Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজধানীতে বিএনপি ও সমমনা জোটের মিছিল-পিকেটিং

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৮ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:৫৮

ঢাকা: সহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার অভিযোগে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতার এবং কারাগারে পাঠানোর পর বাকিরা রয়েছেন আত্মগোপনে। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এবং যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা জোট ও রাজনৈতিক দলের নেতারা মিছিল-পিকেটিং চালিয়ে যাচ্ছেন।

সারাদেশে তৃতীয় দফার ৪৮ ঘণ্টার সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি প্রথম দিন বুধবার (৮ নভেম্বর) সকালে রাজধানী ঢাকার বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ১২ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীরা।

বিজ্ঞাপন

এ সময় তারা বলেন, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশে লাখ লাখ নিরস্ত্র মানুষের ওপর পুলিশ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের অতর্কিত হামলা, গুলি এবং সাউন্ড গ্রেনেড চার্জ করে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ পণ্ড করার ঘটনা ইতিহাসের জঘন্যতম নজীর। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ দেশে এবং বিদেশে তার অগণতান্ত্রিক অবিবেচক ফ্যাসিস্ট রূপ স্পষ্ট করেছে। নিজেদের প্রশ্নবিদ্ধ ও বিশ্বাসঘাতক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে।

নেতারা বলেন, ‘নিশ্চিত পতন ঠেকানোর সব কৌশলে ব্যর্থ হয়ে শেখ হাসিনার সরকার বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় সব নেতাকে গ্রেফতার করে আত্মতুষ্টি বোধ করছে। তারা বুঝতে পারছে না দেশবাসী ও দুনিয়ার মানুষের কাছে কতটা হেয় প্রতিপন্ন ও অগ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছেন তারা। এই দুটি ঘটনার মধ্যে আওয়ামী সরকারের পতনের বীজ রোপিত হয়েছে। যেটা অচিরেই বুঝতে পারবে।’

তারা আরও বলেন, ‘দমন-পীড়ন চালিয়ে একটি জাতিকে দমিয়ে রাখা যায় না। বিরোধী দলকে জেলে ভরে ফাঁকা মাঠে নির্বাচন করে জয়লাভ করার স্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগ। আর জনগণ তাদের পতনের ক্ষণ গণনা শুরু করেছে। অচিরেই প্রমাণ হবে কে বিজয়ী হবে। আওয়ামী লীগ নাকি জনগণ? সভ্যতা-ভব্যতার সকল রীতিনীতিবোধ হারিয়ে ভয়ংকর দানব হয়ে ওঠা হাসিনা সরকার ও আওয়ামী লীগ ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হওয়ার পরিণতি নিজেরাই নির্ধারণ করে ফেলেছেন।’

বিজ্ঞাপন

মিছিলপূর্ব সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২দলীয় জোটের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাতীয় পার্টির (জাফর) প্রেসিডিয়াম মেম্বার নওয়াব আলী আব্বাস খান, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সিনিয়র সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, জাগপার সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন প্রধান, বাংলাদেশ এলডিপির অতিরিক্ত মহাসচিব তমিজউদ্দিন টিটু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আবুল বাশার, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব নুরুল কবির পিন্টু, আব্দুল্লাহ আল হাসান সাকিব, আবু হানিফ, জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব কাজী নজরুল, হান্নান আহমেদ খান বাবলু, বাংলাদেশ জাতীয় দলের ভাইস চেয়ারম্যান সারোয়ার আলম, শামসুল আহাদ, আবুল মনসুর, লেবার পার্টির যুগ্ম মহাসচিব শরিফুল ইসলাম, ইসলামী ঐক্য জোটের যুগ্ম মহাসচিব ইলিয়াস রেজা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি জাকির হোসেন, আতাউর রহমান, যুব জাগপার সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবলু, জাতীয় ছাত্রসমাজের সভাপতি ফয়েজ আহমেদ ও ছাত্র জমিয়তের সভাপতি আদনান আহমেদ প্রমুখ।

অবরোধ সফল করতে দুপুর ১২টায় রাজধানীর নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে মিছিল বের করে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। মিছিলটি বিজয় নগর আলরাজি ভবনের সামনে দিয়ে পল্টন মোড় ঘুরে ফের নাইটিঙ্গেল মোড় হয়ে পল্টন মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

এলডিপির ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহে আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে মিছিলে অংশ নেন এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. নেয়ামূল বশির, যুগ্মমহাসচিব বিল্লাল হোসেন মিয়াজিসহ প্রমুখ।

মিছিল পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এলডিপির ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহে আলম চৌধুরী বলেন, ‘আসুন, আমরা একসঙ্গে সমবেত হয়ে একটা দুর্ভেদ্য উত্তাল আন্দোলন গড়ে তুলি। আওয়ামী লীগের এই কর্তৃত্ববাদী, লুটেরা সরকারকে সরিয়ে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করি। কোনো আপস নয়, ফয়সালা হবে রাজপথে।’

বিএনপির ডাকা অবরোধ কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানিয়ে কালো পতাকা মিছিল করে এবি পার্টি। মিছিলটি পল্টন, সেগুনবাগিচা, বিজয় নগরসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ‘বিজয়-৭১ চত্বরে’ গিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়।

এবি পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক বিএম নাজমুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে দলের সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘সরকার একতরফা প্রহসনমূলক নির্বাচন আয়োজন করার জন্য বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার-নির্যাতন চালিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে সরকার। প্রতিদিনই বিরোধী দলের কর্মসূচিতে সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা হামলা ও সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে। উপ-নির্বাচনগুলোতে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকলেও প্রকাশ্য নৌকায় সিল দিয়ে ভোটের অংশগ্রহণ বাড়াতে তারা চরম নির্লজ্জতার পরিচয় দিচ্ছে।’

তিনি বরেন, ‘এ অবস্থায় প্রহসনের নির্বাচনের পথে পা বাড়ালে বা তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে দেশকে আরও অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিলে উদ্ভুত পরিস্থিতির দায় নির্বাচন কমিশনকে বহন করতে হবে।’

মিছিল পরবর্তী সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, সিনিয়র সহকারী সদস্যসচিব আনোয়ার সাদাত টুটুল, যুবপার্টির আহ্বায়ক এবিএম খালিদ হাসান, মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আলতাফ হোসাইন, কেন্দ্রীয় সহকারী সদস্যসচিব এম আমজাদ খান, যুবপার্টির সদস্যসচিব শাহাদাতুল্লাহ টুটুল, মহানগর উত্তরের সদস্যসচিব ফিরোজ কবির, মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সদস্যসচিব আহমেদ বারকাজ নাসির, কেফায়েত হোসেন তানভীর, যুবপার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক তোফাজ্জল হোসেন রমিজ, সহকারী অর্থ সম্পাদক সুমাইয়া শারমিন ফারহানা, উত্তরের সদস্যসচিব শাহিনুর আক্তার শীলা, মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হালিম নান্নু, নারী নেত্রী রুনা হোসাইন, আজিজা সুলতানা, ছাত্রনেতা ফজলে এলাহী মোহন, হাসিবুর রহমান খান ও সারাফ আঞ্জুমান বিভা প্রমুখ।

এদিকে পুরান ঢাকার ইসলামপুরে বিক্ষোভ মিছিল করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রদল। মিছিলের নেতৃত্ব দেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লা। মিছিলটি ইসলামপুর এবং পাটুয়াটুলী রোড প্রদক্ষিণ করে সদরঘাট মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

মিছিল শেষে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রাজপথে থেকে যেকোনো কর্মসূচি বাস্তবায়নের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ব্যাক্ত করেন।

মিছিলে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি মিলাদ উদ্দিন ভূঁইয়া এবং মাহমুদ সর্দার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুসাব্বির মিল্লাত, পাটোয়ারী, সুমন সরদার, জাফর আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান রুমি, প্রচার সম্পাদক শাখাওয়াতুল ইসলাম পরাগ প্রমুখ।

সারাবাংলা/এজেড/এনএস

বিএনপি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর