এরা কি মানুষ, খুন ছাড়া কিছুই বোঝে না— বিএনপিকে শেখ হাসিনা
৩ নভেম্বর ২০২৩ ২২:০৮
ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পুলিশ সাধারণ একটি চাকরি করে। একটি পরিবার তাদের ওপর নির্ভর। তারা তো মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য চাকরি করে। এবার যেভাবে পুলিশ মেরেছে আপনারা দেখেছেন। মাথার হেলমেটটা খুলে নিয়ে কোপাল? এরা কি মানুষ? এদের মধ্যে কি কোনো মনুষ্যত্ববোধ আছে? এরা কীসের রাজনীতি করে? যারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে তারা কী রাজনীতি করে? এরা তো খুন করা ছাড়া আর কিছুই বোঝে না। আর কিছুই জানে না।
শুক্রবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জেল হত্যা দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে বিএনপির যে অগ্নিসন্ত্রাস, তাদের যে বীভৎস চেহারা, তারা পিটিয়ে পিটিয়ে পুলিশ হত্যা করে, একটা নিরীহ পুলিশ চাকরি করে তার কি অপরাধ ছিল? তাকে অমানবিকভাবে হত্যা করল! এটি শুধু এবারই না ২০১৩ সালে একই ঘটনা তারা ঘটিয়েছে। ২০১৪ তে নির্বাচন বানচাল করার জন্য একই ঘটনা ঘটায়। ২০১৫ সালেও তারা ঘটিয়েছে।’
বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের প্রসঙ্গ তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ যখন প্রতিরোধ করেছে তখনই তারা থেমেছে। আজকেও আমি বলব, এখন সময় এসে গেছে। এই অগ্নিসন্ত্রাসী যে যেখানেই থাকুক যারাই এভাবে আগুন দেবে, জনগণের ওপর অত্যাচার করবে এবং গাড়ি-বাস-ট্রাক আগুন দেবে, সঙ্গে সঙ্গে তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। এখানে শুধু কারও ওপর নির্ভর করলে হবে না জনগণকেই এগিয়ে আসতে হবে।’
“ঠিক ২০১৩ যেই রকম শুরু করেছিল। নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করা হয়েছিল। তারা ৫২৫টি স্কুল পুড়িয়ে দিয়েছিল। এগুলো ছিল নির্বাচনি কেন্দ্র। তারপরও নির্বাচন থামাতে পারেনি। ওরা জানে নির্বাচন করলে কোনোদিন ক্ষমতায় আসতে পারবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০০৮ এর নির্বাচন সেই নির্বাচনেই তো ৩০০ সিটের বিপরীতে তারা পেয়েছিল মাত্র ৩০টা। আর এখন ওদের অপকর্মের জন্য মানুষ তো আরও বিমুখ।’
নির্বাচন কাকে নিয়ে করবে? নির্বাচন করলে ওদের নেতা কে? কাকে প্রধানমন্ত্রী করবে? কাকে দিয়ে মন্ত্রিসভা করবে? বিএনপির চেয়ারপারসন সে তো এতিমের অর্থ আত্মসাতের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। এখন তো অসুস্থ। তার বোন-ভাই, বোনের জামাই আমাদের কাছে এসেছিল। আমার সঙ্গে, রেহানার সঙ্গে দেখা করেছে, কান্নাকাটি করেছে। আমি সাজাটা স্থগিত করে খালেদা জিয়াকে বাসায় থাকার এবং তার ইচ্ছামতো চিকিৎসা নেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’
“আপনারা একবার ভেবে দেখেন তো, যে আমাকে বারবার হত্যার চেষ্টা করেছে! যে আমার বাবা-মা-ভাই সব হত্যা করেছে; ওই হত্যার সঙ্গে তো জিয়াউর রহমান যেমন দায়ী, এই পরিবারটাই তো দায়ী। এমন কি তার ছেলে মারা গেল, আমি গেলাম সহানুভূতি দেখাতে, দরজা বন্ধ করে দিলো! আমাকে ঢুকতে দিল না! তারপরও তো পরিবার এসে কান্নাকাটি করে, আমি সুযোগ দিলাম’ বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
