‘গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিপূরক, বিকল্প নয়’
৩ নভেম্বর ২০২৩ ০০:৫৯
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের জন্য নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন অনেক সময় কর্তৃত্ববাদী বা সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর প্রশংসা করলেও সার্বিকভাবে গণতান্ত্রিক চর্চাকেই সবসময় গুরুত্ব দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।
তিনি বলেন, মানবাধিকার ও মানবকল্যাণ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে অমর্ত্য গণতন্ত্রকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। তার মতে, কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার তুলনায় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা অনেক ভালো। উদার গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে পরস্পরের পরিপূরক মনে করতেন তিনি, বিকল্প ভাবা উচিত নয় বলে অভিমত তার।
বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের ৯০তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত পাবলিক লেকচারে এসব কথা বলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে লেকচারটি আয়োজন করে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)।
ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, অমর্ত্য সেন নোবেল পুরস্কার পেয়ে সরাসরি ঢাকায় এসেছিলেন, যা নিয়ে কলকাতায় প্রশ্নও উঠেছিল। তিনি অর্থনীতিকে মানবকল্যাণে রূপান্তর করেছেন। তিনি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, উদার গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আলাদা করা যায় না।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহান। সম্মানীয় অতিথি ছিলেন আলসটার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এস আর ওসমানী এবং ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের (ইআরজি) চেয়ারম্যান ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোস্যাল অ্যাফেয়ার্সের সাবেক প্রধান উন্নয়ন গবেষক ড. নজরুল ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। লেকচার অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তায় বক্তব্য দেন ড. অমর্ত্য সেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, অমর্ত্য সেনের উদার অর্থনৈতিক নীতি জনকল্যাণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার অর্থনৈতিক দর্শন আমাদের জন্য অনুকরণীয়। অমর্ত্য সেন দুই বছর আগে বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনি বাংলাদেশের প্রকৃত বন্ধু। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু বাংলার বন্ধু নয়, তিনি ছিলেন সারাবিশ্বের বন্ধু। তার এই বক্তব্যটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ড. রেহমান সোবহান বলেন, অমর্ত্য সেন এমন একজন অর্থনীতিবিদ যিনি অর্থনীতিকে শুধু তাত্ত্বিক আলোচনার মধ্যে না রেখে মানবকল্যাণের পথে এনেছেন। কিন্তু তার জমি নিয়ে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যে সমস্যা হয়েছিল, সেটি অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি সমবমসয় মানব উন্নয়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও বৈষম্যবিরোধী কথা বলেছেন। তার মতো এমন অর্থনীতিবিদের সঙ্গে ভারতে এ ধরনের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। তিনি বাংলাদেশেরও ভালো বন্ধু।
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, অমর্ত্য সেনের বুদ্ধিবৃত্তিক কৃতিত্ব নিয়ে আলোচনা করে শেষ করা যাবে না। তিনি বাংলাদেশকে বেশি নিজের মনে করেন। তার জন্ম এখানে। তার শৈশবও কেটেছে বাংলাদেশে। তাই তার বাংলাদেশের প্রতি অন্যরকম ভালোবাসা রয়েছে। তিনি বিশ্ব নাগরিক হলেও বাংলাদেশের সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক আছে।
ড.বিনায়ক সেন বলেন, সোস্যাল ও ইকোনমিক রেসপনসিবিলিটি যেন আমাদের দেশে অব্যাহত থাকে সেটাই তিনি বলেছেন। তিনি অর্থনীতিকে কীভাবে মানবকল্যাণে ব্যবহার করা যায়, সেটাই বলেছেন।
পাবলিক লেকচারে বলা হয়, অমর্ত্য সেনের জন্ম ১৯৩৩ সালের ৩ নভেম্বর। অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী ভারতীয় বাঙালি এই অর্থনীতিবিদ একজন দার্শনিকও বটে। দুর্ভিক্ষ, মানব উন্নয়ন তত্ত্ব, জনকল্যাণ অর্থনীতি ও গণদারিদ্র্যের অন্তর্নিহিত কার্যকারণ বিষয়ে গবেষণা এবং উদারনৈতিক রাজনীতিতে অবদান রাখার জন্য ১৯৯৮ সালে তিনি অর্থনৈতিক বিজ্ঞানে ব্যাংক অব সুইডেন পুরস্কার (যা অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার হিসেবে পরিচিত) লাভ করেন।
অমর্ত্য সেনই জাতিসংঘের বিভিন্ন দেশের শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য মানব উন্নয়ন সূচক আবিষ্কার করেন। তিনিই প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক না হয়েও ন্যাশনাল হিউম্যানিটিস মেডেলে ভূষিত হন।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর
অমর্ত্য সেন অর্থনীতিতে নোবেল ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ পাবলিক লেকচার