‘২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে কী সমস্যা ছিল তা প্রকাশ করতে হবে’
২৬ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:১৬
ঢাকা : বিশিষ্ট সাংবাদিক জ ই মামুন বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকেও বিভিন্ন সময়ে বলা হয়েছে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে কিছু সমস্যা ছিল, সেটি আগামীতে আর হবে না। কিন্তু সমস্যা কী ছিল সেটি বলা হচ্ছে না। সেই দুইটি নির্বাচনে কী সমস্যা ছিল আগে সেটা চিহ্নিত করে বলেন, ‘এই ধরনের সমস্যা আর হবে না। তাহলে কেবল জনগণের আস্থা ফিরে আসবে।’
বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সভাকক্ষে গণমাধ্যমের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের নিয়ে ইসির সংলাপে তিনি এ সব কথা বলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুর আউয়ালের সভাপতিত্বে ইসি মো. আলমগীর, আহসান হাবিব খান ও রাশেদা সুলতানাসহ গণমাধ্যমের সিনিয়র সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জ ই মামুন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সব সময় বলে বিগত দিনের মতো নির্বাচন এদেশে হবে না। আমরা ভালো নির্বাচন করতে চাই। সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকেও একই কথা বলা হয়েছে। তার মানে হলো বিগত দুইটি নির্বাচনে কোনো সমস্যা ছিল। সেই সমস্যাটা কী ছিল, আপনারা কি তা চিহ্নিত করেছেন? ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই সমস্যা ছিলো। সেটি আর হবে না। তাহলে আমরা কী বুঝব? গত নির্বাচনে কী সমস্যা ছিল সেটা যদি নির্বাচন কমিশনই না জানে? তাহলে কীভাবে সমস্যার সমাধান হবে? সেটা কি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন? দেশের মানুষকে জানিয়েছেন। ফলে আমরা কী বলব? আগে তো সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে, তারপর রোগ নির্ণয় করতে হবে। এরপর চিকিৎসা করতে হবে। আপনারা রোগ নির্ণয় করতে পেরেছেন বলে তো আমাদের মনে হয় না।’
তিনি বলেন, ‘ইসির আমন্ত্রণপত্রে আমাদের একটা ধারণপত্র দিয়েছে। এটি খুবই ভালো দিক। কারণ এর মাধ্যমে বর্তমানে নির্বাচনের পরিবেশটা কী রকম আছে সেটা আমরা জানতে পেরেছি। ধারণাপত্রে বলা হয়েছে অবাধ নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টির প্রত্যাশা করা হয়েছিল সেটি এখনও হয়ে উঠেনি। এটা বাংলাদেশর সব মানুষ জানে। তবে নির্বাচন কমিশন যে এটা স্বীকার করেছেন সেজন্য ধন্যবাদ জানাই। এটা একটা ভালো দিক। কারণ নির্বাচন কমিশন উট পাখির মতো মাথা বালুতে ঢুকিয়ে রেখে বলছে না যে সব কিছু ঠিক আছে।’
তিনি বলেন, ‘ইসি বলছে কাঙ্ক্ষিত সংলাপ ইত্যাদির মাধ্যমে সমঝোতা করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু একটা নির্বাচনকে অবাধ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণ করার জন্য ইসির কি ভূমিকা রাখা উচিত ছিল সেই রকম দৃশ্যমান কোনো কর্মকাণ্ড সাধারণ মানুষের চোখে পড়েনি। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো বলছে তারা এই অবস্থায় নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে না। আপনারা বলছেন আমরা সংলাপে বসার জন্য চিঠি দিয়েছি, এছাড়াও তাদের অনানুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছি। তাহলে একটা/ দুইটা চিঠি দিয়েই আপনারা আপনাদের দায়িত্ব শেষ করেছেন। তাহলে আমার কিছু বলার নেই। আমি মনে করি মানুষ এভাবে ভাবে যে ইসি আরও একটু ভুমিকা নিতে পারত। আর এই কারণে ইসির প্রতি একটা আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে।’
বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, ‘আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মধ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। এই সময়ে এসে যদি প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচনের অনুকুল পরিবেশ নেই। এটা নির্বাচনের জন্য একটা সাংর্ষিক কথা। এই ধরনের বক্তব্য রাজনৈতিকদলগুলো যারা আগামী নির্বাচনের অংশ গ্রহণ করবে তাদের জন্য একটা ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করবে। ফলে এই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের স্পষ্টকরণ করা উচিত, তারা কেন বলেছেন নির্বাচনের অনুকুল পরিবেশ নেই।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সময় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কিনা, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ আছে কিনা? যদি না থাকে তাহলে বাধাগুলো কোথায়? এগুলো কমিশনকে স্পষ্ট করে বলতে হবে। এখন যদি রাজনৈতিক দলগুলো বলে বসে আমরা কিভাবে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবো? কারণ ইসি বলেছে নির্বাচনের কোন অনুকুল পরিবেশ নেই।’
অন্যদিকে সাংবাদিক রাহুল রাহা বলেন, ‘নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচনের প্রধান দায়িত্ব পালন করেন নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে কেউ বাধা দিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষম নির্বাচনের কমিশনের। নির্বাচনে কেউ না আসলে কিছু করার থাকে না। নির্বাচনে ৫০ শতাংশ ভোট কাষ্ট হলে নির্বাচন অংশ গ্রহণমূলক হয়েছে বলা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের সময় কমিশন সংবিধান অনুযাযী দায়িত্ব পালন করতে হবে। সংবিধানে যা আছে সে অনুযায়ী বিদ্যামান সংবিধান অনুযায়ী কাজ করতে হবে। সংবিধান যদি কালকে পরিবর্তন হয় তখন কমিশনকে পরিবর্তিত সংবিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে হবে। নির্বাচনে কে এলো আর কে না এলো এটা দেখার দায়িত্ব কমিশনের না।’
সিনিয়র সাংবাদিক রেজোয়ানুল হক রাজা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে সব অংশীজনের কাছে আস্থা অর্জন করতে হবে। নির্বাচনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতসহ অনেক দেশেই নির্বাচন নিয়ে কথা উঠেছে। নির্বাচন কমিশনের সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অনেক কিছু উঠে আসে। এ বিষয়েও কমিশনকে সর্তক থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘কমিশন বলেছে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ এখনও হয়ে ওঠেনি। কথাটি হয়ত সত্য, কোনো সন্দেহ নেই। তবে নির্বাচনের পরিবেশ হয়ে উঠলো কী উঠল না। তার চেয়ে বড় কথা সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন করতে ইসি বাধ্য। এর বাইরে যওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সব দল যদি নির্বাচনে আসে ভালো। কিন্তু না আসলে কিছু করার নেই।’
যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, ‘ইলেকশন কমিশন গণতন্ত্র নিয়ে কাজ করে না। এ বিষয়ে আমি দ্বিমত পোষণ করছি। এটা খুব ছোট একটা বাক্য হলেও আমি বলব গণতন্ত্রের অন্যতম নিয়ামক হলো ইসি। গণতন্ত্র বিকাশের জন্য প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নির্বাচন কমিশন অন্যতম চালিকা শক্তি।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন আসন্ন এই মুর্হুর্তে নির্বাচন করা ছাড়া কমিশনের কোন উপায় নেই। জনগণের আকাঙ্ক্ষা পুরণ করতে একটি ভালো নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশনকে কাজ করতে হবে। কারণ পুরো দেশ ও জনগণ এই কমিশনের দিকে একটি ভালো নির্বাচনের জন্য চেয়ে আছে।’
সারাবাংলা/জিএস/একে