‘কিন্তু যে ছেলে (তারেক রহমান), জিয়াউর রহমান একটা কুলাঙ্গার পয়দা করে গেছে। সে বাংলাদেশে অস্ত্র চোরাকারবারির একটা স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছিল। হাতেনাতে ধরা পড়ল। যে পুলিশ ধরেছে তাকে শাস্তি দিয়েছে। তারেক রহমান সেই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। মানিলন্ডারিংয়ের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। এই মানি লন্ডারিংয়ের তথ্য বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া। আমেরিকা থেকে এফবিআই এসে তারেকের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে। সেই সাক্ষ্যতেই তারেক রহমানের সাজা হয়েছে’ বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা, এতে প্রত্যক্ষভাবে সে জড়িত’ কোনো সন্দেহ নেই। কারণ তার আগে তো খালেদা জিয়া বক্তৃতাই দিয়েছে, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়া তো দূরের কথা, বিরোধীদলের নেতাও হতে পারবে না। এই ভবিষ্যৎবাণীটা কীভাবে করেছিল সে? আওয়ামী লীগ একশ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না, এই ছিল খালেদা জিয়ার ভবিষ্যৎবাণী। এই বাণীটা কীভাবে দিলো? গ্রেনেড হামলা করে সবাইকে শেষ করে দিতে চেয়েছিল। এরা তো খুন করা ছাড়া আর কিছুই বোঝে না। আর কিছুই জানে না।
তারেক রহমানের মুচলেকা দিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শোনা যায় যে, জুয়া খেলে কোটি কোটি পাউন্ড কামাই করে। এই জুয়া খেলাই নাকি তার সোর্স অব ইনকাম। আর আমরা তো ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। ওখান থেকে বসেই নির্দেশ দেয়, পোড়াও-জ্বালাও মানুষ খুন করো।’
‘কাজেই বিএনপি জানে তাদের সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেছে। বিএনপিতে আর কোনো নেতা ছিল না? যারা অন্তত লেখাপড়ায় সবদিক দিয়ে একটু ভালো, সেটিও করতে পারেনি, ওই সাজাপ্রাপ্ত আসামি। যে কারণে তারা ইলেকশন চায় না। ইলেকশন বন্ধ করে দিয়ে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি করতে চায়। আর কোনো কোনো মহল থেকে তারা যথেষ্ট উসকানিও পায়’ বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাসে আগুন দিয়েছে। হেলপার তার মধ্যে ঘুমিয়ে ছিল। সেই ঘুমন্ত মানুষটাকে পুড়িয়ে মেরেছে। আমাদের আওয়ামী লীগের মহিলা নেতাকর্মীর ওপর হামলা করেছে। আমরা তাদের সেই চেহারা ২০০১’র পরও দেখেছি বলেও জানান তিনি।
২০১৩ সালে গাইবান্ধা, রাজশাহীসহ বিভিন্ন স্থানে অবরোধ-অগ্নিসন্ত্রাসের সময় পুলিশকে পিটিয়ে মারার প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পুলিশ সাধারণ একটা চাকরি করে। একটা পরিবারে তাদের ওপর নির্ভর। তারা তো মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য। এবারে যেভাবে মেরেছে আপনারা দেখেছেন। মাথার হেলমেটটা খুলে নিয়ে কুপিয়েছে। এরা কি মানুষ? এদের মধ্যে কি কোনো মনুষ্যত্ববোধ আছে? এরা কিসের রাজনীতি করে? যারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে তারা কি রাজনীতি করে? সেটা আমার প্রশ্ন, কার জন্য রাজনীতি? কার স্বার্থে রাজনীতি?’
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে স্মরণসভায় বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, জাতীয় নেতা শহীদ তাজউদ্দিন আহমদের মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি এমপি এবং জাতীয় নেতা শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের কন্যা সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি এমপি। আরও বক্তব্য দেন যথাক্রমে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও আবু আহমেদ মান্নাফী। দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন।
সারাবাংলা/এনআর/একে