‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স’ পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব
৩০ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:০৬
ঢাকা: দেশে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার। যার ফলে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স। এমন অবস্থায় দেশের শিক্ষা কারিকুলামের পাঠ্য বইয়ে ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স’ বিষয়ে পাঠ যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বিষয়ক পাঠ যদি শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্তি করা সম্ভব হয়, তবে এই বিষয়ে সবাইকে সচেতন করে তোলার বিষয়টি অনেক বেশি কার্যকর হবে।
রোববার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত পাঠ্যপুস্তকে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স প্রসঙ্গ অন্তর্ভুক্তিকরণ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এ প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
বৈঠকে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর সারা বিশ্বে ২২ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের প্রভাবে মারা যায়। এছাড়া ২০১৯ সালে সারা বিশ্বে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের সঙ্গে সম্পর্কিত মৃত্যুর সংখ্যা ৪৯ লাখ ৫০ হাজার মানুষ। যার মধ্যে ১২ লাখ ৭০ হাজার মানুষ সরাসরি রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়ার কারণেই মারা গেছে।’
ওষুধ প্রশাসনের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল ইউসুফ বলেন, ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে। এ বিষয়ে মাল্টিসেক্টরাল ওয়েতে কাজ চলছে। যার মাঝে ওয়ান হেলথ কনসেপ্ট নিয়েও কাজ হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা একটি আইন পাস করেছি। সেই আইন অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বিক্রিতে ২০ হাজার টাকা জরিমানার আইন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যদি শিক্ষা কারিকুলামে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয় তবে আমাদের শিক্ষার্থীরা তাদের বাবা, মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের এ বিষয়ে জানাতে পারবে। এর ফলে দ্রুত সচেতনতা বাড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে করি।’
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের এই বিষয়ে জানানো অনেক বেশি কার্যকর। যেখানে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে সচেতনতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে কাজ হয়েছে তার অনেক কম। শিক্ষার্থীদের অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ সম্পর্কে জানানোয় তাদের মধ্যে সফলতা এসেছে ৩৫ শতাংশ। অন্যদিকে সেবাদানকারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সফলতা পাওয়া গেছে মাত্র ৬ শতাংশ।
অন্যদিকে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির কর্মসূচি কার্যকর হয়েছিল ১২ শতাংশ।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, সম্প্রতি একটি জরিপে দেখা গেছে, ২০১৪ সালে প্রতি ১ হাজার জনে দৈনিক ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার ছিল ১৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ, ২০১৬ সালে প্রতি ১ হাজার জনে দৈনিক ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বেড়ে দাঁড়ায় ২৪ দশমিক ১১ শতাংশ। তবে ২০১৭ সালে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের হার কমে আসে ২১ দশমিক ২৬ শতাংশ। ২০১৮ সালে ২০ দশমিক ৭ শতাংশ, ২০১৯ সালে ২৪ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং ২০২০ সালে ২৫ দশমিক ৩৪ শতাংশে এসে পৌঁছায়। তবে ২০২১ সালে প্রতি হাজারে দৈনিক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের হার এসে দাঁড়ায় ৫২ শতাংশে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘গত ২০ বছরে আমরা স্বাস্থ্য সেবায় অনেক এগিয়েছি, যার ফলে আমরা অনেক সংক্রামক-অসংক্রামক রোগ মোকাবিলা করতে পেরেছি। তবে এখন আমাদের অ্যান্টিবায়োটিক রেজিট্যান্স খুবই ভাবাচ্ছে। এনিয়ে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। বিশেষ করে পাঠ্যপুস্তকে এর অন্তর্ভুক্তি এখন সময়ের দাবি। অনেকেই বলছেন মাধ্যমিকের পুস্তকে এই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স অন্তর্ভুক্ত করতে, আমি বলবো যে কেন মাধ্যমিকে? অবশ্যই প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমেই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হওয়া জরুরি।’
আলোচনায় আরও অংশ নেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর, স্বাস্থ্য অধিদফতর, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, মৎস্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
সারাবাংলা/এসবি/এমও