শ্রম আইনের সংশোধনী পাস, শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর দাবি বিরোধী দলের
২ নভেম্বর ২০২৩ ২১:৫৯
ঢাকা: জাতীয় সংসদে পোশাক শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। তারা বলেছেন, যে শিল্পে কাজ করে একজন শ্রমিক ৩০ দিন খেতে পারেন না, বাচ্চার স্কুলের বেতন দিতে পারেন না, ২০ দিনের মাথায় বেতন শেষ হয়ে যায়, সেই শিল্পের বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) বিল-২০২৩ পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তারা। বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা আরও বলেন, একটি খাতের উন্নয়ন হলে সে খাতের শ্রমিকদেরও উন্নয়ন করতে হবে। আমরা গার্মেন্টস মালিকদের চকচকে বাড়ি দেখি, কারখানাও চকচকে দেখছি। গার্মেন্টস শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের উন্নতি দেখছি না।
আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ২৫ বছর ধরে আপনি লাভ করেছেন, দুই বছর ঝুঁকি নিতে পারবেন না? ২৫ বছরের লাভে বাড়ি করেছেন তিনটা, চারটা, পাঁচটা। দেশে-বিদেশে ছেলেমেয়েকে পড়াচ্ছেন। তাই শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর ঝুঁকি নিতে হবে। পাশাপাশি বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে দর-কষাকষি করে পণ্যের মূল্য বাড়াতে হবে। সবকিছুর সমন্বয় করে শ্রমিক স্বস্তিতে না থাকলে দেশ স্বস্তিতে থাকবে না।
একই দলের ডা. রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, পোশাক শ্রমিকরা অনেক দুর্ঘটনার শিকার হন। কিন্তু মালিকপক্ষ সেভাবে যত্নশীল নয়। বাচ্চাদের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার নেই। হাসপাতাল নেই। বেতন-ভাতা কম। অনেক সমস্যায় জর্জরিত শ্রমিকরা। মালিকেরা টাকার পাহাড় গড়বে আর শ্রমিকেরা প্রয়োজনমতো অর্থ পাবেন না, তা মানবিক নয়।
একই দলের সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, আজ গার্মেন্টস শিল্প মুশকিলে আছে। সারাদিন কাজ করে নিজের খরচটুকু উপার্জন করা না গেলে সেই কাজের সার্থকতা থাকে না। সেটা জোর করে কাজ করার সামিল। এদিকে সরকার ও গার্মেন্টস মালিকদের দৃষ্টি দেওয়া উচিত।
রওশন আরা মান্নান বলেন, কিছু কিছু গার্মেন্টস মালিকের অনেক টাকা, তারা বিদেশে বাড়ি-গাড়ি করেছেন। শ্রমিকদের অনেক কষ্ট, তাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ালে তাঁদের পুরাবে না।
বিল পাস
শ্রম আইনের বেশ কিছু ক্ষেত্রে সংশোধনী এনে ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) বিল-২০২৩’ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। বিলের বিধান অনুযায়ী, নতুন আইন কার্যকর হলে কোনো প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মোট সংখ্যা তিন হাজার পর্যন্ত হলে সেখানে ট্রেড ইউনিয়ন করতে ২০ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতি লাগবে। আর মোট শ্রমিকের সংখ্যা তিন হাজারের বেশি হলে ১৫ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতি লাগবে।
২০০৬ সালে দেশে প্রথম শ্রম আইন করা হয়। এরপর আইনটি একাধিকবার সংশোধন করা হয়েছে। সরকার চলতি মেয়াদের শেষ পর্যায়ে এসে আইনটি আবার সংশোধন করা হলো।
বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে ২০ শতাংশ শ্রমিকের সইযুক্ত আবেদন লাগে। এখন সেটিকে তিন হাজার শ্রমিকের বেশি ও কম কারখানার জন্য আলাদা করে দেওয়া হলো।
বিলে বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত শ্রমিকদের মোট সংখ্যা তিন হাজার পর্যন্ত হলে ২০ শতাংশ ও তিন হাজারের বেশি হলে ১৫ শতাংশ শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য না হলে তা নিবন্ধনের অধিকারী হবে না। একই মালিকের অধীন একাধিক প্রতিষ্ঠান যদি একই শিল্প পরিচালনার উদ্দেশ্যে একে অন্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও সম্পর্কযুক্ত হয় তাহলে এসব প্রতিষ্ঠান যেখানেই স্থাপিত হোক না কেন, তা একটি প্রতিষ্ঠান বলেই গণ্য হবে।
এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানপুঞ্জে ট্রেড ইউনিয়ন করার ক্ষেত্রেও সংশোধনী আনা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানপুঞ্জ বলতে কোনো নির্ধারিত এলাকায় একই ধরনের কোনো নির্ধারিত শিল্পে নিয়োজিত এবং অনধিক ২০ জন শ্রমিক নিযুক্ত আছেন- এ ধরনের সব প্রতিষ্ঠানকে বোঝানো হয়।
বিদ্যমান আইনে বলা আছে, প্রতিষ্ঠানপুঞ্জে ট্রেড ইউনিয়ন করতে হলে সেখানকার মোট শ্রমিকের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ এর সদস্য হতে হবে। প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, এ ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ শ্রমিক সদস্য হলে ট্রেড ইউনিয়নের অনুমোদন মিলবে।
এ ছাড়া বিলে নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ৮ দিন বাড়িয়ে ১২০ দিন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিলে বলা হয়েছে, কোনো মালিক তার প্রতিষ্ঠানে সজ্ঞানে কোনো নারীকে তার সন্তান প্রসবের অব্যবহিত পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে কোনো কাজ করাতে পারবেন না বা কোনো নারী ওই সময়ের মধ্যে কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারবেন না।
বিলে একটি নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদের বিধানাবলি হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষেত্রে যেভাবে প্রযোজ্য হয়, শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে ক্ষেত্রেও সেভাবে প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে হবে সরাসরি আপিল বিভাগে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর
ট্রেড ইউনিয়ন পোশাক শ্রমিক শ্রম আইন শ্রম আইনের সংশোধনী সংষদ অধিবেশন