাজার: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘুর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে কক্সবাজারে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে উড়ে গেছে হাজার হাজার গাছপালা ও কাঁচা-আধা কাঁচা ঘরবাড়ি। কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলীতে মাটির দেওয়াল চাপায় একজন, মহেশখালী উপজেলায় আরও একজন গাছ চাপায় নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি)। এছাড়া বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর থেকে ঘুর্ণিঝড় হামুনে কক্সবাজারের উপকূল আঘাত হানা শুরু করে। এরপর একটানা রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত উপকূল ও এর আশপাশের অঞ্চল দিয়ে ব্যাপক ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়, একইসঙ্গে শুরু হয় বজ্র বৃষ্টি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঝড়ো হাওয়া আর বাতাসের তীব্র আঘাতে কক্সবাজার শহর ও উপকূল এলাকায় গাছপালা উপড়ে পড়ে। এতে কাঁচা ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়। কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়ক জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরসহ অনেক এলাকায় ঝড়ের আঘাতে গাছ উপড়ে পড়ে। এতে সড়কে যানবাহন চলাচল ব্যহত হয়। সন্ধ্যার পর থেকে শহরে ও আশেপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।
কক্সবাজারের ডিসি মুহাম্মদ শাহীন ইমরান জানিয়েছেন, কক্সবাজার শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পাহাড়তলী এলাকায় বাড়ির দেয়াল চাপায় আব্দুল খালেক নামে একজন এবং মহেশখালীতে আরও একজন গাছ চাপায় নিহত হয়েছেন। ঘুর্ণিঝড় হামুনে সৃষ্ট ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিতে জেলায় কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কক্সবাজার শহরের সমিতি পাড়া কুতুবদিয়া পাড়াসহ জেলার উপকূল এলাকায় ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
আজ বুধবার (২৫ অক্টোবর) ঘুর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার বিস্তারিত তথ্য দেওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের ডিসি। তিনি আরও জানান, ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনদের শুকনো খাবার ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সৈকতে বিপদ সংকেতের অংশ হিসেবে পর্যটকদের সতর্কতা হিসেবে মাইকিং করা হয়েছে। এছাড়া সৈকতে দায়িত্বরত লাইফ গার্ড কর্মীরা পর্যটকদের নিরাপদে থাকতে মাইকিং করছেন।
ডিসি মুহাম্মদ শাহীন ইমরান আরও জানান, কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকার ৪০ হাজার মানুষ সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছেন। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে। উপকূলের নৌযান এবং মাছ ধরার নৌকাগুলোকে উপকূলের নিরাপদ স্থানে থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাগরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
ঘুর্ণিঝড় হামুনে মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। উপকূল এলাকায় লোকজনদের বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র ও নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিতে মাইকিং করা হয় বলে জানায় জেলা প্রশাসন।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ ইমাম উদ্দিন জানিয়েছেন, ঘুর্ণিঝড় হামুন গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে। হামুন সাগরে গতিপথ পরিবর্তন করে এটি কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম সমুদ্র উপকূলের দিকে ধাবিত হয়। পরে কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বরের পরিবর্তে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করে আবহাওয়া অফিস। ঘুর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে ঝড়ো হাওয়া ও বজ্র বৃষ্টি হয়।
তিনি আরও জানান, গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টার পর থেকে ঘুর্ণিঝড় হামুনে কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করে তা দুর্বল হয়ে যায়। তবে এর প্রভাবে কক্সবাজার উপকূলে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। ঘুর্ণিঝড় মোকাবেলায় কক্সবাজারে ব্যপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
সারাবাংলা/ওএফএইচ/এনএস