বিএনপির সহিংসতা ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি— কূটনীতিকদের বললেন মন্ত্রী
৩০ অক্টোবর ২০২৩ ২০:২৩
ঢাকা: বিএনপির সহিংসতার দীর্ঘ ইতিহাস আছে এবং গত শনিবার সমাবেশের দিনে তারা সেই সহিংসতারই পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছে বলে কূটনীতিকদের জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। সহানুভূতি পাওয়ার জন্য বিএনপি প্রায়ই কূটনৈতিক মিশন ও বিদেশি বন্ধুদের বিভ্রান্ত করে থাকে বলেও জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের দিন বিএনপি আবার তাদের সহিংসতার চর্চায় ফিরে গেছে। বাসে আগুন দেওয়া ছাড়াও পুলিশের ওপর হামলা করেছে তারা। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে পর্যন্ত হামলা করা হয়েছে। অন্যদিকে তারা একজন প্রতারককে মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা বানিয়ে মিথ্যাচার করে বিদেশি বন্ধুদের বিভ্রান্ত করেছে।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিদেশি কূটনীতিকদের মন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বাণিজ্যবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। পরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন তারা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কথিত উপদেষ্টা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এবার হঠাৎ করেই আমরা দেখলাম সিনিয়র বিএনপি নেতাদের পাশে বসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের তথাকথিত একজন উপদেষ্টা বিএনপি দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন। পরে জানা গেল, তিনি একজন প্রতারক। তিনি স্বীকারও করেছেন যে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে বিএনপি নেতারা তাকে প্ররোচিত করেছেন।
কূটনীতিকদের উদ্দেশে আব্দুল মোমেন বলেন, সহিংসতা ও সংঘাতের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে বিএনপির। ২০০১ সালে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামায়াত ব্যাপক সহিংসতা চালিয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নেতাকর্মী ও সংখ্যালঘুদের নির্যাতন-হত্যা ও তাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ থেকে শুরু করে নারীদের ধর্ষণ-গণধর্ষণ পর্যন্ত করা হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ২০১৩ সালে ফের জাতীয় নির্বাচনের সময় বিএনপি ও এর মিত্ররা সহিংস তাণ্ডব চালায়। ওই সময় কয়েক হাজার যানবাহন ভাঙচুর করা হয় এবং অনেক বাসে পেট্রোল বোমা ব্যবহার করে আগুন দেওয়া হয়। তাদের আক্রমণে বাসের মধ্যে থাকা যাত্রীরা জ্যান্ত পুড়ে মরেছে। তাদের কেউ কেউ এখনো সেই ভয়াবহতার শিকার হয়ে ট্রমা নিয়ে বেঁচে আছে। ওই সময় তাদের পেট্রোল বোমা ও গ্রেনেডের আক্রমণের শিকার হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২০ জনসহ চার শতাধিক মানুষ প্রাণ হারান।
মন্ত্রী বলেন, ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচিতে বিএনপির কর্মীরা আবার সেই সহিংসতার পথ বেছে নেয়। আপনারা টিভি ও অনলাইনে বিভিন্ন ফুটেজে দেখেছেন তারা কীভাবে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করেছে এবং যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়ে পরিবহন শ্রমিককে পুড়িয়ে মেরেছে। আপনারা নিশ্চয় ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের সেই সময়কার সহিংসতার সঙ্গে এর মিল খুঁজে পাবেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, আপনারা আরও খেয়াল করে থাকবেন, এবারে তাদের লক্ষ্য অনেক বেশি ছিল পুলিশ ও বিচার বিভাগের ওপর। একজন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে মেরে ফেলার পাশাপাশি তারা প্রধান বিচারপতির এবং অন্যান্য বিচারকের বাসায় হামলা করেছে, ছয়টি পুলিশ চেকপোস্টে আগুন দিয়েছে। পুলিশ হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬৫ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে ভর্তি করতে হয়েছে।
