শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ও ট্রেড ইউনিয়ন সুবিধা বাড়ছে
২৯ অক্টোবর ২০২৩ ২০:৪৪
ঢাকা: শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ও ট্রেড ইউনিয়ন সুবিধা বৃদ্ধিসহ বেশকিছু সংশোধনী প্রস্তাব এনে ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) বিল-২০২৩’ জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে।
রোববার (২৯ অক্টোবর) শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ানের পক্ষে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক সংসদে বিলটি উত্থাপন করেন। পরে বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
সংসদে উত্থাপিত বিলে নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ১১২ দিন থেকে বাড়িয়ে ১২০ দিন করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রত্যেক প্রসূতি তার মালিকের কাছ থেকে তার সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখের অব্যবহিত পূর্ববর্তী অন্যূন ২১ দিনসহ ১২০ দিনের প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা পাওয়ার অধিকারী হবেন। তবে কোনো প্রসূতি এই ধরনের সুবিধা পাবেন না, যদি না তিনি তার মালিকের অধীন তার সন্তান প্রসবের অব্যবহিত পূর্বে অন্যূন ছয় মাস কাজ করে থাকেন। এ ছাড়া কোনো প্রসূতিকে এই ধরনের সুবিধা দেওয়া হবে না- যদি সন্তান প্রসবের সময় তার দুই বা ততধিক সন্তান জীবিত থাকে। তবে এক্ষেত্রে তিনি কোনো ছুটি পাওয়ার অধিকারী হলে সেটা পাবেন।
আরও বলা হয়েছে, কোনো প্রসূতি এই আইনের অধীন প্রসূতি কল্যাণ সুবিধা পাওয়ার অধিকারী হলে তিনি তার সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ এবং কখন তিনি ছুটিতে যেতে ইচ্ছুক তা উল্লেখপূর্বক যে কোনো দিন মালিককে লিখিত বা মৌখিকভাবে নোটিশ প্রদান করবেন।
আগে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে ২০ শতাংশ শ্রমিকের স্বাক্ষরযুক্ত বা তাদের সমর্থনসহ আবেদন প্রয়োজন হতো। সংসদে উত্থাপিত বিলে সেটিকে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। এখন শ্রমিকের সংখ্যা যদি তিন হাজারের কম হয়, তাহলে ২০ শতাংশের সমর্থন লাগবে। আর তিন হাজারের বেশি হলে সেটি ১৫ শতাংশ শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করলে এবং আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিলে সেখানে তারা করতে পারবেন। এ ছাড়া গ্রুপ অব কোম্পানি হলে ২০ শতাংশ শ্রমিক চাইলে ট্রেড ইউনিয়ন করা যাবে। পাশাপাশি কোনো প্রতিষ্ঠানে শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি (প্রতিবন্ধী) নির্বিশেষে কোনো ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি করা যাবে না বলেও বিলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিলে বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের লে-অফ ঘোষণা করা সত্ত্বেও মালিককে তাদের জন্য রেজিস্টার সংরক্ষণ করতে হবে। স্বাভাবিক কর্মসময়ে লে-অফকৃত শ্রমিকদের মধ্যে যারা কাজের জন্য হাজিরা দেবেন, তাদের নাম এতে লিপিবদ্ধ করার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে লে-অফকালীন অন্য কোনোভাবে শ্রমিক রেজিস্টার সংরক্ষণ বা অন্য কোনো শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া যাবে না। যদি কোনো শ্রমিককে নিরবচ্ছিন্নভাবে ৪৫ দিনের বেশি সময়ের জন্য লে-অফ করা হয় এবং এ ৪৫ দিন পর লে-অফের সময় যদি আরও ১৫ দিন বা এর বেশি বাড়ানো হয়, তা হলে অন্য কোনো চুক্তি না থাকলে ওই শ্রমিককে পরবর্তী প্রতি ১৫ বা তদূর্ধ্ব দিনগুলোর লে-অফের জন্য বিধান অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, কোন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক কর্তৃক প্রত্যায়িত শারীরিক বা মানসিক অক্ষমতা বা অব্যাহত ভগ্ন স্বাস্থ্যের কারণে শ্রমিককে চাকরি থেকে ডিসচার্জ করা যাবে। তবে কর্মকালীন দুর্ঘটনা ও পেশাগত রোগের কারণে কোনো শ্রমিক তার বর্তমান কাজে অক্ষম হলে, তার ডিসচার্জের পাওনা পরিশোধপূর্বক মালিক-শ্রমিকের সম্মতিক্রমে তাকে তার যোগ্যতা অনুযায়ী অন্য কোনো কাজে নিয়োগ দিতে পারবেন।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম