চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সম্প্রসারণে আসছে গুচ্ছ প্রকল্প
২৬ অক্টোবর ২০২৩ ১০:২৪
ঢাকা: চট্টগ্রাম শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এজন্য ‘চট্টগ্রাম শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কসমূহের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন গুচ্ছ প্রকল্প-১’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭ কোটি ৪৮ লাখ ৩১ হাজার টাকা। প্রস্তাবটি নিয়ে আগামী ২৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, পিইসি সভায় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা উঠবে। বিশেষ করে পরামর্শক, জনবল ইত্যাদি। এরপর সভা থেকে যে সুপারিশ দেওয়া হবে সেগুলো প্রতিপালন করে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংশোধন করা হবে। তার পর ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হলে পরবর্তী কার্যক্রম নেওয়া হবে। তারা আরও জানান, এটি অনুমোদনের জন্য একনেকে উপস্থাপনের প্রয়োজন হবে না। কারণ, ৫০ কোটি টাকার নিচে ব্যয় হওয়ায় এটির অনুমোদন পরিকল্পনামন্ত্রীই দিতে পারবেন।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্দর নগরী। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী। চট্টগ্রাম শহরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি দিন দিন যানজট সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে জনসাধারণের একদিকে যেমন কর্মঘণ্টার অপচয় হচ্ছে অন্যদিকে প্রচুর জ্বালানির অপচয় হচ্ছে। সাধারণত একটি উন্নত নগরীতে পরিকল্পনার দৃষ্টিকোণ থেকে সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করে পুরো নগরীর ২৫ শতাংশ ভূমিকে রোড নেটওয়ার্কের অংশ হিসাবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বর্তমানে ক্রমবর্ধমান চট্টগ্রাম মহনগরীর পুরো ভূমির প্রায় ১০ শতাংশ ভূমি রোড নেটওয়ার্ক হিসাবে বিদ্যমান আছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বাস্তবায়িত বিভিন্ন প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি রোডগুলোর মধ্যবর্তী এলাকাগুলো কম প্রশস্ত সড়ক দিয়ে যুক্ত। এ সব মধ্যবর্তী এলাকাগুলোর উন্নয়ন কাজ করে প্রধান সড়কগুলোর যোগাযোগ সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার জন্য বেশকিছু ছোট সড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের আওতায় আনা প্রয়োজন। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রাম শহরের উত্তরাংশে একটি, মধ্যাংশে একটি ও দক্ষিণাংশে একটিসহ মোট তিনটি ছোট সড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন এই প্রকল্পের আওতায় নেওয়া হয়েছে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম শহরের উত্তরাংশে শেরশাহ এলাকার কাছে ষোলশহর থেকে অক্সিজেন পর্যন্ত বায়েজিদ সংযোগ সড়ক অবস্থিত। এই সড়কের পূর্ব পাশে অনেকগুলো বেসরকারি আবাসিক এলাকা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- সাংবাদিক হাউজিং, নন্দন হাউজিং, নাগরিক হাউজিং, কসমোপলিটন, হিলভিউ হাউজিং। এ সব আবাসিক এলাকায় আনুমানিক কয়েক লাখ লোকের বসবাস। প্রস্তাবিত শহিদ নাহিদ আহমেদ সোহেল স্মৃতি সড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন করা হলে বেশকিছু আবাসিকের জনগণ চলাচলের সুবিধাসহ স্বল্প সময়ে বায়েজিদ সড়কে পৌঁছতে পারবেন।
