‘দেশে কোথাও সরকারের নিয়ন্ত্রণ আছে বলে টের পাই না’
২ নভেম্বর ২০২৩ ০০:৪৫
ঢাকা: দেশে কোথাও সরকারের নিয়ন্ত্রণ আছে বলে টের পান না বলে মন্তব্য করেছেন সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু।
বুধবার (১ নভেম্বর) জাতীয় সংসদে ‘ফাইন্যান্স কোম্পানি বিল-২০২৩’ পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে এমন মন্তব্য করেন তিনি। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের পক্ষে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।
বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে জাপা মহাসচিব চুন্নু বলেন, ভারতীয় পেঁয়াজ রফতানিকারকদের দামবৃদ্ধির সংবাদে বাংলাদেশে পেঁয়াজের কেজি ১৫০ টাকা হয়ে গেছে। বাংলাদেশে কোথাও সরকারের নিয়ন্ত্রণ আছে বলে আমরা টের পাই না।
চুন্নু বলেন, ‘ফাইন্যান্স কোম্পানির কথা মনে হলেই পিকে হালদার, যিনি এখন কলকাতায় আছেন, যিনি লিজিং কোম্পানির এমডি ছিলেন, তার কথা মনে পড়ে। বান্ধবীর নামে ১০০ কোটি, তিন নম্বর বান্ধবীর নামে ৫০ কোটি, স্ত্রীর নামে ১০০ কোটি, শ্যালিকার নামে ৫০ কোটি— শত শত কোটি টাকা পাচার করেছেন সেই পিকে হালদার। আইন তো ছিল, বাংলাদেশ ব্যাংক তো ছিল, তারা কি তখন ঘাস কেটেছিল?
আইন প্রয়োগের কথা তুলে ধরে জাপা নেতা চুন্নু বলেন, আইন করলে হবে না। আইনের প্রয়োগ না হলে লাভ কী! আমরা যখন মহাজোট করি তখন খেলাপি ঋণ ছিল ২১ হাজার কোটি টাকা। এখন এক লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা। ঋণও বাড়ছে, কিন্তু ব্যাংকের অবস্থা ভালো না। টাকা পাচার হচ্ছে। এটা আমার কথা না, বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট রিপোর্টে, বিভিন্ন সোর্স রিপোর্ট— সরকারি রিপোর্টেই বলা হচ্ছে। কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকলে যা হয়, টাকা পাচার হয়ে যায়। লিজিং কোম্পানি মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিদেশে পাচার করে, তাহলে আইন করে লাভ কী? বরং আইন না করে যেগুলো আছে তার বাস্তবায়ন করে, যেন কোনো দুর্নীতি না হয় তার জন্য সরকারের প্রচেষ্টা নেওয়া উচিত।
এদিকে সংসদে পাস হওয়া ফাইন্যান্স কোম্পানি বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ফাইন্যান্স কোম্পানির (আর্থিক প্রতিষ্ঠান) শেয়ার কেন্দ্রীভূত করা যাবে না। কোনো ব্যক্তি বা একই পরিবারের সদস্যরা কোনো ফাইন্যান্স কোম্পানির ১৫ শতাংশের বেশি শেয়ার কিনতে পারবেন না।
বিলে বলা হয়েছে, এক পরিবার থেকে দুজনের বেশি পরিচালক নিয়োগ করা যাবে না। ৫ শতাংশের বেশি শেয়ারের অধিকারী হলে ওই পরিবারের সদস্যদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ দুজন পরিচালক থাকতে পারবেন। আর দুই থেকে ৫ শতাংশ শেয়ারের অধিকারী হলে ওই পরিবারের সদস্যদের মধ্য থেকে একজন ফাইন্যান্স কোম্পানির পরিচালক হতে পারবেন।
বিলে আরও বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষ অথবা একই পরিবারের সদস্যরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে একক বা যৌথভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১৫ শতাংশের বেশি শেয়ার কিনতে পারবেন না। কোনো ব্যক্তি বা তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট পক্ষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে একক বা যৌথভাবে কোনো ফাইন্যান্স কোম্পানির উল্লেখযোগ্য (কোনো ফাইন্যান্স কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ৫ শতাংশের বেশি শেয়ার) পরিমাণে শেয়ার ধারক হলে অন্য কোনো ফাইন্যান্স কোম্পানি বা ব্যাংক কোম্পানির উল্লেখযোগ্য শেয়ার ধারক হতে পারবে না। কারও কাছে ১৫ শতাংশের অতিরিক্ত শেয়ার থাকলে এই আইন কার্যকর হওয়ার দুই বছরের মধ্যে অতিরিক্ত শেয়ার হস্তান্তর করতে হবে। এটি না করলে অতিরিক্ত শেয়ার সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর