আলুর দাম অস্বাভাবিক হওয়ায় আমদানির অনুমতি: কৃষিমন্ত্রী
৩০ অক্টোবর ২০২৩ ১৬:১৪
ঢাকা: দেশের বাজারে আলুর দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় আলু আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, ‘আলুর দাম বেড়ে যাওয়ায় মধ্যবিত্তদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। দেশে আলুর উৎপাদন বেড়েছে প্রচুর। যদিও আমরা বলি, আলু উদ্বৃত্ত থাকে। আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি ও উন্নত জাত প্রবর্তনের কারণে উৎপাদন বেড়েছে। আবহাওয়া আলু উৎপাদনের অনুকূল। আন্তর্জাতিক বাজারে আলু রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।’
সোমবার (৩০ অক্টোবর) সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কৃষিমন্ত্রী এমন কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘এ বছর অস্বাভাবিকভাবে আলুর দাম বেড়েছে। এ আলুর দাম বেড়ে যাওয়া কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য না। এতে নিম্নআয়ের মানুষের অনেক কষ্ট হচ্ছে। গত দুদিনে আলুর দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।’
কোল্ড স্টোরেজে মোটামুটি আলু আছে। তাহলে দাম এতো বাড়বে কেন, প্রশ্ন রেখে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আলুর যে দাম স্থির করে দিয়েছিলাম, তাতেও তাদের লাভ হওয়ার কথা। কিন্তু সেই দামের ধারেকাছেও তারা থাকছে না। কোল্ড স্টোরেজ মালিকরা একটি সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। কিন্তু পরিস্থিতি এমন যে কোল্ড স্টোরেজ মালিকরা আলু বের করেন না, তারা আলু লুকিয়ে রাখেন। আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুরোধ করা হয়েছে, এই পরিস্থিতি আলু আমদানি করতে চায় তারা। আমরাও সার্বিক দিক বিবেচনা করে দেখেছি, এত দাম দিয়ে মানুষ আলু কিনতে পারছে না। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে আলুর দাম কম। তবুও তারা আলু আনতে চাচ্ছি। আমরা সম্মতি দিয়েছি। আজকে থেকেই আইপিও ইস্যু করা শুরু হবে।‘
‘এতে দাম কমবে, মানুষ কিছুটা স্বস্তি পাবে। আমার সঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা নিজেদের তৎপরতা আরও বাড়াবে, যাতে করে বাজারে কোল্ড স্টোরেজ সিন্ডিকেট যেভাবে আলুর দাম বাড়াচ্ছে, তা কমিয়ে আনা যায়। আড়ত ও কোল্ড স্টোরেজ মিলেই দাম বাড়াচ্ছে। এটি কমিয়ে আনতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আরও তৎপরতা শুরু করবে’ যোগ করেন তিনি।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘গত বছরও আমরা আলু রফতানির চেষ্টা করেছি। কিছু রফতানি হয়েছে। এ বছরও রফতানি হয়েছে। কিন্তু যতটুকু রফতানি হয়েছে, তাতে দাম এত অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার কথা না। গতবছর আলুর দাম অনেক কম ছিল, তখন চাষিরাও দাম পাননি, কোল্ডস্টোরেজ মালিকরদেরও লোকসান হয়েছে। কিন্তু এবার কোল্ড স্টোরেজ মালিকরা তাদের সেই লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার সুযোগ হিসেবে দেখছেন। তারা একেবারে এবারে সর্বাত্মক আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে দাম বাড়িয়ে যাচ্ছেন।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘একজন কৃষিবিদ হিসেবে বলতে চাই, বাংলাদেশের আলুর সম্ভাবনা অনেক বেশি। রফতানিও করা যাবে। নতুন যে জাতগুলো পেয়েছে, তাতে উৎপাদন আরও বাড়বে। চাষিরা বলছেন, গত বছর চাষিরা যেহেতু আলুর দাম পাননি, সেহেতু এবার তারা সরিষার দিকে ঝুঁকেছে। আমি বলতে চাই, সতেরো কোটি মানুষের চাহিদা অল্প জমি দিয়ে পূরণ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আবার এর মধ্যে ভুট্টা চাষ করতে হচ্ছে, পেঁয়াজ চাষও করতে হচ্ছে। পাশাপাশি মুদ্রাস্ফীতি ও তেলের দাম বেশি হওয়ায় আমরা চাহিদা পূরণ করতে পারছি না’ বলেন আব্দুল রাজ্জাক।
তিনি বলেন, ‘গতবছর কৃষকেরা সরিষা চাষ করেছে, অথবা আলু উৎপাদন করেনি, যেটি আমাদের মূল্যায়নে আমরা সঠিকভাবে জরিপ করতে পারিনি। তাহলে আমরা একেবারেই রফতানি করতাম না। কিন্তু আমরা তো আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকতে চাই। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আলু রফতানি করেছি।’
সারাবাংলা/জেআর/একে