জানা গেছে, প্রস্তাবিত সড়কের দৈর্ঘ্য শূন্য দশমিক ৩২৩ কিলোমিটার। বর্তমান প্রস্থ ৬ মিটার, প্রস্তাব অনুযায়ী প্রস্থ ১২ দশমিক ১৯ মিটার করা হবে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম শহরের মধ্যমাংশে অবস্থিত রহমতগঞ্জ এলাকা অধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত। এই এলাকার পশ্চিমে অবস্থিত রহমতগঞ্জ সড়ক ও আগে সিরাজউদ্দৌলা সড়ক। এই এলাকার মধ্যবর্তী স্থানে পশ্চিম থেকে পূবে যাওয়ার জন্য দেওয়ানজি পুকুর লেইন নামে একটি ছোট সড়ক রয়েছে। এই সড়ক সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন হলে সিরাজউদ্দৌলা সড়ক থেকে সহজেই জনগণ চলাচল করতে পারবে। বর্তমানে দক্ষিণে আন্দরকিল্লাহ, উত্তরে কলেজ রোড দিয়ে ঘুরে আসতে হয়। তাই রহমতগঞ্জ ও সিরাজউদ্দৌলা সড়কে অত্যাধিক যানজটের সৃষ্টি হয় এবং এতে অনেক কর্ম ঘণ্টা নষ্ট হয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সড়কটি সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত সড়কের দৈর্ঘ্য শূন্য দশমিক ২৩৯ কিলোমিটার। বর্তমান প্রস্থ ৩ মিটার, প্রস্তাবিত প্রস্থ ৬ দশমিক এক মিটার।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম শহরের দক্ষিণে আগ্রাবাদ কমার্শিয়াল এলাকা অধিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এই এলাকার আগে কদমতলী সড়ক অবস্থিত। এই সড়ক ব্যবহার করে নিউমার্কেট, কদমতলী, মাদারবাড়ির আবসিক এলাকার জনগণকে বারিক বিল্ডিং হয়ে আগ্রাবাদ এলাকায় আসতে হয়। একই সময়ে মাঝিরঘাট রোড হয়ে বিপুল পরিমাণ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান বারিক বিল্ডিং জংশন হয়ে বন্দরের দিকে যায়। ফলে বারিক বিল্ডিংঅংশে প্রচণ্ড যানজটের সৃষ্টি হয়। আগ্রাবাদ কর্মাস কলেজ রোড অবস্থিত রশিদ লেইন সড়কটি সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন করা হলে ওই এলাকার লোকজন যানজট এড়িয়ে সহজে ও স্বল্প সময়ে আগ্রাবাদ এলাকায় আসতে পারবে। শুধু তাই নয় আগ্রাবাদ কমার্শিয়াল এলাকায় চলমান এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়েতে ওঠা-নামার জন্য একটি র্যাম্পের সংস্থান রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত সড়কের দৈর্ঘ্য শূন্য দশমিক ২৬২ কিলোমিটার। বর্তমান প্রস্থ ৩ মিটার, প্রস্তাবিত প্রস্থ ৯ দশমিক মিটার।
পরিকল্পনা কমিশনের মতামত
প্রকল্প ভাতা বাবদ ১৪ লাখ টাকা এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের বেতন বাবদ ৩৫ লাখ ২০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। প্রকল্পের জনবল কাঠামো অনুযায়ী ছয় জন পূর্ণকালীন কর্মকর্তা প্রেষণে এবং সাত জন আউটসোর্সিং কর্মচারী নিয়োগ বাবদ বেতন-ভাতার সংস্থান রাখা হয়েছে। এসব বিষয়ে আলোচনা করা হবে পিইসি সভায়। এছাড়া পরামর্শক খাতে ৮০ লাখ ৮৮ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় তিনটি স্থানে শূন্য দশমিক ৮২ কিলোমিটার অর্থাৎ এক কিলোমিটারের কর্ম দৈর্ঘ্যরে রাস্তা সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন করা হবে। তাই এ কাজের জন্য পরামর্শক প্রয়োজন হবে। পরামর্শক সেবা জনমাস ভিত্তিতে গ্রহণ না করে সুনির্দিষ্ট অ্যাসাইমেন্টের ভিত্তিতে নেওয়া এবং পরামর্শকের প্রতিষ্ঠানের টিওআর উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) সংযুক্ত করার মত দেওয়া হবে সভায়।
সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম