Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘আওয়ামী লীগকে আন্দোলনের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই’

রমেন দাশগুপ্ত ও ইমরান চৌধুরী
২৮ অক্টোবর ২০২৩ ১৬:০৭

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সরকার পতনের দাবিতে ঢাকায় বিএনপি-জামায়াতের কর্মসূচি নিয়ে টান টান উত্তেজনার মধ্যে চট্টগ্রামের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগকে আন্দোলনের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বিশ্বব্যাপী। এই বাংলাদেশকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না, এটা হলো বাস্তবতা।’

শনিবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার কোরিয়ান ইপিজেড মাঠে মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে বিএনপি সরকারের পতন ঘটাবে, নানা রকম আন্দোলনের হুমকি দেয়। একটা কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে বাংলাদেশকে আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছে। ওই সমস্ত ভয়ভীতি আওয়ামী লীগকে দেখিয়ে কোনো লাভ নেই।’

‘বরং খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছিল বলেই ১৫ ফেব্রুয়ারি তাকে বাংলাদেশের মানুষ আন্দোলন করে ক্ষমতা থেকে হটিয়েছিল, এটা তাদের মনে রাখা উচিত। এরা ভোট চোর, জনগণের অর্থ চোর, ওরা খুনি। বিএনপি-জামায়াত মানেই হচ্ছে খুনি, হত্যাকারী, সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগ শান্তিতে বিশ্বাস করে, আওয়ামী লীগ উন্নয়নে বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বিশ্বব্যাপী। এই বাংলাদেশকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না, এটা হলো বাস্তবতা।’

দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সাজার প্রসঙ্গ তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপির কাজ হচ্ছে মানুষ খুন করা, লুটপাট করা, দুর্নীতি করা। খালেদা জিয়া এতিমের অর্থ এতিমদের না দিয়ে এক ব্যাংকে রেখে দিয়ে সেই অর্থ আত্মসাতের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। তার ছেলে তারেক রহমান বিদেশে পালিয়ে আছে। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়ে দেশ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। আর কোটি কোটি টাকা মানি লন্ডারিং করেছে। ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারির সঙ্গে জড়িত, সে কারণে সে সাজাপ্রপ্ত। একুশে অগাস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যাচেষ্টা করেছে, সেই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘নৌকায় ভোট দিলে হয় উন্নয়ন, আর বিএনপি করে দুর্নীতি, মানুষ খুন। এরা খুন করা ছাড়া আর কিছু জানে না। ক্ষমতায় গিয়ে ২১ হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে খুন করেছিল। এই চট্টগ্রাম দিয়ে দশ ট্রাক অস্ত্র এনেছিল। গ্রেনেড হামলা করে আওয়ামী লীগের ২২ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করেছিল।’

‘আর আমরা কি করছি? বয়স্ক ভাতা দিচ্ছি, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা নারী আর প্রতিবন্ধীদের ভাতা দিচ্ছি। শিক্ষা উপবৃত্তি দিচ্ছি। সবার হাতে হাতে এখন মোবাইল ফোন। ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেছি। বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। দারিদ্র্যের হার ৪১ থেকে ১৮ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। গৃহহীনদের ঘর করে দিচ্ছি। জাতির পিতার বাংলায় একজন মানুষও গৃহহীন, ভূমিহীন থাকবে না, এটাই আমাদের লক্ষ্য।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা প্রবাসী ব্যাংক করে দিয়েছি। জামানত ছাড়াই ঋণ পাচ্ছে। কর্মসংস্থান ব্যাংক করে দিয়েছি, সেখান থেকেও জামানত ছাড়াই ঋণ পাচ্ছে। এর মধ্যে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা। ইউক্রেন-রাশিয়ায় যুদ্ধ চলছে, স্যাংশন পাল্টা স্যাংশন। এখন আবার ইসরাইলের ফিলিস্তিনের ওপর আক্রমণ। এজন্য জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে।’

‘কিন্তু অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, সেজন্য এক কোটি মানুষকে কার্ডের মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে পণ্য দেওয়া হচ্ছে। হতদরিদ্র প্রতিটি পরিবারকে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে। করোনার সময় আমরা রিজার্ভের টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন কিনে বিনামূল্যে মানুষকে দিয়েছি, যাতে কারও কষ্ট না হয়। সবাই যেন সুরক্ষিত থাকে সেই ব্যবস্থা করেছি।’

আগামী নির্বাচনে আবারও নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো বাবা-মা, ভাই সব হারিয়েছি। আমার বাবা হত্যার বিচার করতে পারতাম না। কারণ ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছিল। জিয়াউর রহমান দিয়েছিলেন। খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পার্লামেন্টে বসিয়েছিলেন। সেদিন আমি আর রেহানা বিদেশে ছিলাম বলে বেঁচে গিয়েছিলাম। তারপর ছয় বছর আমাকে দেশে আসতে দেওয়া হয়নি। যখন দেশে ফিরে আসি তখন ওই খুনি আর যুদ্ধাপরাধীরা ক্ষমতায় ছিল। বাংলাদেশে আমার ওপর বারবার হামলা হয়েছে, বারবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আমি জীবনের মায়া করিনি।’

‘একটা কথা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মানুষ, যে মানুষের জন্য আমার বাবা সারাজীবন কষ্ট করেছেন, জেলজুলুম সহ্য করেছেন, জীবন দিয়ে গেছেন, সেই মানুষের ভাগ্যের আমি পরিবর্তন করবই। আমার একটাই কাজ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন। আর কোনো চাওয়া-পাওয়া আর নেই। আপনারা আমাকে সহায়তা করুন।’

এসময় প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও জনগণের সেবা করার সুযোগ দেবে কি না সেটা হাত তুলে দেখানোর আহ্বান জানান। সমবেত জনতা হাত তুলে দেখানোর পাশাপাশি ‘নৌকা নৌকা’ স্লোগানে এসময় ‍মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো জনসভাস্থল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাবা-মা, ভাই সবাইকে হারিয়েছি, আপনারাই আমার স্বজন, আপনারাই আমার আপনজন। আপনাদের কাছে নিবেদন, উন্নয়নের এই ধারা যেন অব্যাহত থাকে। লুটেরা-সন্ত্রাসীদের হাতে যেন ক্ষমতা না যায়। বাংলাদেশকে যেন কেউ দাবায়ে রাখতে না পারে।’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় জনসভায় আরও বক্তব্য দেন- আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাতীয় সংসদের উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ।

সারাবাংলা/আইসি/আরডি/এনএস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

সিইসি ও ৪ কমিশনারের শপথ আজ
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ০১:৩৩

ফের দাপট দেখালেন সাকিব
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:০৪

আরো

সম্পর্কিত খবর