খুলছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ‘কিছু অংশ’, উদ্বোধন ১৪ নভেম্বর
৭ নভেম্বর ২০২৩ ১০:০১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত উড়াল সড়ক বা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬ কিলোমিটার। পাঁচ বছর ধরে কর্মযজ্ঞ চলার পর এখনো সড়কের বেশকিছু অংশে কার্পেটিং ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ শেষ হয়নি। লালখান বাজারের কাছাকাছি এখনো চলছে গার্ডার বসানোর কাজ। আর এক্সপ্রেসওয়ের মূল অংশের সঙ্গে ওঠা-নামার সংযোগ পথ বা র্যাম্প নির্মাণের কাজ এখনো শুরুই হয়নি!
এরকম ‘অপ্রস্তুত’ অবস্থাতেই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে চট্টগ্রামের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। উদ্বোধনের আগে একে পুরোপুরি প্রস্তুত করার মতো সময়ও হাতে নেই কর্তৃপক্ষের। কারণ উড়াল সড়কটি উদ্বোধনের আর বাকি আছে মাত্র এক সপ্তাহ। ১৪ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ মেগাপ্রকল্পটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।
দৃশ্যমান কাজ বাকি থাকলেও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) দাবি করছে, কাজ ‘পুরোপুরি শেষ’। তবে সংশ্লিষ্টরা আবার জানিয়েছেন, লালখানবাজার পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটারের কাজ অসমাপ্ত রেখে আপাতত টাইগারপাস পর্যন্ত কাজ শেষ করেই উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিডিএ। আবার উদ্বোধন হলেও এখনই গাড়ি চলাচলের জন্য পুরোপুরি খুলছে না এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, গাড়ি চলতে দেওয়া হবে সীমিত পরিমাণে।
চার হাজার ২৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এ প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ কাজ ২০২৪ সালের জুনে শেষ করার সময়সীমা নির্ধারিত আছে। সাবেক মেয়র প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নামকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিডিএ।
নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয় ঘুরে দেখা গেছে, দক্ষিণ প্রান্ত পতেঙ্গা থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত উড়াল সড়ক গাড়ি চলাচলের জন্য প্রস্তুত। বারিক বিল্ডিং থেকে দেওয়ানহাট মোড় পর্যন্ত অংশে কোথাও সড়কের একপাশে, কোথাও সড়কের উভয় পাশে কার্পেটিং এখনো শেষ হয়নি। যে অংশ দিয়ে র্যাম্প নামবে, সেখানে ইটের অস্থায়ী সীমানা প্রাচীর তৈরিতে ব্যস্ত শ্রমিকরা। দেওয়ানহাট থেকে টাইগারপাস মোড়ে এখনো পিলারের ওপর গার্ডার বসানোর কাজ চলছে। টাইগারপাস থেকে লালখান বাজার অংশে চলছে গার্ডার বসানোর প্রস্তুতি।
প্রকল্প পরিচালক সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের প্রকল্পের কাজ বলতে গেলে পুরোপুরি শেষ। শেষ না হলে তো আর উদ্বোধনের তারিখ ঠিক হয় না। তবে অল্প যেটুকু কাজ বাকি যে আছে, সেগুলো ১৪ নভেম্বরের আগেই শেষ হয়ে যাবে।’
প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, ‘আপাতত পতেঙ্গা টানেলের মুখ থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত গাড়ি চলাচলের জন্য প্রস্তুত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। আর টাইগারপাস থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত একটু সময় লাগবে। সেটা একমাসের মধ্যে সম্পন্ন হয়ে যাবে। আপাতত গাড়ি চলাচল সীমিত থাকবে।’
প্রকল্পের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সের প্রকৌশলী রাফি সাজ্জাদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ এখনো কিছু বাকি। পুরোদমে গাড়ি চলাচলের সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। এ ব্যাপারে সিডিএ ভালো বলতে পারবে। পুরো কাজ শেষ করতে আরও সময় লাগবে।’
১৪ সংযোগপথের কাজই শুরু হয়নি
১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে গাড়ি ওঠানামার জন্য ১৪টি সংযোগপথ বা র্যাম্প নির্মাণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত আছে। প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন, আপাতত র্যাম্প ছাড়াই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল অংশের নির্মাণকাজ শেষ করা হবে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ১৪টি র্যাম্পের মধ্যে জিইসি মোড়ে একটি, টাইগারপাসে দুটি, আগ্রাবাদে চারটি, ফকিরহাটে একটি, নিমতলায় দুটি, সিইপিজেডে দুটি এবং কর্ণফুলী ইপিজেড এলাকায় দুটি র্যাম্প থাকবে। আগ্রাবাদ এলাকার চারটি র্যাম্পের মধ্যে জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর সড়কে হবে একটি, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার সড়কে একটি এবং আগ্রাবাদ অ্যাকসেস সড়কে হবে দুটি র্যাম্প।
মাহফুজুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা উদ্বোধন করে প্রাথমিকভাবে গাড়ি চলাচল শুরু করব। র্যাম্পের জন্য কিছু কিছু জায়গায় কাজ শুরু হয়েছে। সবকিছু একসঙ্গে করা যাচ্ছে না। চট্টগ্রাম শহরে গাড়ির অনেক চাপ। এক্সপ্রেসওয়েতে পুরোদমে গাড়ি চলাচল শুরু হলে নিচে চাপ কমবে। তখন র্যাম্পের কাজে হাত দিতে পারব। সেটাও তাড়াতাড়ি করা হবে।’
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সের প্রকৌশলী রাফি সাজ্জাদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল কাঠামোর কাজ শেষ না করে র্যাম্পের কাজ করা যাবে না। তাই আগে মূল কাঠামোর কাজ শেষ করাই আমাদের লক্ষ্য। আগামী বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ। এর মধ্যে সব কাজ শেষ হওয়ার আশা করছি।’
চট্টগ্রামের যানজট নিরসন করে নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিত করতে ‘চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প’টি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন পায় ২০১৭ সালের ১১ জুলাই। ২০১৮ সালের নভেম্বরে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রথমে তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকা প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ হয়েছিল। পরে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় চার হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকায়। এ ছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়।
১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৫৪ ফুট প্রশস্ত চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে আছে ২৪টি লুপ ও র্যাম্প এবং ৩৯০টি পিলার। নগরীর যানজট নিরসন ও বিমানবন্দর থেকে মূল শহরের যোগাযোগ সহজ করতে এ প্রকল্প ভূমিকা রাখবে বলে দাবি প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের।
ছবি: শ্যামল নন্দী, ফটো করেসপন্ডেন্ট
সারাবাংলা/আইসি/টিআর
উড়াল সড়ক এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে চট্টগ্রামে উড়াল সড়ক সিডিএ