Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সাড়ে ৮ বছর পর অবরোধ ডেকে আত্মগোপনে বিএনপি

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩০ অক্টোবর ২০২৩ ২২:১৮

ফাইল ছবি

ঢাকা: সারাদেশ থেকে ‘১০ লক্ষাধিক’ নেতা-কর্মীকে ঢাকায় ডেকে এনে মহাসমাবেশ করতে না পারা বিএনপির টানা ৭২ ঘণ্টার অবরোধ শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) ভোর ৬টা থেকে। নৌপথ, সড়কপথ ও রেলপথ অবরোধের এ কর্মসূচি সাড়ে আট বছর পর ফিরিয়ে আনছে বিএনপি। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ৪ এপ্রিল ‘অনির্দিষ্টকালের অবরোধ’-এর ইতি টেনে বিএনপির কার্যালয় থেকে বাসায় ফিরেছিলেন দলটির চেয়াপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

বিএনপি বলছে, দেশে চলমান বিচারহীনতা, অপশাসন, সীমাহীন দুর্নীতি, অনাচার, অর্থ পাচার ও সিন্ডিকেটবাজির ফলে দ্রব্যমূল্যের অব্যাহত ঊর্ধ্বগতিতে বিপর্যস্ত জনগণের জীবন-জীবিকা রক্ষার স্বার্থে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ ডাকা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশি হামলা ও নেতা-কর্মীদের হত্যা করে সেই মহাসমাবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এর পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আন্দোলনরত বিভিন্ন দলের সহস্রাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, হয়রানি ও নির্যাতন চালায়। এর প্রতিবাদে এবং এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর), বুধবার (১ নভেম্বর) ও বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে।

বিজ্ঞাপন

বিএনপির এই অবরোধ কর্মসূচির সঙ্গে সমন্বয় রেখে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্রমঞ্চ, সমমনা ১২দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী জোট, জামায়াত ইসলামী, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, গণফোরাম (একাংশ), গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য অবরোধ কর্মসূচি পালন করবে।

ঘোষিত অবরোধ কর্মসূচি কেমন হবে- সে সম্পর্কে ধারণা দিয়ে রুহুল কবির রিজভী সোমবার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে বলেন, ‘অবরোধ পালিত হবে সারাদেশে সর্বাত্মকভাবে। এর আওতায় থাকবে রেলপথ, রাজপথ ও নৌপথ। অবরোধ বলতে আমরা সারা বাংলাদেশে সবধরনের যান চলাচল বন্ধ করাকেই বুঝিয়েছি। এমনকি শহরের ভেতরেও সবধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে।’

বিজ্ঞাপন

রিজভী জানান, বিএনপির অবরোধের আওতামুক্ত থাকবে সংবাদপত্রের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, অক্সিজেন সিলিন্ডারের গাড়ি ও জরুরি ঔষধ পরিবহন।

এদিকে, সরকারের পতনের লক্ষ্যে বিএনপির ডাকা অবরোধ শুরুর প্রাক্কালে দলটির প্রায় সব নেতা আত্মগোপনে চলে গেছেন। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানোর পর স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, নির্বাহী সদস্য এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের দেখা মিলছে না। তাদের ফোনে কল করেও পাওয়া যাচ্ছে না।

অবশ্য অজ্ঞাত স্থান থেকে গত ৪৮ ঘণ্টায় দুই বার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলন করেছেন রুহুল কবির রিজভী। পাশাপাশি রোববার হরতাল চলাকালে রাজধানীর নর্দা ও নতুন বাজার এলাকায় মিছিল করতে দেখা গেছে তাকে। এ সময় তার সঙ্গে এক মিছিলে যুবদল সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুও ছিলেন। এ ছাড়া দলের আর কোনো শীর্ষ নেতাকে গত দুই দিন দেখা যায়নি।

এছাড়া মহাসমাবেশর পরের দিন মির্জা আব্বাসের শাহজাহানপুরের বাসায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বনানীর বাসায়, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালাল মোহম্মদপুরের লালমাটিয়া ও বনানীর বাসায়, ইশরাক হোসেনের গুলশানের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাদের পায়নি পুলিশ।

বনানীর বাসায় অভিযান চালানোর সময় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ছেলে পুলিশ ও গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, তার বাবা মহাসমাবেশের পর আর বাসায় ফেরেননি। এ ছাড়া বনানী বাসায় তল্লাশির সময় পুলিশকে একই কথা জানিয়েছেন সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালালের স্ত্রীও।

এদিকে, সোমবার সারাদিন বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার মোবাইলে ফোন দিলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। কারও কারও ফোন সচল থাকলেও রিসিভ করেননি তারা। সশরীরের দেখা করার উদ্দেশে কর্মস্থল ও বাসায় খোঁজ নিয়েও কারও দেখা মেলেনি।

অবরোধের জন্য কোনো স্পট নির্ধারণ করা হয়েছে কিনা? তা জানার জন্য বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দীন স্বপন ও সদস্য কাদের গণি চৌধুরীকে ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি। অবশ্য মিডিয়া সেলের সক্রিয় সদস্য শায়রুল কবির খান কথা বলেছেন সারাবাংলার সঙ্গে।

কর্মসূচি সম্পর্কে সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘বিএনপি তো অবরোধ আহ্বান করেছে। এটা পালন করবে জনগণ। দলের নেতা-কর্মী, সমর্থকেরা নিজ নিজ এলাকার সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কর্মসূচি সফল করবে। সেজন্য নির্দিষ্ট কোনো স্পট নির্ধারণ করা হয়নি।’

দলের শীর্ষ নেতাদের না পাওয়া প্রসঙ্গে শায়রুল কবির খান বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন কীভাবে আমাদের মহাসমাবেশ পণ্ড করে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, ঘটনার পর থেকে দেদারসে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধরা হচ্ছে, নতুন করে মামলা দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে মহাসচিবকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শীর্ষ নেতাদের বাসায় বাসায় চালানো হয়েছে তল্লাশি। এমন পরিস্থিতিতে আমরা তো আর রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারি না। তাই গ্রেফতার এড়াতে সবাই হয়তো একটু সেইফ জোনে আছেন।’

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

অবরোধ আত্মগোপনে বিএনপি

বিজ্ঞাপন

বিদেশ বিভুঁই। ছবিনামা-১
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:০০

আরো

সম্পর্কিত খবর