হরতালে ‘নাশকতার’ অভিযোগে ২ মামলা, গ্রেফতার ৪০
৩০ অক্টোবর ২০২৩ ২১:৩০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে বিএনপির ডাকা হরতালে গাড়ি ভাঙচুরসহ নাশকতার অভিযোগ এনে দু’টি মামলা দায়ের হয়েছে। এ ছাড়া রাতভর অভিযান চালিয়ে অন্তত ৪০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) নগরীর আকবর শাহ ও পাহাড়তলী থানায় আলাদাভাবে মামলা দুটি দায়ের হয়েছে বলে পুলিশ জানায়।
আকবর শাহ থানার মামলায় নগর বিএনপির সদস্য মঞ্জুর আলম, নগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি ও সহ-সভাপতি শাহেদ আকবরসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কর্নেলহাট বাজারে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঝটিকা মিছিল করে গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আকবর শাহ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ ওয়ালী উদ্দিন আকবর সারাবাংলাকে বলেন, ‘হরতাল চলাকালে আকস্মিক মিছিল বের করে রাস্তায় চলাচলরত যানবাহনে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। আমরা তিন জনকে গ্রেফতার করেছিলাম। এই তিনজনসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের হয়েছে।’
এদিকে, নগরীর পাহাড়তলী থানায় হরতাল চলাকালে গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগে ২৯ জনের নাম উল্লেখসহ আরও একটি মামলা দায়ের হয়েছে। পাহাড়তলী থানার ওসি জহির উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ২৯ জনকে গ্রেফতার করেছি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ভাঙচুরের সঙ্গে সরাসরি যাদের সম্পৃক্ততা পেয়েছি, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।’
নগর বিএনপির দফতরের দায়িত্বে থাকা নেতা ইদ্রিস আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আকবর শাহ ও পাহাড়তলী থানায় আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দুটি গায়েবি মামলা দায়ের হয়েছে। এছাড়া রোববার সন্ধ্যা থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত নগরীতে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ঘরে ঘরে গিয়ে পুলিশ তল্লাশি করেছে। ৪০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আজ (সোমবার) বিকেলে আদালতে হাজির করে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
দফতরের তথ্য মতে, গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মধ্যে কোতোয়ালি থানা শ্রমিক দলের সভাপতি সালেহ আহমদ, নগর যুবদল নেতা কুইন্টাল রিভেরিয়ো, বায়েজিদ থানা বিএনপি নেতা ফয়েজ আহমেদ, আমিন শিল্পাঞ্চলের সালামত আলী ও তার ছেলে, ফিরিঙ্গি বাজার ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি সোহেল ওসমান মামুন, সাবেক ছাত্রদল নেতা আরশে আজিম আরিফ, পতেঙ্গা থানা বিএনপি নেতা কাজী ইসমাইল, মো. ইকবাল ও কাজী জিয়া উদ্দিন সোহেল, রামপুর ওয়ার্ড যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর আলম, পাথরঘাটা ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা জসিম উদ্দিন, পাথরঘাটা ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মো. মহিউদ্দিন, বাকলিয়া থানা হোটেল-রেস্টুরেন্ট শ্রমিক দলের সভাপতি আবুল কালাম, বকশিরহাট ওয়ার্ড যুবদল নেতা সেলিম খান, আনোয়ার হোসেন মানিক ও ফয়সাল হোসেন মুন্না, ৩৮নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির অর্থ সম্পাদক মো. আলাউদ্দিন, বাগমনিরাম ওয়ার্ড বিএনপির সহ সভাপতি মো. নাছির উদ্দীন, আলকরন ওয়ার্ড যুবদল নেতা মো. ফারুক, দক্ষিণ বাকলিয়ার বিএনপি কর্মী জামাল উদ্দিন, আক্তার হোসেন, মো. রুবেল, মো. মানিক, পশ্চিম বাকলিয়ার মো. ফয়সাল, সাজ্জাদ হোসেন, পূর্ব বাকলিয়ার আনোয়ার হোসেন এবং মো. ইউনুস আছেন।
উল্লেখ্য, ঢাকার নয়াপল্টনে গত শনিবার (২৮ অক্টোবর) পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর বিএনপি-জামায়াত রোববার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে।
এদিকে, মামলা-গ্রেফতার ও তল্লাশির নামে হয়রানির নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান মীর মো. নাছির উদ্দীন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, এস এম ফজলুল হক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, নগর কমিটির আহবায়ক শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর এবং দক্ষিণের আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, ‘যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা কিন্তু কোনো মামলার এজাহারভুক্ত আসামি নন। বিনা পরোয়ানায় তাদের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। দলের বলিষ্ঠ নেতাকর্মীদের বেছে বেছে গ্রেফতার করা হচ্ছে, যাতে তারা নির্বাচনের সময় মাঠে থাকতে না পারে। গত বছর পুলিশ আমাদের নেতাকর্মীদের তালিকা করেছে, এখন সেই তালিকা ধরে ধরে নেতাকর্মীদের বাসায় অভিযান চালানো হচ্ছে। আমাদের নেতাকর্মীদের বাসায় থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। একদিকে নতুন গায়েবি মামলা ও অন্যদিকে পুরাতন গায়েবি মামলার চার্জ গঠন করে সাজা দিচ্ছে।’
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম