‘প্রয়োজনে পিতার মতো জীবন দিয়ে যাব’
৬ নভেম্বর ২০২৩ ২২:২৬
ঢাকা: জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের পুত্র ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশিত পথে মহান মুক্তিযুদ্ধে সফলভাবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জাতীয় চার নেতা। তারা জীবন দিয়ে গেছেন, কিন্তু বেঈমানি করেননি।
নিজেদের জীবন দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি আনুগত্য, অসীম সাহস ও দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। এখান থেকে আমাদের নতুন প্রজন্মকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আদর্শে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছি। প্রয়োজন হলে পিতার মতো আমরাও নিজেদের জীবন দিয়ে যাব।’
সোমবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জেল হত্যা দিবস উপলক্ষ্যে জাতীয় চার নেতা স্মরণে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন স্লোগান-৭১ এ মতবিনিময় সভা আয়োজন করে।
সভার শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতা শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ, শহীদ ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী ও শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, জাতীয় চার নেতার পরিবারের সদস্যবৃন্দসহ অতিথিরা। এরপর এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট জাতির পিতার হত্যাকাণ্ড এবং ৩রা নভেম্বর জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস নিয়ে বড় করে আলাদা সাবজেক্ট হিসেবে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। যেখান থেকে আমাদের নতুন প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এ সদস্য আরও বলেন, ‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে নানান ষড়যন্ত্র হচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশবিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে। এই সময় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা-কমীদের অনেক কিছু করার আছে। সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। কারও প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী বাংলাদেশের নির্বাচন হবে না। ভারত, ইংল্যান্ডসহ উন্নত বিশ্বে যেভাবে নির্বাচন হয়, সেভাবেই নির্বাচন হবে।’
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের কন্যা ও কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি বলেন, ‘আব্বাকে জেলখানায় দেখতে গেলাম, অনেক কথা হল। আম্মা আব্বাকে বলল, আপনার দুই মেয়ে আপনাকে নিয়ে খুব চিন্তা করে। আব্বা বললেন চিন্তা কর না, আমি খুব শ্রীঘই তোমাদের কাছে চলে আসব। ৪ নভেম্বর বিকেল বেলায় জেলখানা থেকে আমাদের কাছে একটি ফোন আসল। আব্বা হয়ে গেল মৃতদেহ। আব্বা কথা রেখেছেন। তিনি ঠিকই বাড়িতে ফিরে আসলেন, কিন্তু নিথরদেহে।’
তিনি বলেন, সামনে নির্বাচন আসছে, শত বাধা উপেক্ষা করে নির্বাচন হবে গণতান্ত্রিক নিয়মে। নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন হবে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখব।’
শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর দৌহিত্র ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় বলেন, ‘মানব জাতির ইতিহাসে জঘন্যতম দিন ৩রা নভেম্বর জেল হত্যা দিবস। মৃত্যু অবধারিত জেনেও খন্দকার মোস্তাকের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন জাতীয় চার নেতা। এই সাহস ও ত্যাগ এবং নেতার প্রতি আনুগত্য ও দেশের প্রতি ভালোবাসা বিরল।’
তিনি বলেন, ‘খুনীদের উত্তরসূরী দেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। এই প্রজন্ম আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই সময় জাতীয় চার নেতার ত্যাগ ও সাহস নিয়ে যতটুকু এগিয়ে যেতে থাকব, এই মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে সেটি ততটা সহযোগিতা করবে।’
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা শারমিন আহমদ বলেন, ‘আমার পরিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তিনটি দাবি জানিয়েছি। দাবি তিনটি হল, ১০ এপ্রিলকে প্রজাতন্ত্র দিবস ঘোষণা, ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন এবং মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস যথাযথ মর্যাদা ও গুরুত্বের সঙ্গে সর্বস্তরের পাঠ্যপুস্তক ও সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা। এগুলো আমাদের তুলতে হবে কেন, এগুলো রাষ্ট্রীয়ভাবে বাস্তবায়ন হওয়া দরকার। প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবিগুলো পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন, এটি আমাদের জন্য সুখবর।’
‘স্লোগান’৭১ এর সভাপতি নয়ন আহমেদ এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান অমির সঞ্চালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুষদের ডিন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হোসেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিক ইনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক মো. তানভীর হাসান সৈকত, স্লোগান’৭১ উপদেষ্টা ও ‘জাহাজী’র সহ-উদ্যোক্তা কাজল আব্দুল্লাহ, স্লোগান’৭১ সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক ছাত্রনেতা ভূঁইয়া মো. ফয়েজউল্লাহ মানিক প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/এনইউ