Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নির্দেশনা অমান্য করে গাজীপুর সিটির প্রকল্প প্রস্তাব

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৩ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৩৫

গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় এরকম বহু অপ্রশস্ত ও অনুন্নত সড়ক রয়েছে। প্রকল্পে এ ধরনের সড়ক উন্নয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: পরিকল্পনা কমিশনের নির্দেশ অমান্য করেছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন। নির্দেশনা অনুযায়ী করা হয়নি প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা। পরিকল্পনা বিভাগ থেকে জারি করা পরিপত্রে নির্দেশনা অনুসরণ না করে সংক্ষিপ্ত আকারে সমীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এতে ভোটো দিয়েছেন বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ৮ নম্বর জোনের রাস্তা, নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণ প্রকল্পে দেখা গেছে এমন চিত্র। দুই হাজার ৫৯৮ কোটি ৬ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের প্রকল্প প্রস্তাবটি নিয়ে গত ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভাতেই প্রকল্প প্রস্তাবনার বিভিন্ন অংশ প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

বিজ্ঞাপন

পিইসি সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, প্রকল্প প্রস্তাবনা যথাযথভাবে হয়নি। সম্ভাব্যতা না করলে পরবর্তী সময়ে বাস্তবায়ন পর্যায়ে সমস্যা হতে পারে। এ কারণে প্রকল্পটি আমরা আবার ফেরত পাঠিয়েছি। সম্ভ্যবতা ঠিকমতো করে সংশোধিত ডিপিপি পাঠালে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

পিইসি সভায় পরিকল্পনা কমিশনের প্রতিনিধি বলেন, ৫০ কোটি টাকার বেশি প্রাক্কলিত ব্যয়ের সব বিনিয়োগ প্রকল্প নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ, নিরপেক্ষ ও পেশাদার প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি পরামর্শক দিয়ে অবশ্যই সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করতে হবে। নির্ধারিত ছকে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রণয়নও করতে হবে। প্রতিবেদনের সুপারিশ ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ প্রকল্প প্রস্তাবে সংযুক্ত করতে হবে।

ওই প্রতিনিধি আরও বলেন, প্রকল্প প্রস্তাবের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরীক্ষা করে দেখা যায়, পরিকল্পনা বিভাগ থেকে জারি করা পরিপত্রে নির্দেশনা অনুসরণ না করে সংক্ষিপ্ত আকারে সমীক্ষা প্রতিবেদন এই উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) সংযুক্ত করা হয়েছে। সেখানে প্রকল্প এলাকা নির্বাচনের ভিত্তি, রাস্তা, ড্রেন-সেতুর ধারণাগত নকশা, ব্যয় প্রাক্কলনের বিস্তারিত বিভাজন ইত্যাদি যথাযথভাবে উল্লেখ করা হয়নি।

বিজ্ঞাপন

সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ৮ নম্বর জোন অর্থাৎ পুরো গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটির জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা আবশ্যক বলে সভায় একমত পোষণ করেন আইএমইডি, জিইডি ও কার্যক্রম বিভাগের প্রতিনিধিসহ সব সদস্য।

সভায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (জিসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম সফিউল আজম বলেন, পরিকল্পিত সিটি করপোরেশন গঠনের জন্য একটি কমপ্রিহেনসিভ মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজ চলমান। এর অংশ হিসেবে জিসিসির আওতভুক্ত আটটি জোনের সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ফুটপাত নির্মাণ এবং সেতু বা কালভার্ট নির্মাণের মাধ্যমে জনগণের জন্য উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা নিশ্চিত করতে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনর ভৌত অবকাঠামো বিভাগের যুগ্মপ্রধান সভায় জানান, প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয়ের মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে দুই হাজার ২০৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা এবং গাজীপুর সিটির নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৮৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। এর বাস্তবায়নকাল চলতি বছর থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত।

প্রকল্প প্রস্তাবনায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন প্রস্থ ও ঘনত্বের প্রায় ২১৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ, এক হাজার ৫ মিটার সেতু এবং ৮ কিলোমিটার ফুটপাত ও ড্রেন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

জিসিসির আওতায় চলমান প্রকল্পগুলোর বর্তমান অবস্থা এবং এই প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত কাজের দ্বৈততা রয়েছে কি না— সেটি জানতে চাওয়া হয় পিইসি সভায়। এসময় জিসিসির প্রতিনিধি বলেন, সিটির এক থেকে ৫ নম্বর জোনের রাস্তা, নর্দমা ও ফুটপাত নির্মাণ প্রকল্পের কাজ এরই মধ্যে ৯৩ শতাংশ শেষ হয়েছে। ওই কাজের সঙ্গে প্রস্তাবিত প্রকল্পের কাজের দ্বৈততা নেই।

সভায় প্রকল্প প্রস্তাবে উল্লিখিত রাস্তা-ড্রেন-ফুটপাত নির্মাণ, ইউটিলিটি স্থানান্তরসহ বিভিন্ন খাতের ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি জানতে চাওয়া হয়। ডিপিপিতে বিভিন্ন খাতের ব্যয় কীসের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়েছে তা বিশদভাবে উল্লেখ করা হয়নি বলেও জানানো হয়।

এ ছাড়া সড়ক প্রশস্ত করাসহ নতুন রাস্তা নির্মাণের প্রস্তাব করা হলেও এর জন্য প্রকল্প প্রস্তাবে ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ খাতে কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জিসিসির প্রতিনিধি বলেন, প্রশস্ত করার জন্য চিহ্নিত সড়কগুলোর দুই পাশে সড়কের নিজস্ব জায়গা আছে। পরে সভায় সিদ্ধান্ত হয়, নিজস্ব জায়গার মধ্যেই সড়ককে প্রশস্ত করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভূমির প্রয়োজন হলে ভূমি অধিগ্রহণ বা প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণের সংস্থান রাখতে হবে।

এদিকে প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত পরামর্শক খাতে ১০ কোটি টাকা প্রাক্কলনের যৌক্তিকতা নিয়েও সভায় আলোচনা করা হয়। পরামর্শক খাতের বিস্তারিত কার্যপরিধি (টিওআর) উল্লেখসহ এ খাতের ব্যয় যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করে ডিপিপি পুনর্গঠন করার সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।

সারাবাংলা/জেজে/টিআর

গাজীপুর সিটি করপোরেশন পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্প প্রস্তাব সড়ক উন্নয়ন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর