যে হাত আগুন দেবে, ওই হাতই পুড়িয়ে দিতে হবে: শেখ হাসিনা
৩ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:৫৫
ঢাকা: বিএনপি-জামায়াতের ‘অগ্নিসন্ত্রাসী’দের বিরুদ্ধে প্রতিটি এলাকায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, সবাইকে যার যার এলাকায় এমনভাবে সংগঠিত হতে হবে যেন অগ্নিসন্ত্রাস করে কেউ পার না পায়। কেউ আগুন দেওয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়লে সঙ্গে সঙ্গে তাকে ওই আগুনেই তাকে ফেলতে হবে। যে হাত দিয়ে আগুন দেবে, ওই হাতই পুড়িয়ে দিতে হবে। তাহলেই তারা সিধা (সোজা) হবে।
শুক্রবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যখন ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে দাঁড়াই এদের মুখে কিন্তু তখন সেই ব্যাপারে একটা কথাও নাই। এই যে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর অত্যাচার-গুলি-বোমা, শিশু হত্যা-নারী হত্যা চলছে, তারা কি কোনো প্রতিবাদ করেছে? করে নাই। তাহলে তারা কাদের তাঁবেদারি করে? কাদের পদলেহন করে?
যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, এটা ভুললে চলবে না বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। অনেক দেশ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণই বাংলাদেশের সব ক্ষমতা রাখে। বাংলাদেশের জনগণই অস্ত্র তাতে তুলে নিয়ে এই দেশ স্বাধীন করেছে। আজ স্বাধীনতাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, স্বাধীনতার আদর্শবিরোধীদের মদত দিয়ে সরকারবিরোধী চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। কিন্তু কোনো ষড়যন্ত্র কাজে আসবে না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত যখন বাংলাদেশ উন্নত হয়েছে, সারাবিশ্বে উন্নয়নের মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পাচ্ছে, মর্যাদা পাচ্ছে, যখন আমাদের দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, উৎপাদন বেড়েছে, যখন মানুষের জীবনে একটু স্বস্তির সময় এসেছে তখনই তারা অস্বস্তিতে ভোগে। অর্থাৎ মানুষ ভালো থাকলে ওদের মনে জ্বালা হয়। ওই বিএনপি-জামায়াত, এদের যন্ত্রণা হয়। মানুষ শান্তিতে-স্বস্তিতে থাকলে তাদের পছন্দ হয় না। তাই জ্বালাও-পোড়াও, অগ্নিসন্ত্রাস করে বেড়াচ্ছে। তাদের হাত থেকে নারী-শিশু রেহাই পায় না। পুলিশ রেহাই পায় না। হাসপাতাল রেহাই পায় না। রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স যাচ্ছে, সেখানেও হামলা করে। কত বড় জঘন্য চরিত্রের এরা!
বিএনপি-জামায়াত বাংলাদেশের মর্যাদা ধ্বংস করতে চায় বলে অভিযোগ করেন শেখ হাসিনা। বলেন, আমরা জাতির পিতাকে হারিয়েছি। আজকের এই দিনে আমরা চার নেতাকে হারিয়েছি। আমি তো আমার গোটা পরিবার হারিয়েছি। তারপরও রাজনীতি করি একটা কারণেই, যে আদর্শ নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে সেই আদর্শ ধরে রাখতে। তারা ভেবেছিল ১৫ আগস্ট আর ৩ নভেম্বর ঘটিয়ে সেই আদর্শ থেকে বাংলাদেশকে আবার বিচ্যুত করবে। সেটা তারা পারেনি। আজ বাংলাদেশ যখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে একটি মর্যাদার আসনে উঠে এসেছে, তারা সেই মর্যাদাকেই ধ্বংস করতে চায়।
সেই অপচেষ্টা নস্যাৎ করতেই সবাইকে নিজ নিজ এলাকায় সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী যে যেখানে আছেন, আমাদের সহযোগী সংগঠনের যে যেখানে আছেন, সবাইকে নিজ নিজ এলাকায় সংগঠিত হতে হবে। আপনাদের এমনভাবে সংগঠিত হতে হবে যেন ওই অবরোধ আর অগ্নিসন্ত্রাস করে যেন কেউ পার না পায়। আর কেউ যদি আগুন দেওয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে, সঙ্গে সঙ্গে ওই আগুনেই তাকে ফেলতে হবে। যে হাত দিয়ে আগুন দেবে ওই হাতই পুড়িয়ে দিতে হবে। তাহলেই তারা সিধা (সোজা) হবে। তা না হলে এরা সিধা হবে না। কারণ যে যেমন তার সঙ্গে তেমন করতে হয়। যেমন কুকুর তেমন মুগুর দিতে হয়। তখন ওদের শিক্ষা হবে।
অগ্নিসন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সারাদেশে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, শুধু এই ঢাকা শহর না, যেখানে যেখানে তারা এ ধরনের অগ্নিসন্ত্রাস করবে সেই এলাকায় কত বিএনপি-জামায়াত আছে, সবাইকে খুঁজে বের করতে হবে। তাদের ধরিয়ে দিতে হবে। মানুষের জানমাল যেন ক্ষতি করতে না পারে, সেই সুরক্ষা আমাদের দিতে হবে। এটাই আওয়ামী লীগের দায়িত্ব। আমাদের আর কিছু নেই। আমাদের কোনো মুরব্বি নেই, আমাদের আছে বাংলাদেশের জনগণ। সেই জনগণ নিয়েই আমাদের চলতে হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে স্মরণসভায় বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, জাতীয় নেতা শহীদ তাজউদ্দিন আহমদের মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি এবং জাতীয় নেতা শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের কন্যা সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি।
আরও বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও আবু আহমেদ মান্নাফী। দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ এবং উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন।
সারাবাংলা/এনআর/একে/টিআর
আওয়ামী লীগ সভাপতি আওয়ামী লীগের স্মরণসভা জাতীয় চার নেতা জেলহত্যা দিবস প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেখ হাসিনা