Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গাজা সংকটে মুসলিম সমর্থন হারাচ্ছেন বাইডেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
৪ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:০০

যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় একটি পার্লারে কাজ করেন ৪৫ বছর বয়সী লিন্ডা শাভিশ। তিনি ফিলিস্তিনি আমেরিকান। ইসরাইলের বোমাবর্ষণ ও গাজায় স্থল আক্রমণে দ্ব্যর্থহীন সমর্থনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি প্রতিবেদককে তাড়া করেন।

একসময়ের ডেমোক্রেট ভোটার লিন্ডা এক পর্যায়ে প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘তারা (বাইডেন প্রশাসন) গণহত্যার পক্ষে দাঁড়িয়েছে। আমি অবশ্যই ডেমোক্রেটদের আর ভোট দেব না। ট্রাম্প যদি রিপাবলিকান প্রার্থী হন, আমি সম্ভবত ভোটই দিতে যাব না।’

বিজ্ঞাপন

লিন্ডা শাভিশ শুধু নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন অনেক নাগরিকই জো বাইডেনের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। মূলত কট্টর ইসরাইলিপন্থি অবস্থানের কারণে আরব-মার্কিন ও মুসলিম ভোটারদের সমর্থন হারাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিমরা কট্টর বাইডেন বিরোধী হয়ে উঠছেন। ডেমোক্রেট শিবির থেকে তারা নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন। বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।

এএফপির প্রতিবেদন বলছে, ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর এক বছর বাকি। জো বাইডেনের জন্য আরব এবং মুসলিম আমেরিকান ভোটারদের সমর্থন জরুরি। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য নীতির কারণে এই ভোটারদের কাছে দ্রুত জনপ্রিয়তা হারাচ্ছেন বাইডেন। আরব-আমেরিকান ও মুসলিম আমেরিকান ভোটারদের বাইডেনবিরোধী মনোভাবের কারণে আগামী নির্বাচনে বেশ কয়েকটি দোদুল্যমান রাজ্যে ভরাডুবির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ডেমোক্রেট বুদ্ধিজীবী এবং সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের সাবেক মুখপাত্র ওয়ালিদ শহিদ বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, মুসলিম ও আরব আমেরিকান ডেমোক্রেটদের হৃদয় ভেঙে গেছে। তারা এটি বুঝতে চায় না যে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলিদের সমান চোখে দেখছেন।

বিজ্ঞাপন

ওয়ালিদ শহিদ বলেন, মার্কিন জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্র অংশ মুসলিম। সংখ্যার বিচারে যা ৪৫ লাখ বা জনসংখ্যার ১ দশমিক ৩০ শতাংশ। কিন্তু বেসরকারি মার্কিন কিছু ধর্মীয় জনশুমারি অনুযায়ী নির্বাচনে কয়েকটি রাজ্যে মাত্র কয়েক লাখ বা কয়েক হাজার ভোটের ব্যবধানে জয় পরাজয় নির্ধারণ হবে।

২০২০ সালের নির্বাচনে জো বাইডেন মিশিগান, ভার্জিনিয়া, জর্জিয়া ও অ্যারিজোনায় জয় পেয়েছিলেন। এসব রাজ্যে খুব কম ভোটের ব্যবধানে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়। এই রাজ্যগুলোতে মুসলিম ভোটারদের সমর্থন হারানো জো বাইডেনের হোয়াইট হাউজের মেয়াদ কমিয়ে দিতে পারে।

সোমালি-আমেরিকান হাদিয়া বারে বলেন, নাইন-ইলেভেনের পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুসলমানরা আমেরিকান রাজনীতিতে প্রান্তিক হয়ে পড়েছে। ইসরাইলের প্রতি এই বৈষম্যমূলক সমর্থন মুসলিম ভোটারদের আরও বিচ্ছিন্ন করছে এবং দূরে নিয়ে যাচ্ছে।

