শেষ হওয়া সংসদই আওয়ামী লীগের শেষ সংসদ: রিজভী
৩ নভেম্বর ২০২৩ ২০:৫৫
ঢাকা: শেষ হওয়া একাদশ জাতীয় সংসদই আওয়ামী লীগের ‘শেষ সংসদ’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
শুক্রবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে অজ্ঞাত স্থান থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘গতকাল সমাপ্তি ঘটেছে একাদশ জাতীয় সংসদ অধিবেশনের। গত ৫ বছর ধরে ভুয়া এমপিরা সংসদে দাঁড়িয়ে জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং বিএনপিকে নিয়ে মিথ্যাচার, খিস্তি-খেউড়, কুৎসা উদ্গীরণ করেছেন। সংসদকে কথিত জনপ্রতিনিধিরা বিএনপিসহ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মিথ্যাচার, প্রপাগাণ্ডা, হুমকি-ধামকির বক্তব্য চর্চার ময়দান বানিয়ে ফেলেছিলেন। তারা সাধারণ জনগণের জন্য কল্যাণকর কিছু করেনি। মোট ২৭২ কার্যদিবসে এই সংসদকে আওয়ামী দলীয় আড্ডাবাজীর আখড়ায় পরিণত করা হয়েছিল। ৫ বছরে সংসদে যে ১৬৫টি বিল পাস করেছে, তার প্রায় সবই গণবিরোধী।’
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘সংসদ পরিচালনায় প্রতি মিনিটে গড় ব্যয় হয় প্রায় ২ লাখ ৭২ হাজার টাকা। একাদশ জাতীয় সংসদে শেখ হাসিনার প্রশংসায় ৬১ ঘণ্টা ২৬ মিনিট ব্যয় হয়েছে। এর আর্থিক মূল্য প্রায় ১০০ কোটি ৩৯ লাখ ৩৩ হাজার ৭০৪ টাকা। কোরাম সংকটের সংসদের ক্ষতি প্রায় ৮৯ কোটি ২৮ লাখ আট হাজার ৭৭৯ টাকা। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে সরকারি দল একচ্ছত্র ক্ষমতার চর্চা করেছে। তার মানে সংসদকে আওয়ামী লীগ চিরদিন ক্ষমতায় থাকার খায়েশ পূরণের স্বার্থে যা ইচ্ছা তাই করেছে। তবে শেষ হওয়া অবৈধ সংসদই আওয়ামী লীগের শেষ সংসদ।’
‘তাদের আর ফিরে যাওয়ার পথ নেই। জনগণ চূড়ান্ত লড়াইয়ে নেমেছে। আন্দোলনে তাদের বিজয় এখন নিশ্চিত। শেখ হাসিনাকে জনগণ ভোট ডাকাতি করে আর কোনো দিন সংসদে যাওয়ার সুযোগ দেবে না। আর এই ভুয়া সংসদে যেসব অবৈধ আইন পাশ করা হয়েছে তা জনগণের ভোটে নির্বাচিত এমপিরা বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেবে’— বলেন রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘জনগণের রাজপথ কাঁপানো আন্দোলন, দেশের ৯৫ শতাংশ জনমত এবং জাতিসংঘসহ গোটা বিশ্বের আহ্বান উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা আবারও এক তরফা পাতানো নির্বাচন আয়োজনে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। আওয়ামী নির্বাচন কমিশন, আওয়ামী দলদাস পুলিশ ও আওয়ামী দলদাস প্রশাসন সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে বিরোধীদল-মত উচ্ছেদ করে পুরানো কায়দায় নতুন কোনো ফর্মুলায় ভোটরঙ্গ মঞ্চস্থ করার জন্য।’
রিজভী বলেন, ‘কর্মসূচি পালনকালে এবং পালনের পরে নানা অভিযোগে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতার ও নানা নিপীড়ন-নির্যাতন শুরু করে দেয় পুলিশ। সরকারি দল ও এর অঙ্গসংগঠনের সাঙ্গপাঙ্গদেরও রাজপথে মারমুখী অবস্থানে দেখা যায় এবং তারা মারণাস্ত্রসহ নানা সহিংস সন্ত্রাসী হামলা পরিচালনা করে, যার ভিডিও চিত্র এবং স্থিরচিত্র হরহামেশা গণমাধ্যমে দেখা যাচেছ। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেসব গুণ্ডাপাণ্ডাদের বা নির্দেশদাতা হিসেবে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকে গ্রেফতার হতে দেখা যায়নি। তাহলে রাষ্ট্রের এই পুলিশবাহিনী কার? আওমামী লীগের?’
তিনি বলেন, ‘আমরা সারাদেশ থেকে খবর পাচ্ছি- ভোট কেন্দ্রে ভোটার বাড়াতে অভিনব কদর্য মিশনে নেমেছেন শেখ হাসিনা। তার নির্দেশেই সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় কার্ডের মাধ্যমে সুবিধাভোগী প্রায় দুই কোটি মানুষকে টার্গেট করেছে আওয়ামী লীগ। গত কয়েক দিন যাবত প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায়, প্রতিটি উপজেলায় সরকারের বিভিন্ন দফতর হতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিরর আওতায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সুবিধাপ্রাপ্ত এবং উপকার ভোগীদের নিয়ে সমাবেশ করছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এবং নেতারা।’
তিনি বলেন, ‘প্রায় প্রতিটি সমাবেশে জেলা প্রশাসক, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ইউএনওসহ থানার ওসিরা উপস্থিত থাকছেন। প্রতিটি গ্রাম থেকে কার্ডধারী সুবিধা ভোগীদের সমাবেশে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। না গেলে কার্ড বাতিলের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ভয়-ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের এই সমাবেশে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে নৌকায় ভোট প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী, স্বামী পরিত্যক্তা, ভিজিএফ, টিসিবি, মাতৃত্বকালীন ভাতাসহ সব ধরনের সুবিধা ভোগীদের কার্ড ভোটের আগে জমা দেওয়া এবং ভোট কেন্দ্রে এসে তা ফেরত নেওয়া হবে বলে অধিকাংশ সমাবেশে জানানো হচ্ছে।’
রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনা ভোট কেন্দ্রে সন্তোষজনক মাত্রায় ভোটার উপস্থিতি এবং ভোট প্রদানের শতকরা হার বড় আকারে বিদেশিদের দেখানোর জন্য এই ভয়াবহ কূটকৌশল নিয়েছেন। জনগণের কষ্টার্জিত টাকায় ভাতাভোগী অসহায়-হতদারিদ্র মানুষদের বিদেশিদের সামনে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করতে চান শেখ হাসিনা। সরাসরি কার্ডধারী ১ কোটি ২০ লাখ ভাতাভোগীসহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় দুই কোটি মানুষ। ১২ কোটি ভোটারের মধ্যে ছয় ভাগের এক ভাগ উপকারভোগী।’
তিনি বলেন, ‘আমরা খবর পাচ্ছি— বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন গোপন বৈঠক হচ্ছে, গণভবনে শলা-পরামর্শ হচ্ছে কীভাবে জনগণের লড়াই নির্মূল করা যায়। কিন্তু লাভ নেই। কারণ, জনগণ হাতের মুঠোয় জীবন নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়েছে। কোনো কিছুতেই কিছু হবে না। সময় শেষ। পতন হবেই। সুতরাং আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সিভিল প্রশাসন, নির্বাচন কমিশনসহ সবাইকে বলব, জনগণের বিরুদ্ধে যাবেন না, গণশত্রু হবেন না।’
সারাবাংলা/এজেড/এনএস