মা, অনেক দিন বাড়িতে আসি না— ফেরা আর হলো না আমিরুলের
২৯ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:২০
মানিকগঞ্জ: রাজধানীর ফকিরাপুল মোড়ে হামলার শিকার হয়ে নিহত পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজের (৩৩) পরিবারে চলছে শোকের মাতন। স্বজনরা জানিয়েছেন, দুই দিন আগেও নিহত পুলিশ সদস্য তার মাকে ফোন করে বলেছিলেন, ‘মা অনেক দিন হয়ে গেছে বাড়িতে আসি না। ছুটি নিয়ে আগামী সপ্তাহে বাড়িতে আসবো।’ কিন্তু সেই ফেরা আর হলো না আমিরুলের। বাড়িতে সে ফিরতেছে ঠিকই, কিন্তু লাশ হয়ে।
গতকাল শনিবার বিকেলে ঢাকায় মহাসমাবেশ চলাকালে দায়িত্ব পালন করছিলেন পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম। বিকেল সোয়া ৪টার দিকে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এরপর চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সোয়া ৪টায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত পুলিশ সদস্যের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকেন্দার আলী মোল্লা। মায়ের নাম রহিমা খাতুন। ২ ভাই এক বোনের মধ্যে সে মেঝ। বড় বোন শেফালী আক্তার। ছোট ভাই আজিজুল হক বিপ্লব বেকার। নিহত পুলিশ সদস্য পারভেজ তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন।
ছেলের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে নিহত পারভেজের বৃদ্ধ বাবা সেকেন্দার আলী মোল্লা বারবার বিলাপ করে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।
নিহত পারভেজের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার চরকাঁটারী গ্রামে হলেও যমুনার ভাঙনে বসতবাড়ি হারিয়ে কয়েক বছর আগে টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার দপ্তিয়র ইউনিয়নের ফয়েজপুর গ্রামে বসতি গড়ে তুলেছেন।
মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯০ সালে ১০ মে চরকাটারি গ্রামে জন্ম নেওয়া আমিরুল স্থানীয় চরকাটারী সবুজ সেনা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে ২০১১ সালের ১৫ আগস্ট পুলিশ বিভাগে কনস্টেবল পদে যোগ দেন। চলতি বছরের ৩ আগস্ট থেকে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম ইনভেস্টিগেশন (সিটিআই–৩) ইউনিটে কর্মরত ছিলেন।
টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ফয়েজপুরের গ্রামে আমিরুলের বাড়িতে তার বাবা, মা ও ছোট ভাই থাকেন। ঢাকায় কর্মস্থল হওয়ায় স্ত্রী রুমা আক্তার ও মেয়ে তানহাকে নিয়ে শাজাহানপুরের একটি ভাড়াবাসায় থাকতেন তিনি।
পারভেজের ছোট ভাই আজিজুল হক বিপ্লব বলেন, ‘পারভেজই ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। চাকরির সুবাদে ভাই পরিবার নিয়ে ঢাকাতেই থাকতেন। তার ৬ বছর বয়সী এক মেয়েও রয়েছে।’
টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার দপ্তিয়ার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ফিরোজ সিদ্দিকী বলেন, ‘নিহত পুলিশ সদস্যের প্রথম জানাজা ঢাকায় হবে। এরপর মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আনা হবে।’
সারাবাংলা/এমও