৫২ বছর বয়সী হাদিয়া বারে জানান, তিনি ৩০ বছর ধরে একজন ডেমোক্রেট ভোটার। কিন্তু ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে তার অবস্থানের ভিত্তিতে দল থেকে সরে আসতে শুরু করেছেন। ইসরাইলের প্রতি বাইডেনের সমর্থন তার এই দূরে আসার প্রক্রিয়াকে আরও বেগবান করেছে।

তিনি বলেন, ইসরাইলের প্রতি বাইডেনের অন্ধ সমর্থন ডেমোক্রেটদের থেকে এক ঝটকায় দূরে সরিয়ে নিয়েছে। আমি ডেমোক্রেট বা রিপাবলিকানদের ভোট দেবো না।

উত্তর ভার্জিনিয়ার প্রধান মসজিদগুলোর মধ্যে একটি দার আল-হিজরাত। ১৯৯১ সালে মোহাম্মদ হাদিদ এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। তিনি আরব-আমেরিকান মডেল গিগি হাদিদ ও বেলা হাদিদের বাবা। এই মসজিদের ইমাম নাঈম বেগ বলেন, মুসলিম সম্প্রদায় ট্রাম্পের কয়েক বছরের যন্ত্রণার পর বাইডেনের ওপর আস্থা রেখেছিল।

ইমাম বলেন, যখন জাতিগত ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের বিষয়গুলো সামনে আসে, তখন ডেমোক্রেটদের তরফ থেকে আরও অনেক কিছু দেওয়ার আছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশের ওপর ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। তিনি মুসলিমদের প্রতি তার শত্রুতা আড়াল করার কোনো চেষ্টা করেননি।

২০২০ সালে ভোটের পরে কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস পরিচালিত একটি এক্সিট পোলে দেখা গেছে, ৬৯ শতাংশ মুসলিম জো বাইডেনকে ভোট দিয়েছেন। ট্রাম্পের পক্ষে ভোট দিয়েছেন ১৭ শতাংশ মুসলিম।

কিন্তু গাজা থেকে আসা ভয়ংকর সব খবর ও চিত্রের কারণে হতাশা ও ট্রমা অনুভব করছেন নাঈম বেগ। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আমি প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে ভোট দেব না।

খালিদ মেক্কিও একই ধরনের মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তার জন্ম গাজা শরণার্থী শিবিরে। তিনি তার জনগণ অর্থাৎ ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কথা বলাকে কর্তব্য বলে মনে করেন। ইসরাইল গাজায় অবরোধ দেওয়ায় তিনি তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি।

৫২ বছর বয়সী খালিদ মেক্কি একজন ব্যবসায়ী। তিনি ভার্জিনিয়ায় আরব-মালিকানাধীন রেস্তোরাঁ, বেকারি ও হুক্কা বারের জন্য বিখ্যাত ফলস চার্চের একটি এলাকায় বাওয়াদি মেডিটেরিনিয়ান গ্রিল বিক্রি করেন। তিনি এএফপিকে বলেন, আমরা এই দেশটিকে (যুক্তরাষ্ট্র) ভালোবাসি। এটি আমাদের দেশ। কিন্তু আমাদের হাতে রক্ত থাকতে পারে না। আমি চাই না এটি (গণহত্যা) আমার নামে হোক।

বেশ কয়েকজন সাক্ষাৎকারদাতা একই ধরনের মনোভাব পোষণ করেছেন। জাতিগত ঘৃণার কারণে মারাত্মকভাবে ছুরিকাঘাতের শিকার ছয় বছর বয়সী ফিলিস্তিনি আমেরিকান একটি শিশুর পরিবারকে সাক্ষাৎ দিতে পাঁচ দিন সময় নিয়েছিলেন জো বাইডেন। অথচ গাজার একটি হাসপাতালে ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা নিয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছেন বাইডেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার ইসরাইলপন্থি নীতিতে এরকম অটল থাকলে তা ভোটের রাজনীতিতে তার পক্ষে যাবে না বলেই সতর্ক করে দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

সারাবাংলা/আইই

আমেরিকান মুসলিম ইসরাইল জো বাইডেন ফিলিস্তিন মুসলিম ভোটার যুক্তরাষ্ট্র

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর