তল্লাশি ছাড়া গাড়ি ঢুকতে দিচ্ছে না পুলিশ, প্রবেশমুখে দীর্ঘ যানজট
২৭ অক্টোবর ২০২৩ ১৮:৩৭
ঢাকা: রাজধানী ঢাকায় বড় দুই দলের সমাবেশ ঘিরে প্রবেশমুখগুলোতে তল্লাশি কার্যক্রম জোরালো করেছে পুলিশ। তল্লাশি ছাড়া দূর-দূরান্ত থেকে আসা কোনো গাড়ি ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে প্রবেশমুখে দেখা দিয়েছে থমকে থাকা গাড়ির দীর্ঘ সারি।
শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর প্রবেশমুখ গাবতলীর আমিন বাজারে ঢাকাগামী গাড়িগুলোতে তল্লাশি অব্যাহত রাখে পুলিশ।
তল্লাশি ডিউটিরত দারুস সালাম থানার এসআই শাকিল মোল্লা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগামীকাল দুই তিনটি সমাবেশ রয়েছে। সমাবেশে ঢাকার বাইরে থেকে লোক আনার কথা রয়েছে। ওইসব লোক ঢাকায় প্রবেশের সময় যেন কোনো আগ্নেয়াস্ত্র বা বিস্ফোরক জাতীয় কিছু নিয়ে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য তল্লাশি করছি।’
তবে তল্লাশির নামে কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না বলে দাবি করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
রাজশাহী থেকে ন্যাশনাল ট্রাভেলসে এসেছেন বেসরকারি কর্মজীবী জাকির হোসেন। তিনি ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরছিলেন। প্রায় এক ঘণ্টা পর বাসটি তল্লাশির স্থানে আসে। এরপর তল্লাশি শুরু হয়। তিনি বলেন, ‘বাসে থাকা প্রত্যেককে জিজ্ঞেস করছে পুলিশ। কোথা থেকে এসেছেন? কোথায় যাচ্ছেন? পরিচয়পত্র দেখাতে হচ্ছে। যার পরিচয়পত্র নেই তাকে কঠিন জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে। বেশির ভাগ লোকের মোবাইল ফোন নিয়ে পুলিশ ঘেঁটে দেখছেন। যাকে সন্দেহ হচ্ছে তাকে নামিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।’
গাবতলীতে ডিএমপি তল্লাশি করছে অন্যদিকে আমিন বাজার এলাকায় ঢাকা জেলা পুলিশের টিম তল্লাশি করছে। অনেকে আমিন বাজারে নেমে পায়ে হেঁটে ব্রিজ পার হয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করছে। সেখানেও পুলিশ তল্লাশি করছে এবং জিজ্ঞেস করছে। মোবাইল ফোনও তল্লাশি করছে পুলিশ।
গাড়িগুলো তল্লাশির কারণে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। একই চিত্র উত্তরার আব্দুল্লাহপুর-টঙ্গি এলাকাতেও দেখা গেছে। সেখানেও ব্রিজের দুই পাশে ডিএমপি ও জিএমপি তল্লাশি চালাচ্ছে। ফলে টঙ্গী সড়কে দীর্ঘ যানজট দেখা দিয়েছে।
রাজধানীর প্রবেশমুখ বাবু বাজার ব্রিজের কেরানীগঞ্জ অংশেও পুলিশ তল্লাশি করছে। তল্লাশির বাইরে কোনোকিছু প্রবেশ করতে পারছে না। যে গাড়িটা তল্লাশির পর ব্রিজে উঠে তাঁতীবাজার অংশে নামছে। সেখানেও পুনরায় ডিএমপি তল্লাশি করছে। এতে যাত্রী ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। অনেকের মোবাইল ফোন নিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
মাদারীপুর থেকে আসা নাসির উদ্দিন জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন বোনকে দেখতে এসছেন তিনি। বারবার তল্লাশির আওতায় না পড়লে তিনি দুপুর ২টার দিকে পৌঁছাতেন। কিন্তু তল্লাশির জন্য তিনি এখনও পৌঁছাতে পারেননি। আবার যাবেন কখন বা না গেলে থাকবেন কোথায় তা নিয়ে রীতিমত বিপাকে পড়েছেন নাসির।
পুলিশ তল্লাশি কার্যক্রম চালাচ্ছে পোস্তগোলা ব্রিজের উভয় পাশে। যাত্রাবাড়ী-শনির আখড়াতেও পুলিশ বাস, সিএনজি ও প্রাইভেটকার তল্লাশি করেই তবে ছেড়ে দিচ্ছে। অনেককে আটকের অভিযোগও উঠেছে।
পুলিশ বলছে, অনেকে দাগি আসামি, কেউ এজাহার নামীয় আসামি আবার কেউ পলাতক আসামি রয়েছে তাদের আটক করা হচ্ছে।
রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে তল্লাশি চৌকি বসানো হবে তা আগেই পুলিশ ও র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। সেই অনুযায়ী র্যাব-১, র্যাব-২, র্যাব-৩, র্যাব-৪ ও র্যাব-১০ চৌকুস টিম রাজধানীতে টহলে নেমেছে।
র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নাশকতা প্রতিরোধে আমরা টহল দিচ্ছি। যে কোনো অপ্রীতির পরিস্থিতি এড়াতে র্যাব প্রস্তুত রয়েছে।
অন্যদিকে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (প্রশাসন) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘সমাবেশকে কেন্দ্র করে কেউ যাতে নাশকতা করতে না পারে, এমনকি তৃতীয় কোনো পক্ষ যাতে সুযোগ নিতে না পারে, সেজন্য ডিএমপি সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে। পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে।’
২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপি, বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগ ও মতিঝিল শাপলা চত্বরে জামায়াত সমাবেশ ডেকেছে। যদিও জামায়াতকে ডিএমপির পক্ষ থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। তবে জামায়াত সমাবেশ করতে অনড় অবস্থানে রয়েছে।
সারাবাংলা/ইউজে/এনএস