পোশাক শ্রমিকদের মজুরি কত বাড়ছে— জানা যাবে আজ
৭ নভেম্বর ২০২৩ ০০:০২
ঢাকা: দেশের তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের ৬ষ্ঠ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে আজ মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর)। সর্বশেষ পঞ্চম বৈঠকে আগের দেওয়া ১০ হাজার ৪০০ টাকার প্রস্তাব থেকে সরে আসে মালিকপক্ষ। শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠনের দাবি মেনে পোশাক মালিকরা মজুরি আরও বাড়াতে সম্মত হন। তবে তারা মজুরি কত বাড়াবেন সর্বশেষ বৈঠকে তা স্পষ্ট করেননি। এদিকে, শ্রমিকপক্ষও আগের দেওয়া ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকার প্রস্তাবে অনড় রয়েছে।
ইতোমধ্যে জল বেশ ঘোলা হয়েছে। হঠাৎ করেই শ্রমিক আন্দোলনে দেশের পোশাক খাতের অগ্রযাত্রা নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়। আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষের উসকানির কথাও উঠে আসে। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন মালিকপক্ষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরেও রয়েছে দেশের পোশাক খাত ও ৪০ লাখের বেশি পোশাক শ্রমিক। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাস্তবসম্মতভাবে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বাড়াতে মালিকদের নির্দেশ দিয়েছেন সরকারপ্রধান। যা ৬ষ্ঠ বৈঠক স্পষ্ট হতে পারে। সংশ্লিষ্ট একাধিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সারাবাংলা এমন তথ্য জানতে পেরেছে।
জানতে চাইলে নিম্নতম মজুরি বোর্ডে শ্রমিকদের প্রতিনিধি বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি সোমবার রাতে সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগামীকালের (আজ মঙ্গলবার) বৈঠকে মজুরি নির্ধারণের বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরব যাওয়ার আগে মজুরি বাড়াতে পোশাক মালিকদের নির্দেশনা দিয়ে গেছেন বলে জানতে পেরেছি। মালিকপক্ষের প্রতিনিধি বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কথা হয়েছে বলে শুনেছি। তিনি হয়তো ৬ষ্ঠ বৈঠকে মজুরি বোর্ডে তা উপস্থাপন করবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘মালিকপক্ষ প্রধানমন্ত্রীর কাছেও কান্নাকাটি করেছে। তারা বলেছে, পোশাক শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। সব শুনে প্রধানমন্ত্রী মজুরি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়ে গেছেন।’
আরও পড়ুন:
- পোশাক শ্রমিকদের বেতন বাড়ছে নির্বাচনের আগেই
- শ্রমিকদের প্রস্তাব ২০ হাজার, মালিকরা দিতে চান অর্ধেক
- ৫ম বৈঠকে চূড়ান্ত নাও হতে পারে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি
- শ্রমিকদের মজুরি সাড়ে ১০ হাজারের বেশি দিতে চান মালিকরা
এ বিষয়ে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের মালিকপক্ষের প্রতিনিধি তৈরি পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগামীকালের (মঙ্গলবার) বৈঠকে আমরা প্রস্তাব দেবো। এটিই ফাইনাল প্রস্তাব।’ তবে প্রধানমন্ত্রী কি নির্দেশনা দিয়েছেন তা তিনি স্পষ্ট করেননি।
এদিকে, নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা আফরোজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় মজুরি বোর্ডের ৬ষ্ঠ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। মালিকপক্ষের প্রস্তাব দেওয়ার কথা রয়েছে। আমরা খসড়া তৈরির জন্য সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।’
উল্লেখ্য, বর্তমানে ন্যূনতম আট হাজার টাকা মজুরি পাচ্ছেন পোশাক শ্রমিকরা। সম্প্রতি শ্রমিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এই ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়ে ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা করার দাবি করা হয়। সংগঠনগুলোর দাবি বেশি হলেও সর্বশেষ মজুরি বোর্ডের চতুর্থ বৈঠকে তৈরি পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা করার প্রস্তাব দেয় শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি। আর মালিক পক্ষের প্রতিনিধি শ্রমিকদের প্রস্তাবের প্রায় অর্ধেক ১০ হাজার ৪০০ টাকার প্রস্তাব দেন।
পঞ্চম বৈঠকে শ্রমিক পক্ষ তাদের দাবিতে অনড় থাকলেও মালিকরা সাড়ে ১০ হাজারের বেশি মজুরি দিতে সম্মত হন। তবে এর আগেই সারাবাংলার কাছে বেশ কয়েকজন মালিকই জানিয়েছেন, ন্যূনতম মজুরি ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকার বেশি দেওয়া সম্ভব না। শ্রমিক ও মালিকপক্ষ যে দাবিই করুক না কেন— শ্রমিকদের মজুরি শেষ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হবে মজুরি বোর্ডে। এ ক্ষেত্রে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপও থাকে। ইতোমধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে মালিকপক্ষের বৈঠক হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেছেন।
এদিকে, নভেম্বরের মধ্যেই পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরি নির্ধারণের লক্ষ্য রয়েছে মজুরি বোর্ডের। সেটি হলে পাঁচ বছর পর ফের পোশাক শ্রমিকদের বেতন বাড়তে যাচ্ছে। এর আগে, সর্বশেষ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে বাড়ানো হয়েছিল পোশাক শ্রমিকদের বেতন, যা কার্যকর হয়েছিল ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে।
সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম