Wednesday 14 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নিজের অজান্তে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ৪০ শতাংশ মানুষ


১৭ মে ২০১৮ ০৮:২৩ | আপডেট: ১৭ মে ২০১৮ ০৮:২৫

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: অস্বাস্থ্যকর জীবন, নগরায়ন, দূষিত পরিবেশ, কলকারখানা-গাড়ির কালো ধোঁয়া, শব্দ দূষণ, খাবারে অতিরিক্ত লবণ, স্থূলতা,পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া, কায়িক পরিশ্রম না করা, জাংক ফুডের আধিক্য, এসব কারণ মানুষকে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিতে ফেলেছে। উচ্চ রক্তচাপকে চিকিৎসকরা নীরব ঘাতক হিসেবেও চিহ্নিত করেছন। অসংক্রামক রোগের ঝুঁকির মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ অন্যতম বলেও মন্তব্য তাদের।

বিজ্ঞাপন

দেশে কী পরিমাণ মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে, তার কোনও সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ১০ থেকে ২০ শতাংশ মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। সে হিসেবে ১৬ কোটি মানুষের দেশে উচ্চ রক্তচাপে ভোগা মানুষের সংখ্যা দেড় কোটিরও বেশি। তবে বর্তমান সময়ে শিশুরা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। ১০০ শিশুর মধ্যে ৫ জন শিশু উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। আর ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ মানুষ জানেন না যে তারা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) এক গবেষণায় বলছে, দেশে ৫৯ শতাংশ মানুষের মৃত্যুর কারণ অসংক্রামক রোগ আর বাংলাদেশে ১৫ শতাংশ মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে।

চিকিৎসকরা বলছেন,স্থূলতার কারণে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা দুই থেকে ছয়গুণ বেড়ে যায়। বাংলাদেশে মোট অসুস্থ মানুষের ৬১ শতাংশ হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি রোগসহ বিভিন্ন ধরনের অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত। আর খাদ্যে অতিরিক্ত লবণ থাকায় ও খাবারের সঙ্গে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া বা লবণে আসক্তির কারণে এসব অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ছে। ফলে খাদ্যে বাড়তি লবণের উপস্থিতি মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। দেশের অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই লবণ খাওয়ার প্রবণতা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। আর তাই দেশে প্রতিদিনই উচ্চ রক্তচাপসহ হৃদরোগরে ঝুঁকি বাড়ছে বলেও জানান তারা।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘উচ্চ রক্তচাপকে একটি নীরব ঘাতক হিসেবে চিহ্নিত করেছে চিকিৎসা বিজ্ঞান। কারণ, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে বেশিরভাগ সময়েই মানুষ অন্যান্য মারাত্মক সব রোগের চিকিৎসা নিতে পারে না। ফলে অনেক সময় কিডনি, মস্তিষ্ক, হৃদপিণ্ডের মতো অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একইসঙ্গে ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগী হলে তার জন্য সব রোগের চিকিৎসা করানোও অনেক ঝুঁকির বিষয়।’ এ কারণে ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যেকোনো রোগীর জন্য অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

অপরদিকে, শতকরা ৯০ ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের নির্দিষ্ট কোনও কারণ জানা যায় না। তাই প্রাপ্তবয়স্কদের বছরে একবার করে রক্তচাপ মাপতে হবে বলেও জানান তিনি।
প্রিভেনটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, দেশের মানুষ এমনিতে স্বাস্থ্য নিয়ে খুব উদাসীন। কোনও একটা গুরুতর রোগে আক্রান্ত হবার আগ পর্যন্ত তারা চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না। অথচ উন্নত বিশ্বে ‘রুটিন চেকআপ’ বলে একটি কথা রয়েছে।

এই রুটিন চেকআপে বড় অভাব আমাদের দেশে মন্তব্য করে ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, অতিক্তি ওজন কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনা, নিয়ম করে হাটা বা কায়িক পরিশ্রম করা, অতিরিক্ত লবণ না খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুমানো উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

উচ্চ রক্তচাপকে পারিবারিকভাবে প্রাপ্ত একটি অসুখের মধ্যে অন্যতম উল্লেখ করে তিনি বলেন, উচ্চ রক্তচাপের জন্য ৫০টিরও বেশি জিনকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং দিনকে দিন এই সংখ্যা বাড়ছে।

তবে উচ্চ রক্তচাপ পৃথকভাবে কোনও অসুস্থতা নয় কিন্তু এর প্রভাব শরীরের অন্যান্য অঙ্গের ওপর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে বলেন ডা. লেলিন চৌধুরী।

সারাবাংলা/জেএ/এমআইএস

** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর