Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দূরপাল্লার বাস না পেয়ে অবরোধের দ্বিতীয় দিনেও ভোগান্তি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৬ নভেম্বর ২০২৩ ২২:১৪

অবরোধে যাত্রী কম, বাসও ছাড়ছে না। তাই কাউন্টার ফাঁকা। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: ব্রাজিলে যেতে চান, সে কারণে ঢাকার দূতাবাসে প্রয়োজনীয় কাজ সারতে নোয়াখালী থেকে ঢাকা এসেছিলেন জাহিদ। কাজ শেষে আর বাড়ি ফিরতে পারেননি, ঢাকায় আটকা পড়েন অবরোধে। আত্মীয়-স্বজন কেউ না থাকায় ঢাকায় উঠতে হয় হোটেলে। দুই দিনে থাকা-খাওয়া মিলিয়ে বাড়তি খরচ পাঁচ হাজার টাকা।

সোমবার (৬ নভেম্বর) অবরোধের দ্বিতীয় দিন দুপুরে কিছুটা বাধ্য হয়েই সায়েদাবাদ গিয়েছিলেন জাহিদ, যদি কোনো বাস পেয়ে যান সেই আশায়। একুশে পরিবহনের কাউন্টারে টিকেট কাটার সময় তার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।

বিজ্ঞাপন

জাহিদ বলেন, দেশের বাইরে ছিলাম। এখন ব্রাজিল যাব। কিন্তু অবরোধের কারণে ঢাকায় এসে আটকা পড়লাম। দুই দিনে অতিরিক্ত টাকা খরচ হলো। হোটেলে দেখলাম, আমার মতো অনেক যাত্রীই এভাবে আটকা পড়েছেন। আজ অবরোধের শেষ দিন বলে অনেকেই আমার মতো গাড়ির খোঁজে বের হয়েছেন।

অবরোধ দিয়ে এভাবে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে না ফেলার আহ্বান জানিয়ে জাহিদ বলেন, আমার মনে হয় এভাবে অবরোধ দিলে পাবলিকের ক্ষতি। অন্য কোনো পথে সমাধান খুঁজে বের করা যায় কি না, তা ভেবে দেখতে হবে। আমরা যারা সাধারণ জনগণ, যারা রাজনীতিতে যুক্ত না, রাজনীতিবিদদের কাছে আমাদের একটাই আহ্বান— আপনারা ভিন্ন পথে সমাধান বের করেন।

জাহিদের মতো আরও বেশ কিছু যাত্রী অপেক্ষা করছিলেন সায়েদাবাদের বিভিন্ন বাস কাউন্টারে। কথা বলে জানা গেল, তারাও অবরোধের কারণে আটকে পড়েছেন ঢাকায়।

জাহিদ যে কাউন্টারে টিকিট কাটছিলেন সেই একুশে পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার সোহেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা গতকাল (রোববার) কোনো গাড়ি ছাড়িনি। আজ বিকেল ৫টা থেকে গাড়ি ছাড়ছি।’ হরতাল-অবরোধে বাস ছাড়তে না পারায় তাদের এক কাউন্টার থেকেই দিনে প্রায় লাখ টাকা ক্ষতি হচ্ছে বলে জানালেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

সোমবার বিকেল ৫টার পর দূরপাল্লার বাস ছাড়ার পরিকল্পনা করছিল কাউন্টারগুলো। ছবি: সারাবাংলা

সোমবার অবরোধের দ্বিতীয় দিন রাজধানীতে অভ্যন্তরীণ বাস চলাচল বাড়লেও দূরপাল্লার বাস ছাড়েনি বললেই চলে। সায়েদাবাদের বিভিন্ন বাস কাউন্টারে কথা বলে জানা যায়, বাস ছেড়ে ঝুঁকি নিতে চাইছেন না কেউই। কেউ কেউ কেবল রাতে বাস ছেড়েছেন। তবে পরিবহনসংশ্লিষ্ট সবাই-ই বললেন, যাত্রীর সংখ্যাও ছিল অনেক কম।

স্টারলাইন, ড্রিম লাইন পরিবহনের কাউন্টারের ইনচার্জ সুমন বলেন, ‘আমাদের স্টার লাইন থেকে সারাদিনে ২০টা গাড়ি ছেড়ে গেছে, আর স্টারলাইন-ড্রিম লাইন থেকে গেছে সাতটা গাড়ি। দুই বাসেই যাত্রী সংখ্যা ছিল সীমিত। আর গতকাল অবরোধের প্রথম দিন ২০-২৫টার মতো বাস ছেড়েছিল।’ দুপুরে যাত্রাবাড়ীতে তাদের পরিবহনের একটি গাড়িতে ভাঙচুর করা হয়েছে বলেও জানান সুমন।

অন্যান্য কয়েকটি পরিবহনে কথা বলে জানা গেল, গতকাল রোববার রাতে দূরপাল্লার বাস ছাড়লেও আজ সোমবার সারাদিনে ঝুঁকি নিয়ে বাস ছাড়েননি কেউ। তবে বিকেল থেকে বাস ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা। একজন-দুজন করে যাত্রীও আসছিলেনন। তবে দুই দিন ধরেই যাত্রীরা ফোন করে বাস ছাড়বে কি না জানতে চাইছিলেন বলে জানালেন কাউন্টারকর্মীরা।

সীমিত পরিসরে আভ্যন্তরীণ বাস চলাচল করলেও দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকার প্রভাব পড়েছে বাস কাউন্টার ঘিরে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যবসায়। বড় দোকান, শো-রুমগুলো বন্ধ। কিছু চায়ের দোকান, ভাতের হোটেল, ভ্রাম্যমাণ সেলুন ইত্যাদি কেবল খোলা দেখা গেল।

দূরপাল্লার বাস যেমন ছাড়েনি, তেমনি যাত্রীর পরিমাণও ছিল কম। ছবি: সারাবাংলা

সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকার চায়ের দোকানি নূরী। ১৬/১৭ বছর ধরে চায়ের পাশাপাশি চিপস, চানাচুর, বিস্কুট বিক্রি করেন তিনি। জানালেন, অবরোধে ব্যাবসায় ভাটা পড়েছে। দুই দিনই হলো সকাল থেকেই দোকান খোলা রেখেছেন। তবে দুদিন মিলিয়ে তিন হাজার টাকাও বিক্রি হয়নি। আজ যাত্রীদের আনাগোনা বাড়তে দেখে বিক্রি বেশি হবে বলে প্রত্যাশা তার।

সায়েবাদের ভাতের হোটেল সুপার নোয়াখালির মালিক দীন মোহাম্মদ। সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত হোটেল খোলা রেখেছিলেন। তবে সারাদিনে দুই হাজার টাকার খাবারও বিক্রি করতে পারছেন না। তার হোটেলে রোববার বরং বিক্রি কিছুটা বেশি হয়েছে।

দীন মোহাম্মদ বলেন, ‘এমনিতে দিনে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকার কেনাবেচা হয়। অথচ গতকাল (রোববার) মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকার মতো বিক্রি হয়েছিল। আজকের অবস্থা আরও খারাপ।’

ওই দোকানের কর্মচারী সাতজন। দৈনিক মজুরিভিত্তিতে টাকা দিতে হয় তাদের। বিক্রি-বাট্টা বন্ধ থাকলেও হোটেল খোলা রাখায় সাতজনের দৈনিক মজুরিই দিয়ে যেতে হচ্ছে।

এদিকে অবরোধে কড়া পাহারায় রয়েছে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকা। মোড়ে মোড়ে পুলিশ প্রহরা। মুগদা ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) এ কে আজাদ বলেন, ‘সার্বিক অবস্থা ভালো এদিকে। প্রতিটি পোস্টে পর্যাপ্ত পরিমাণ নিরাপত্তা প্রহরী সতর্ক অবস্থায় আছে। দূরপাল্লার বাস কম চললেও আভ্যন্তরীণ বাস বেশ ভালোই চলছে।’ লোকাল যাত্রী চলাচলের পরিমাণ ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ বলে জানালেন তিনি।

এদিকে বিএনপির ডাকা ৪৮ ঘণ্টার দ্বিতীয় দফার অবরোধের দ্বিতীয় ও শেষ দিন সকাল থেকেই প্রথম দিনের তুলনায় রাস্তায় ভিড় বেশি দেখা গেছে। বিশেষ করে অফিস আওয়ারে এয়ারপোর্ট রোড, গুলশান, মতিঝিল, মিরপুরসহ নানা এলাকায় যান চলাচল প্রায় স্বাভাবিক ছিল। কিছু কিছু এলাকায় যানজটও দেখা গেছে। প্রতিদিন কয়েকটি করে বাসে আগুন লাগানোর ঘটনায় আশঙ্কা নিয়েই রাস্তায় বের হচ্ছেন যাত্রীরা। যথাসম্ভব এড়িয়ে চলছেন বাস। এই সুযোগে রাস্তায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেট কার, রিকশা ও মোটরসাইকেলের ভিড় বেশি দেখা যাচ্ছে।

সারাবাংলা/আরএফ/টিআর

অবরোধ অবরোধ কর্মসূচি টপ নিউজ দূরপাল্লার বাস বাস কাউন্টার বিএনপির অবরোধ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর