মেয়রের হুঁশিয়ারি, তবু গরুর মাংস ৫০০ টাকা
১৮ মে ২০১৮ ১২:৩৬
।। উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: রমজান শুরুর আগে মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেই গরু-খাসির মাংসের দাম নির্ধারণ করে দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন। এর চেয়ে বেশি দামে মাংস বিক্রির জন্য আইনি ব্যবস্থাও হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।
তবে মেয়রের এই হুঁশিয়ারিতে কাজ হয়নি। রমজানের প্রথম দিনেও রাজধানীর বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে প্রতিকেজি ৫০০ থেকে ৫২০ টাকায়; কোথাও কোথাও ৫৫০ টাকা কেজিতেও বিক্রি হয়ে গরুর মাসং। আর খাসির মাংসও বিক্রি হতে দেখা গেছে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে। বিক্রেতাদের অনেকেই বলছেন, নির্ধারিত দামের নোটিশ তারা পাননি।
শুক্রবার (১৮ মে) রমজানের প্রথম দিন রাজধানীর নাজিরা বাজার, সূত্রাপুর বাজার, নারিন্দা, কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার, মিরপুর ৬ নম্বর বাজার ও উত্তরা সিটি করপোরেশন বাজারে মেয়রের নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে মাংস বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এর আগে, রমজানে মাংসের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত ১৪ মে মাংস ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করেন ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন। বৈঠকের পর মেয়র জানান, রোজার মাসে প্রতিকেজি দেশি গরুর মাংস ৪৫০ টাকা; বিদেশি গরু ও মহিষের মাংস ৪২০ টাকা এবং ভেড়া, ছাগল ও খাসির মাংস বিক্রি হবে ৭২০ টাকা কেজি দরে। এর চেয়ে বেশি দামে কেউ মাংস বিক্রি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হবে।
ওই বৈঠকের পর সাঈদ খোকন বলেন, ‘এ বছরের মাংসের দাম গত বছরের চেয়ে ২৫ টাকা কম। এই দামই সর্বোচ্চ দাম হিসেবে বিবেচিত হবে। এর আগে বিভিন্ন সময় অভিযোগ আসে, সিটি করপোরেশনের মূল্য তালিকা না মেনে নির্ধারিত দামের চেয়ে বাড়তি দামে মাংস বিক্রি করেন অনেকে। তাদের আমরা আইনের মধ্যে নিয়ে আসব।’ মাংসের এই দাম পুরো ঢাকার জন্য প্রযোজ্য বলে জানান মেয়র।
শুক্রবার কথা হয় রাজধানীর কয়েকটি বাজারের মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। তারা বলছেন, প্রথম রোজার আগের তিন দিন অনেক ক্রেতাই রমজান মাসের প্রয়োজন অনুযায়ী মাংস কিনেছেন। কেউ ১০ কেজি, কেউ ২০ কেজি, কেউ ৮ কেজি, কেউ ৫ কেজি করে মাংস কিনেছেন। আজ শুক্রবার হলেও গরুর মাংসের চাহিদা থাকবে। প্রতিকেজি গরুর মাংস ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
পুরান ঢাকার অন্যতম বড় মাংসের দোকান নাজিরা বাজারের ‘মোহসীন মাংস বিতান’। প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫টি গরু জবাই করা হয় এই দোকানে। দোকানের কর্মচারী আব্দুল হালিম শুক্রবার সকালে সারাবাংলা’কে বলেন, ‘৪৫০ টাকা মাংস বিক্রির আদেশ আমরা পাইনি। মালিক আমাদের ৫০০ টাকা দামে বিক্রি করতে বলেছেন, আমরা সেই দামেই বিক্রি করছি। আমাদের ৪৫০ টাকা বিক্রি করতে বললে আমরা ওই দামেই মাংস বিক্রি করব।’
দোকানটির সামনে দাঁড়িয়েছিলেন ক্রেতা মামুনুর রশিদ। তিনি অভিযোগ করেন, ‘৪৫০ টাকা কেজিতে মাংস বিক্রির কথা ছিল। কিন্তু কিনতে হলো ৫০০ টাকা কেজিতে। কোথায় সিটি করপোরেশনের লোক, এখানে এসে দেখে যান।’ তিনি বলেন, ‘আমি ৪৫০ টাকা দামের কথা বলেছিলাম। উত্তরে দোকানি বলেছে, মাথার মাংস কিনে নিয়ে খান। ওটার দাম ৩৫০ টাকা কেজি!’
সুত্রাপুরের মাংস ব্যবসায়ী বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘মাংসের চাহিদা আছে, ক্রেতারা ৫০০ টাকাতেই কিনবে। খামোখা কমদামে বিক্রি করব কেন? তাছাড়া সমিতির পক্ষ থেকে কেউ ৪৫০ টাকা বিক্রির কথা বলেনি।’ পাশেই ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে খাসির মাংস। তারাও রমজানে মাংসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানেন না তারাও।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কোনো মাংসের দোকানেই সিটি করপোরেশন নির্ধারিত দামের তালিকা লাগানো হয়নি। বিক্রেতারা যার কাছে যেমন পারছেন, বিক্রি করছেন। আবার দেশি-বিদেশি গরুও আলাদা করা নেই। সব গরুর মাংসেরই দাম এক। মহিষের মাংস আলাদা করে বিক্রির কথা বলা থাকলেও কোথাও মহিষের মাংস বিক্রি হচ্ছে বলে শোনা যায়নি। মহিষের মাংসকে গরুর মাংস হিসেবে চালানো হয় বলে অভিযোগ আছে বাজারে।
ক্রেতাদের অভিযোগ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খাসির মাংসে ভেজাল দেওয়া হয়। বকরি-ছাগল জবাই করে সেটা খাসির মাংস হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হয়। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মাংস ব্যবসায়ী সমিতি।
জানতে চাইলে মাংস ব্যবসায়ী সতিতির সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম বলেন, ‘রাজধানীতে কেউ বেশি দামে মাংস বিক্রি করতে পারবেন না। সবাইকে বলা হয়েছে। আর কেউ বিক্রি করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
হুঁশিয়ারির পরও রাজধানীতে বেশি দামে মাংস বিক্রি হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রথম রোজা থেকে ২৬ রোজা পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের নির্ধারণ করা দামেই ব্যবসায়ীদের মাংস বিক্রি করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে অভিযানের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া হবে। এরই মধ্যে র্যাব, পুলিশ, জেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন, বিএসটিআই, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সবাইকে এ বিষয়ে বলা হয়েছে।’ নিজস্ব মনিটরিং সেলের মাধ্যমেও বাজার তদারকি করা হচ্ছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
প্রথম রোজার সকাল থেকেই বেশি দামে মাংস বিক্রি হলেও অভিযান চালানো হচ্ছে না কেন— এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএসসিসির এই কর্মকর্তা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে জুমার নামাজের পর রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালানোর কথা রয়েছে।
সারাবাংলা/ইউজে/টিআর