Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘সংবিধান মেনে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসা যাবে’

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৭ নভেম্বর ২০২৩ ২৩:১৫

ফাইল ছবি: আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ঢাকা: ঘনিয়ে আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভোটের তারিখ রেখে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। সব মিলিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে সময় দুই মাসেরও কম। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক বা নির্দলীয় সরকার না পেলে নির্বাচনে যাবে না জানালেও অন্যদের ভাবনায় নির্বাচন ভালোভাবেই রয়েছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও পরিকল্পনা সাজাচ্ছে নির্বাচন ঘিরে। নির্বাচন কমিশনও সংবিধান মেনে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ করেছে বলে জানাচ্ছে।

শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে না এলে নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক বা অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে কি না, সে প্রশ্ন রয়েছে বিভিন্ন মহলের। বিএনপি না এলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে কি না, সে প্রশ্নও রয়েছে আলোচনায়। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপি অংশ না নিলেও নির্বাচন হতে প্রতিযোগিতামূলক। বিএনপি না এলেও নির্বাচন আয়োজন নিয়ে তারা মোটেও চিন্তিত নন। আর সংলাপের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সংবিধান মেনে বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করা যাবে।

নির্বাচন ইস্যুতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে কথা হয়েছে সারাবাংলার এ প্রতিবেদকের। পাশাপাশি নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতা এবং নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেছেন তিনি।

দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে জানতে চাইলে পাল্টা প্রশ্ন রেখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু বিএনপিই দেশের রাজনৈতিক দল নাকি? বিএনপি ছাড়াও দেশে ৪৩টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে। ৩০ থেকে ৪০টি দলই কিন্তু নির্বাচনে আসবে। বরং বিএনপিই জনসমর্থন হারিয়ে ফেলেছে। বিএনপি না এসে এই ৪৩ দলের মধ্যে যদি অধিকাংশ দল এসে যায়, তাহলে নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হবে না কেন?’

নির্বাচনে পরাজয় স্বীকার করতে হবে জেনেই বিএনপি নির্বাচনে যেতে চায় না বলেও মনে করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেন, ‘বিএনপির চরিত্র হলো ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জ্বালাও-পোড়াও করে, জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতায় থাকে এবং একইভাবে ক্ষমতায় আসে। এবার নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হবে, জনগণ তাদের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে— এ বিষয়ে তারা নিশ্চিত। তাই নির্বাচনে পরাজয় স্বীকার না করে তারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।’

আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘দেশে একটা সংবিধান রয়েছে। সে অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন নির্বাচন আহ্বান করবেন। আমরা নির্বাচন কমিশনের আহ্বানের জন্য তৈরি রয়েছি। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সেভাবে তৈরি রয়েছে। আমি মনে করি সবার এখন নির্বাচনমুখী হওয়া উচিত। নির্বাচন ছাড়া সরকার বদলের আর কোনো পন্থা বাংলাদেশে নেই।’

নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা নিয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এখন নির্বাচনের দিকে চলে যেতে হবে। যেকোনো উপায়ে আমাদের নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচনে অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে আমরা আনসার ব্যবহার করব। এ ছাড়া বিজিবি আছে, সেনাবাহিনী আছে। নির্বাচন কমিশন যাকে প্রয়োজন মনে করবে, তাকে কাজে লাগাবে। আমাদের যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে।’

বিএনপির সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের সংলাপ বা কোনো আলোচনা হবে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘মানুষ হত্যা করলে তার সঙ্গে বসা যায় না। আমরা সবসময়ই বলেছি, যেকোনো বিষয় নিয়ে কথা বলতে আমাদের দ্বার উন্মুক্ত। কিন্তু সেটা হতে হবে সংবিধান অনুযায়ী। সংবিধানে যেভাবে আমাদের বেঁধে দিয়েছে তার মধ্যে থেকেই আলোচনা করতে হবে। তারা নির্বাচনের আগের দিনও আলোচনায় এলে আমরা বসতে রাজি আছি। কিন্তু সেটি সংবিধান অনুযায়ী হতে হবে।’

বিএনপির আরও সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘বড় ধরনের রাজনীতিবিদরা বড় ধরনের কাজ করছেন না। তারা ২০১৩ সালে সহিংসতা করেছেন, ২০১৪ সালে করেছেন, ২০১৫ সালে করেছেন। তারা ২০০৮ সালে ৩০টি সিট (সংসদীয় আসন) পেয়েছেন, ২০১৮ সালে এসে ৬/৭টি সিট পেয়েছে। তারা সুনিশ্চিত, কোনোদিন জনগণ তাদের ভোট দেবে না। সে জন্য তারা এ ধরনের অপপ্রয়াস ও ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তাদের ভাবনা, জ্বালাও-পোড়াও করে যদি একটা কিছু করা যায়।’

সম্প্রতি সমাবেশ, হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের আইনের হাতে সোপর্দ করছে। তারা নির্দোষ প্রমাণ হলে বেরিয়ে আসবেন। বিচারকরা বিজ্ঞতা অনুযায়ী তাদের জামিন দেবেন। কিন্তু যারা ধ্বংসযজ্ঞ চালায় কিংবা হুকুম দেয় কিংবা এসব করার প্রেক্ষাপট তৈরি করে দেয়, তারা তো দায় এড়াতে পারে না। সে কারণেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ধরতে বাধ্য হয়েছে।’ এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।

এদিকে নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে, সুনির্দিষ্টভাবে ৫ বা ৬ জানুয়ারি ভোটের তারিখ রেখে আগামী সপ্তাহেই নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কমিশন সূত্র জানাচ্ছে, ৯ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কমিশন সৌজন্য সাক্ষাতের পর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ চূড়ান্ত করবে।

এদিকে নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ ডাকা সংলাপে অনেক রাজনৈতিক দলই জানিয়েছে দেশে নির্বাচনি পরিবেশ নেই। তবে তাদের সেই কথা আমলে না নিয়েই কমিশন তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তুতি যা-ই থাকুক না কেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে ধরে নিয়েই সব প্রস্তুতি চলছে।

সারাবাংলা/জেআর/টিআর

রাজনীতি সংবিধান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর