শাটল ট্রেনে দুর্ঘটনা: ছাত্রলীগের তাণ্ডবে সাড়ে ৩ কোটি টাকার ক্ষতি
২ নভেম্বর ২০২৩ ২০:২৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: দু’মাস আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্যের বাসভবন ও পরিবহন দফতরে ভাঙচুরের ঘটনায় ৩ কোটি ২৯ লাখ ১৩ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে তদন্ত কমিটি। শাটল ট্রেনের দুর্ঘটনার জেরে ছাত্রলীগের একাংশ এ তাণ্ডবে অংশ নিয়েছিল।
গত মঙ্গল ও বুধবার (১ নভেম্বর) চবি’র সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পরিষদ সিন্ডিকেটের ৫৪৫ তম সভায় এই ক্ষয়ক্ষতির হিসাব উপস্থাপন করা হয় বলে জানা গেছে।
এর আগে, গত ৭ সেপ্টেম্বর রাতে হাটহাজারীর ফতেয়াবাদের চৌধুরীহাট এলাকায় চলন্ত শাটল ট্রেনের ছাদে বসা কয়েকজন শিক্ষার্থী গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে পড়ে। এতে অন্তত ১৬ শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ওই রাতেই উপাচার্যের বাসভবন, পুলিশ বক্স, শিক্ষক ক্লাব ও পরিবহন দফতরে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। পরিবহন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, তাদের ৬৫টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।
এসব ঘটনায় হাটহাজারী থানায় দুটি মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া দুটি পৃথক তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিটি ১৯ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন জমা দেয়, যা সিন্ডিকেট সভায় উত্থাপনের পর প্রকাশ্যে এসেছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, উপাচার্য ও পরিবহন দফতর থেকে ১৫ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এতে ‘পুঁজি’ করা হয়েছে শাটল ট্রেন দুর্ঘটনাকে। মামলায় ভাঙচুর, চাঁদা দাবি, হত্যার চেষ্টা ও চুরির অভিযোগ আনা হয়। দুটি মামলায় সাত জন করে ১৪ জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে ১২ জনই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী।
শাটল ট্রেন দুর্ঘটনা সংক্রান্ত তদন্ত কমিটিতে যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ড. মোহাম্মদ সহিদউল্লাহকে আহ্বায়ক, ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. অলক পালকে সদস্য এবং প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা আব্দর রাজ্জাককে সদস্য সচিব করা হয়।
এছাড়া ভাঙচুরের ঘটনায় তদন্ত কমিটিতে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃত বিভাগের অধ্যাপক ড. বশির আহমেদকে আহ্বায়ক, জামাল নজরুল ইসলাম গণিত ও ভৌত বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র অধ্যাপক ড. অঞ্জন কুমার চৌধুরী, ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন, জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজনীন নাহার ইসলামকে সদস্য এবং সহকারী প্রক্টর সৌরভ সাহা জয়কে সদস্য সচিব করা হয়েছিল।
ভাঙচুরে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা হিসেব করে বের করার জন্য গত ১০ সেপ্টেম্বর ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ। এতে মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক সজীব কুমার ঘোষকে আহ্বায়ক ও উপহিসাব নিয়ামক মাসুদুর রহমান চৌধুরীকে সদস্যসচিব করা হয়। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন- ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আকতার হোসেন, ভারপ্রাপ্ত হিসাব নিয়ামক আমিরুল ইসলাম, পরিবহন দফতরের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক অধ্যাপক আশরাফ উদ্দিন, প্রকৌশল দফতরের মোল্লা খালেদ হোসেন। তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল।
সিন্ডিকেটের সামনে তদন্ত সাপেক্ষে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশ ফাঁড়ি ও প্রধান ফটকে ভাঙচুরের ঘটনায় ১ লাখ ৪০ হাজার ৯০৩ টাকা, অতিথি ভবন ভাঙচুরে ২ লাখ ৮ হাজার ৮৭ টাকা, শিক্ষক ক্লাব ভাঙচুরে ৫ লাখ ৫ হাজার ৭৪১ টাকা, পরিবহন দফতরে ভাংচুরে ২ কোটি ৮২ লাখ ৯৫ হাজার ৪৭৪ টাকা, উপাচার্যের বাসভবন ভাঙচুরে ৩৭ লাখ ৪৫ হাজার ৬৫৬ টাকা, নিরাপত্তা দফতরে ভাঙচুরে ১৭ হাজার ৬৮০ টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড.সজীব ঘোষ সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে পরিপূর্ণভাবে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে সেটার মূল্যমান নির্ধারণ করে রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে ভিসিকে প্রতিবেদন দিয়েছি। আমরা প্রত্যেকটা জিনিস নোটডাউন করেছি। কী কী ক্ষতি হয়েছে, কোন কোন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ট্রান্সপোর্টের ক্ষেত্রে আলাদা করেছি, ভিসির বাংলোতে আলাদা করেছি, শিক্ষক ক্লাবে ভাঙচুর হয়েছে সেটি আলাদাভাবে করেছি। পুলিশ বক্সে যেটি হয়েছে সেটি আলাদাভাবে করেছি। আমাদের কাজটি হচ্ছে মূল্যায়ন। আমাদের কাজ ছিল কতটুকু ক্ষতিপূরণ হয়েছে আইডেন্টিফাই করে সেটা বাজারমূল্যে নিরূপণ করা।’
সিন্ডিকেট সদস্য মোহাম্মদ খাইরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ কমিটির প্রতিবেদন সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদিত হয়েছে। প্রতিবেদনের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে চাহিদা দেওয়া হবে।’
সারাবাংলা/এমএ/পিটিএম