মেট্রো এবার মতিঝিলে, সমাবেশে নির্বাচনি বার্তা দেবেন শেখ হাসিনা
৩ নভেম্বর ২০২৩ ২৩:১০
ঢাকা: ঘনিয়ে আসছে আগামী জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনের আগে এবার ঢাকাবাসীর জন্য আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত বহু প্রতীক্ষিত মেট্রোরেল সার্ভিসের দ্বিতীয় ধাপের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪ নভেম্বর দুপুরে এমআরটি লাইন-৬ (মেট্রোরেল)-এর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করবেন। একইসঙ্গে ঢাকা মহানগরীর প্রথম পূর্ব-পশ্চিম এমআরটি করিডোর ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৫): নর্দার্ন রুটের নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধন শেষে দুপুর আড়াইটায় মতিঝিল আরামবাগে ঢাকা বিভাগীয় মহাসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনিমার্ণের অঙ্গীকারে নির্বাচনি বার্তা দেবেন।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী (৪ নভেম্বর) শনিবার এমআরটি লাইন-৬ (মেট্রোরেল)-এর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ এবং ঢাকা মহানগরীর প্রথম পূর্ব-পশ্চিম এমআরটি করিডোর ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৫): নর্দার্ন রুটের নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন করবেন।
তিনি আরও জানান, মেট্রোরেলের উদ্বোধন অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে শনিবার উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও অংশের মেট্রো ট্রেনের বাণিজ্যিক চলাচল বন্ধ থাকবে। পূর্বের ন্যায় শুক্রবারও মেট্রো ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে ৫ নভেম্বর রোববার থেকে প্রতিদিন মেট্রো ট্রেন মতিঝিল থেকে উত্তরা উত্তর পর্যন্ত সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত উভয়দিকে চলাচল করবে। মতিঝিল থেকে আগারগাঁও অংশে শুধুমাত্র মতিঝিল, বাংলাদেশ সচিবালয় এবং ফার্মগেট মেট্রোরেল স্টেশনে মেট্রো ট্রেন থামবে। হেডওয়ে হবে ১০ মিনিট। সকাল সাড়ে ১১টার পর থেকে মতিঝিল হতে আগারগাঁও অংশে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে।
এর আগে গত ২৮ ডিসেম্বর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রো রেলের প্রথম ধাপের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, ২০২৮ সালের মধ্যে হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত ১৩.৫০ কিলোমিটার পাতাল এবং ৬.৫০ কিলোমিটার উড়ালসহ মোট বিশ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-৫: নর্দার্ন রুট নির্মাণের লক্ষ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডি ও বেসিক ডিজাইন সম্পন্ন হয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ডিজিটাল ডিজাইনের অগ্রগতি ৯৪.০০%। প্রকল্পটি মোট ১০টি প্যাকেজে বিভক্ত করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিভিন্ন প্যাকেজের চূড়ান্ত ডিজাইন ও আন্তর্জাতিক দরপত্র দলিল প্রণয়নের কাজ চলমান। হেমায়েতপুর ডিপো ও ডিপো এক্সেস করিডোর নির্মাণের জন্য ৯৯.২৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে মতিঝিল অংশ মেট্রোরেল চলাচল উদ্বোধনের দিনে ঢাকা বিভাগীয় মহাসমাবেশকে সফল করার লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জাতীয় নির্বাচনের আগে ঢাকায় এটিই হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের শেষ সমাবেশ। তাই সমাবেশে কমপক্ষে ১০ লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটিয়ে রাজপথে শক্তির মহড়া দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে দলটির নীতিনির্ধারক সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, সমাবেশে ঢাকা বিভাগের অধীনে ১৭টি সাংগঠনিক জেলার নেতাকর্মীরা উপস্থিত হবেন। মঞ্চে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ঢাকা বিভাগীয় ১৭টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা থাকবেন। এ ছাড়া সব সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মঞ্চে থাকবেন।
এবিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সমন্বয়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক সারাবাংলাকে বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ঢাকায় এটিই শেষ সমাবেশ। কাজেই এই সমাবেশ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে জাতিকে দিকনির্দেশনা দেবেন এবং নির্বাচনের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য তিনি আহ্বান জানাবেন। তাই এ সমাবেশে প্রায় ১০ লাখ লোকের জমায়েত হতে পারে। এ লক্ষ্যে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সমন্বয়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বলেন, ‘এই সমাবেশ থেকে জননেত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেবেন। আমরা এখনো আশা করি বিএনপির শুভবুদ্ধির উদয় হবে। আর যদি নির্বাচন ভন্ডুল করার ষড়যন্ত্র করে তাহলে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।’
আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আন্দোলনে যারা পরাজিত হয় নির্বাচনে তারা কখনোই বিজয় লাভ করতে পারে না। বিএনপি দেড় বছরে তাদের আন্দোলন যে মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিল এবং সেই সর্বোচ্চ জায়গা থেকে তারা এখন হোঁচট খেয়ে একদম নর্দমায় পড়ে গেছে। এমন একটি সময়ে আমাদের ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ যেটা আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে। এই ঢাকা মহানগরে এটাই হয়ত আওয়ামী লীগের সর্ববৃহৎ সর্বশেষ সভা।’
তিনি আরও বলেন, ‘এতবড় সমাবেশ আর নির্বাচনের আগে হয়ত আর হবে না। সেই কারণে এই সমাবেশকে আমরা এমনভাবে সফল করতে চাই যাতে ঢাকা শহরের মানুষ নয়, সারাদেশের মানুষ যেন বুঝতে পারে বাংলাদেশের মানুষ শেখ হাসিনার দিকে ঐক্যবদ্ধ। শেখ হাসিনাকে মানুষ সমর্থন করে এবং আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনা আবারও প্রধানমন্ত্রী হবে। এই সমাবেশের আকৃতি এবং সমাবেশের সবকিছু দেখে মানুষ এটি বিশ্বাস করবে।’
সারাবাংলা/এনআর/একে