সাবধান করে দিচ্ছি, ধ্বংসযজ্ঞ চালালে আমরাও ছাড়ব না: প্রধানমন্ত্রী
৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:৪৭
ঢাকা: বিএনপিকে ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করার সাবধানবাণী উচ্চারণ করে কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তাদের আন্দোলন হচ্ছে অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ খুন করা আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা করা। সবকিছু ধ্বংস করা। কেন ধ্বংস করবে এভাবে? তাদের কে অধিকার দিয়েছে? কাজেই তাদের এই ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে। আর এটি যদি বন্ধ করতে না পারে কীভাবে বন্ধ করাতে হয় তা আমাদের জানা আছে। এটি আমরা ছাড়ব না।
শনিবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে আরামবাগে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সব কথা বলেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যৌথ আয়োজনে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত বহু প্রতীক্ষিত মেট্রোরেল সার্ভিসের দ্বিতীয় ধাপের উদ্বোধন ও পূর্ব-পশ্চিম এমআরটি লাইন-৫: নর্দার্ন রুটের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে এই সমাবেশ আয়োজন করা হয়।
জাতীয় নির্বাচনের আগে ঢাকাবাসীকে স্মার্ট স্বস্তির যাত্রা উপহার দিতে এমআরটি লাইন-৬ (মেট্রোরেল)-এর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করেন। পরে বিকেলে আরামবাগে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষ্যে আরামবাগে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে দলীয় নেতাকর্মীদের জনস্রোতের ঢল নামে।
আগারগাঁও থেকে মেট্রোরেলে চড়ে মতিঝিলে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা মহানগরীর প্রথম পূর্ব-পশ্চিম এমআরটি করিডোর ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৫): নর্দার্ন রুটের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।
আর্থসামাজিক অগ্রগতিসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ বাস্তবায়নের কথা প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়া বলেছিলেন শেখ হাসিনা কোনোদিন প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, বিরোধীদলের নেতাও হতে পারবে না। খালেদা জিয়া বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ কোনোদিন ক্ষমতায়ও যেতে পারবে না। আল্লাহর মাইর দুনিয়ার বাইর। এখন নিজেই ভেবে দেখুক। কে কোথায় আছে? আমি কখনও গর্ব করি না। আমার কাছে ক্ষমতা হচ্ছে জনগণের সেবা করার সুযোগ করা। আমি জনগণের সেবা করতে চাই। জনগণের সেবা করে যাচ্ছি। সেটিই আমার লক্ষ্য। আমি চাই এদেশের মানুষ সুখে থাক।’
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষ নিরাপদ থাকে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বিএনপি কী পারে জনগণের ভোট চুরি, জনগণের সম্পদ চুরি জনগণকে হত্যা করা। সরকারি-অসরকারি-সামরিক অফিসার তাদের চাকরি খাওয়া, তাদের ওপর নির্যাতন, নানারকম অপকর্ম। এই ২৮ অক্টোবর কী ঘটনা তারা ঘটাল? আপনারা বলেন, যার ভেতর মনুষ্যত্ব আছে তারা কি এরকম করতে পারে? ওই পুলিশ কী দোষটা করেছে? আমি তো পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই, তারা সেদিন যথেষ্ট সহনশীলতা দেখিয়েছে। অথচ ওই পুলিশের ওপর তারা আক্রমণ করেছে।’
‘পুলিশ পেছনে হটে গেছে তারপরও এক পুলিশকে ধরে মাটিতে ফেলে যেভাবে তার ওপর লাঠিপেটা করেছে। মাথায় কুপিয়েছে। হেলমেট পরা ছিল সেটি খুলে ফেলে তারপরও কুপিয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
এ সময় তিনি পুলিশের রাজারবাগ হাসপাতালে হামলাসহ আওয়ামী লীগের মহিলা নেতাকর্মীদের ওপর বিএনপির হামলার ঘটনার চিত্রও তুলে ধরেন। পাশাপাশি বিএনপির অবরোধ-আন্দোলনের সময় অতীতে পুলিশের ওপর হামলা করে নিহত করার ঘটনাও তুলে ধরেন।
সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা কী দোষ করেছে? তারা তো চাকরি করে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেবে। আজকে অগ্নিসন্ত্রাস, এটিই বিএনপির চরিত্র। তারা কথায় কথায় আগুন দেয়। বাসে যাত্রী, বাসের মধ্যে আগুন দেয়। ২৮ তারিখেও একটি হেলপার ঘুমিয়ে আছে। সে জানেও না। সেই বাসে আগুন দিয়ে হেলপারকে হত্যা করেছে।’
২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, ‘এরা যেন জ্বালাও পোড়াও ধ্বংস করাই যেন তাদের একটি উৎসব। এই হলো বিএনপির চরিত্র। আমার প্রশ্ন তারা মানুষের ভাত দিতে পারেনি। মানুষের ঘর দিতে পারেনি। মানুষকে কাপড় দিতে পারেনি। তাদের আমলে বিদেশ থেকে পুরান কাপড় এনে আমাদের দেশের মানুষকে পরাত। আর সেই মানুষগুলোর ওপর তারা এই অত্যাচার কীভাবে করে?’
ঢাকাবাসীসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা আগুন দিয়ে পোড়াবে তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। দরকার হলে তাদের ধরে ওই আগুনের মধ্যে ফেলতে হবে। যে হাত দিয়ে আগুন দেবে সেই হাত আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিতে হবে। তাহলেই তাদের শিক্ষা হবে। তারা ভুলে যাচ্ছে, বাসে আগুন দেয়, গাড়িতে আগুন দেয়। তারা গাড়িতে চড়ে না? তাদের গাড়ি নাই? তাদের জিনিসপত্র নাই? জনগণ যদি সেগুলো পোড়াতে শুরু করে তখন তারা কোথায় যাবে? কী করবে সেটিও তাদের ভাবা উচিত। আমরা ওই সব বিশ্বাস করি না দেখে এখনও দেশের মানুষ ধৈর্য ধরে আছে। কিন্তু এভাবে কতদিন?’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকে কোনো জিনিসপত্র-খাদ্যপণ্য আসতে দেয় না। সেখানেও বাধা দেয়। কাজেই আমি তাদের সাবধান করে দিচ্ছি। ক্ষমতা দেওয়ার মালিক আল্লাহ আর এইদিকে জনগণের ভোট। আমার বাবা-মা ভাই, আমার ছোট রাসেলকেও তো হত্যা করেছিল। ভেবেছিল জাতির পিতার রক্তের আর কেউ কোনোদিন ক্ষমতায় আসবে না। খালেদা জিয়া তো বলেছিল, একশ বছরেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আল্লাহর রহমতে ওই কথা তাদের বেলায় ফলে গেছে। আর আওয়ামী লীগ এই চার চার বার ক্ষমতায় আছে। ইনশাআল্লাহ আগামীতেও জনগণ নৌকায় ভোট দেবে এবং আমরা জনগণের সেবা করে যাব।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই নৌকা মার্কাই হচ্ছে একটা মার্কা; যে মার্কায় ভোট দিয়ে এদেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। যে মার্কায় ভোট দিয়ে এই দেশের মানুষ যেখানে জাতির পিতা যুদ্ধবিধস্ত দেশকে স্বল্পোন্নত দেশে রেখেছিলেন। আজকে আমরা তা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন আজকে সবার হাতে মোবাইল ফোন। ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে। ফ্রিলান্সিং করে টাকা কামাই করতে পারে। কর্মসংস্থানের ব্যাপক ব্যবস্থা নিয়েছি। ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিয়েছি। রাস্তাঘাটের উন্নতি হয়েছে। একেবারে গ্রামপর্যন্ত আজকে উন্নয়ন। এমনকি প্রবাসী যারা করোনার সময় তাদের আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছি। নৌকায় ভোট পেয়ে ক্ষমতায় এসেছি বলেই এটি আমরা করতে পেরেছি। আর ওই বিএনপি-জামায়াত তো ভোট চোর। জনগণের সম্পদ চোর। ওই চোরদের ঠাঁই বাংলাদেশে নেই।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও ঢাকা-৮ আসনের এমপি রাশেদ খান মেনন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য সাঈদ খোকন, আনোয়ার হোসেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামসহ অনেকে।
যৌথভাবে সমাবেশ পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ।
সারাবাংলা/এনআর/একে