হরতালে ঢাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক, পিকেটারশূন্য নয়াপল্টন
২৯ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৪৪
ঢাকা: সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে আয়োজিত মহাসমাবেশে বাধার প্রতিবাদে বিএনপির ডাকা হরতালে ঢাকার যান চলাচল প্রায় স্বাভাবিক রয়েছে। হরতালের প্রথম দুই ঘণ্টায় ঢাকার কোথাও কোনো পিকেটিংয়ের খবর পাওয়া যায়নি। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কও পিকেটারশূন্য। সেখানে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
রোববার (২৯ অক্টোবর) সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।
সকাল ৭ টায় আজিমপুর মোড়ে দাঁড়িয়ে দেখা যায়, অন্যান্য দিনের মতোই এ রুটে চলা ভিআইপি পরিবহন, সেলফি পরিবহন, দেওয়ান পরিবহনসহ অন্যান্য পরিবহনের বাস যাত্রী বহন করছে। লেগুনা, প্রাইভেটকার, রিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচলও স্বাভাবিক রয়েছে।
আজিমপুর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার, দোয়েল চত্বর, হাইকোর্ট মাজার মোড় হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাব পর্যন্ত যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। প্রতিদিন সকাল বেলা এসব এলাকায় যান চলাচল যেমন থাকে তেমনই রয়েছে। হরতালের কোনো প্রভাব এসব এলাকায় চোখে পড়েনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
রাজধানীর পান্থপথ, মোহাম্মদপুর, গ্রিনরোড, কারওয়ান বাজার এলাকায় সকালের দিকে রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলতে দেখা গেছে। ব্যক্তিগত গাড়ি ও বাসের সংখ্যা সকাল ৭টা পর্যন্ত কম থাকলেও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাধারণ গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ছে। মানুষের চোখে-মুখে তেমন কোনো শঙ্কা বা আতঙ্ক দেখা যায়নি। অন্য দিনের মতোই মানুষ স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। পান্থপথ মোড়, সার্ক ফোয়ারা, শাহবাগ মোড়ে পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে।
রাজধানীর নয়াপল্টনের মহাসমাবেশে ‘পুলিশের হামলার প্রতিবাদে’ ডাকা বিএনপির এ হরতালে গণতন্ত্র মঞ্চ, গণ অধিকার পরিষদসহ যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলো সমর্থন দিলেও তাদের নেতা-কর্মীকে হরতালের প্রথম দুই ঘণ্টা মাঠে দেখা যায়নি। জামায়াত আলাদাভাবে হরতাল ডেকেও মাঠে নামেনি।
উল্লেখ, শনিবার (২৮ অক্টোবর) নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ শুরুর আগেই কাকরাইলে দুপুর থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সেই সংঘর্ষ পরে বিজয়নগর পানির ট্যাংক ও শান্তিনগর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে বেলা তিনটার দিকে বিএনপির সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়।
সমাবেশ পণ্ড হওয়ার আগমুহূর্তে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রোববার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ঘোষণা দেন।
হরতাল ঘোষণার পর রাতে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, হরতালে ঢাকা শহর, শহরতলি ও আন্তজেলা রুটে বাস-মিনিবাস চলবে। তাদের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘জনবিরোধী’ এ হরতালে মালিক–শ্রমিকেরা কখনও সাড়া দেবে না। হরতালের দিন গাড়ি চলাচলে যাতে কোনো বাধা না আসে, সে জন্য শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোয় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে পুলিশ–প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।
এরপর সন্ধ্যায় জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাছুম এক বিবৃতিতে রোববার সারা দেশে সকাল–সন্ধ্যা হরতালের ঘোষণা দেন। বিবৃতিতে বলা হয়, ঢাকায় তাদের সমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতা-কর্মীদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতারের প্রতিবাদে দলটি এ কর্মসূচি নিয়েছে।
বিজিবি মোতায়েন
জনসাধারণের নিরাপত্তায় শনিবার (২৮ অক্টোবর) রাতেই রাজধানীতে ১১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল রাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, রমনায় এক প্লাটুন, মতিঝিলে দুই প্লাটুন ও পল্টনে দুই প্লাটুন বিজিবি টহলে থাকবে। এছাড়া সচিবালয়ে দুই প্লাটুন ও প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
হরতালের আওতামুক্ত
সকাল-সন্ধ্যা এ হরতালে গণমাধ্যমে গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, সিটি করপোরেশনের গাড়ি, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সরবরাহের কাজে ব্যহৃত গাড়ি এবং জরুরি ওষুধ পরিবহসহ সংবাদপত্র পরিবহনের জন্য ব্যহৃত গাড়ি হরতালের আওতামুক্ত থাকবে।
বিএনপির মিডিয়ায় সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান শনিবার (২৮ অক্টোবর) রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘একটা বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যে হরতাল ঘোষণা করায় হরতালেরর আওতামুক্ত বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়নি। সাধারণত হরতালের সময় যেসব সেক্টর বা পরিবহন হরতালের আওতামুক্ত থাকে, এবারও সেগুলো আওতামুক্ত থাকবে।
সারাবাংলা/এজেড/এমও