শুধু তাই নয়, পুলিশ হাসপাতাল প্রাঙ্গণ এবং অ্যাম্বুলেন্সেও বিএনপি কর্মীরা আগুন দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন আব্দুল মোমেন। বলেন, এর বাইরেও বাংলাদেশ ফেডারেল জার্নালিস্ট ইউনিয়ন, বিএফইউজের তথ্য অনুযায়ী অন্তত ২৫ জন গণমাধ্যম কর্মী বিএনপির কর্মীদের হামলায় গুরুতর আহত ও সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
বিএনপির অবরোধ কর্মসূচির উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আগামীকাল (মঙ্গলবার) থেকে তিন দিন দেশব্যাপী অবরোধের ডাক দিয়েছে বিএনপি। তাদের এই কর্মসূচি থেকে আমরা কেবল নিরপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তির ওপর আক্রমণই আশা করতে পারি। তবে আইনশৃঙ্খলা ছাড়াও হরতাল ও অবরোধের অর্থনৈতিক ক্ষতির দিকও রয়েছে। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির তথ্য অনুযায়ী, বিএনপির হরতাল-অবরোধের কারণে প্রতিদিন ১৬০০ কোটি (১৯২ দশমিক ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) টাকার ক্ষতি হয়, যা জিডিপির শূন্য দশমিক ২ শতাংশ।
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দলমত-নির্বিশেষ সবাই রাজনৈতিক কর্মসূচি করার সুযোগ পাচ্ছে। ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশে কারও বক্তব্য দেওয়ায় বাধা ছিল না। তাদের শান্তিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের সুযোগ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু শান্তির নামে তারা প্রলয়ংকরী ঘটনা ঘটায়। পুলিশ পিটিয়ে হত্যা করে, যা জাতির জন্য লজ্জার। প্রধান বিচারপতির বাড়িতে আক্রমণ অস্বাভাবিক। এ ধরনের অপরাধ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
মন্ত্রী বলেন, আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। এসব ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির মুখোমুখি করা উচিত। বিএনপির কর্মীরা দেশে দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা করছে। আসন্ন নির্বাচনকে তারা বানচাল করতে সাধ্যমতো চেষ্টা করছে। বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে সংবিধানের আলোকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সময়মতো অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান আয়োজনে সরকারের দৃঢ় অবস্থানও পুনর্ব্যক্ত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
কূটনীতিকদের সহিংসতার কথা অবহিত করা হয়েছে বলেও সাংবাদিকদের জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার বদল হয়। এ সরকার শাসনতন্ত্র অনুযায়ী চলছে। রাম রাজত্ব কায়েম করে কিছু হাসিল হবে না। দুই দিনের সহিংসতার কথা রাষ্ট্রদূতদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। কীভাবে বিএনপি জো বাইডেনের নকল উপদেষ্টা বানিয়ে দুর্নাম করছে, সেটিও তুলে ধরা হয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, নিরবতার অর্থ পুরোপুরি একমত হওয়া নয়। সরকারের বক্তব্য তাদের জানানো হয়েছিল। উনাদের কাছ থেকে কোনো বিবৃতি আশা করি না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক, সহিংসতামুক্ত ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, গণমাধ্যমে আসা তথ্যের ওপর কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়েছে। অভিব্যক্তিতে স্তব্ধ হয়ে গেছেন কূটনৈতিকরা। তাদেরকে পুরো তথ্য লিখিতভাবে দেওয়া হয়েছে। সাতটি রাষ্ট্র মিলে যে বিবৃতি দিয়েছে, অতীতের বিবৃতির সঙ্গে সেটি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সব রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচনে এলে প্রচলিত সব বিধিনিষেধ মেনেই আসতে হবে। তবে আগ বাড়িয়ে বিবৃতি দেওয়াটা গ্রহণযোগ্য নয়।
সারাবাংলা/জেআর/টিআর
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক কূটনীতিকদের ব্রিফ ড. এ কে আব্দুল মোমেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিদেশি কূটনীতিক শাহরিয়ার আলম সালমান এফ রহমান