Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘মাতারবাড়িই হবে দক্ষিণ এশিয়ার সিঙ্গাপুর’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৯ নভেম্বর ২০২৩ ১৯:২৩

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বঙ্গোপসাগরের তীরে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়িতে নির্মাণ করা গভীর সমুদ্রবন্দরকে সিঙ্গাপুরে পরিণত করতে সরকারের পক্ষ থেকে সবকিছু করা হবে বলে জানিয়েছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) কক্সবাজারের মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর পরিদর্শনের সময় তিনি এ কথা জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাতারবড়িকে পুরো বিশ্বের সঙ্গে পরিচয় করে দিয়েছেন জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মাতারবাড়ি বন্দরের আবিষ্কারক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা কেউ চিনতাম না মাতারবাড়ি। প্রধানমন্ত্রীই কিন্তু এ মাতারবড়িকে বাংলাদেশের সঙ্গে পরিচয় করে দিয়েছেন। শুধু বাংলাদেশ নয়, তাবৎ দুনিয়ার সবাই জানছে যে বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রবন্দর হচ্ছে মাতারবাড়ি। সে মাতারবাড়ি চ্যানেল হয়ে গেছে, সেটা তিনি উদ্বোধন করবেন। পাশাপাশি প্রথম টার্মিনালের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করবেন। মাতারবাড়ী এখন দৃশ্যমান। উনি (প্রধানমন্ত্রী) ১১ নভেম্বর আসবেন। সেটা উদ্বোধন করবেন।’

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আরও বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি বাংলাদেশকে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত গভীর সমুদ্রবন্দর উপহার দিয়েছেন। এ সমুদ্রবন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শুধু শক্তিশালী করবে না, প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেন— সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার যে তার দৃষ্টিভঙ্গী, সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক ও কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়— এ মাতারবাড়ি তার এই দৃষ্টিভঙ্গীর একটি সিম্বল হয়ে দাঁড়াবে। মাতারবাড়ির সুবিধা আশপাশের বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো নিতে পারবে।’

বিজ্ঞাপন

নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, মাতারবাড়ীকে সিঙ্গাপুরে পরিণত করতে সবকিছু করা হবে। ছবি: সারাবাংলা

‘বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, দুই থেকে তিন বিলিয়ন ডলার এখানে যুক্ত হবে। সিঙ্গাপুর-কলম্বো থেকে যে লাইটারিং করা হচ্ছে, তা ১০ থেকে ২০ শতাংশ কমে যাবে। ফলে খরচ কমে যাবে। কাজেই এটি বিরাট ভূমিকা রাখছে। এ সমুদ্রবন্দরের কারণে চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা বন্দরে নতুনভাবে চাঞ্চল্য তৈরি হবে। এ চাঞ্চল্য ভুটান, নেপাল, ভারতসহ আশপাশের দেশগুলোতে ছড়িয়ে যাবে,’— বলেন খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দর বাংলাদেশের অর্থনীতির নতুন দিগন্ত মন্তব্য করে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মাতারবাড়ি হচ্ছে বাংলাদেশের আগামী অর্থনীতির একটি নতুন দিগন্ত। এ গভীর সমুদ্রবন্দর ঘিরে এ এলাকায় একসময় শহর হবে, শিল্পাঞ্চল হবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ দেশান্তর থেকে লোকজন আসবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের একটি সমৃদ্ধির জায়গা হবে।’

‘আপনারা সাংবাদিক বন্ধুরাই প্রথমে বলেছিলেন— এটি হতে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার সিঙ্গাপুর। সেটিরই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার জন্য শনিবার (১১ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী এখানে আসছেন,’— বলেন তিনি।

আঞ্চলিক রাজনীতিতে গভীর সমুদ্রবন্দর নিয়ে কোনো টানাপোড়নের শঙ্কা রয়েছে কি না— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমরা সেটি মেনে চলি। একটি পরিবারের মধ্যেও টানাপোড়ন থাকে। কিন্তু সেটা উতরিয়ে নিয়ে যাওয়াটাই পরিবারের অভিভাবকের কাজ। প্রধানমন্ত্রী এমন একজন রাষ্ট্রনায়ক যার দেশ পরিচালনার যোগ্যতা শুধু বাংলাদেশকে নয়, তাবৎ দুনিয়াকে নাড়া দিয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত মঞ্চ। ছবি: সারাবাংলা

প্রধানমন্ত্রীর এমন গুণের কারণেই বাংলাদেশ এখন শ্রদ্ধা ও সম্মানের একটি জায়গা তৈরি করে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ। বলেন, ‘যত সংকট বা টানাপোড়ন থাকুক না কেন, তিনি সেখান থেকে দেশ ও জাতিকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে উদ্ধার করেছেন। সব টানপোড়নের মধ্যেই মাতারবাড়ি হতে যাচ্ছে। এটাই হবে আঞ্চলিক ব্যবসা-বাণিজ্যের একটি হাব।’

মাতারবাড়ির সঙ্গে সড়ক ব্যবস্থাপনার কাজের অগ্রগ্রতির বিষয়ে জানতে চাইলে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘রাতারাতি কখনো কিছু হয় না। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের যে প্রকল্প, এর সঙ্গে সড়কের কাজও যুক্ত আছে। ১৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে মাতারবাড়ী পোর্ট ও রোড দুটো সমানভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। এখানে কোনো বাধা নেই।’

‘টার্মিনাল ও রোড একই সময়ে দৃশ্যমান দেখবেন। কক্সবাজারে রেললাইন যাবে, কেউ ভাবেনি। প্রধানমন্ত্রী ভেবেছেন। মাতারবাড়ীও ভবিষ্যতে রেললাইনে যুক্ত হবে। মাল্টি মডার্ন কানেকটিভিটি করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী বাস্তবে দেখিয়ে দিয়েছেন। সিঙ্গাপুর করার জন্য যা যা দরকার সবকিছু এ মাতারবাড়িতে হবে,’— মন্তব্য প্রতিমন্ত্রীর।

অর্থায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক শক্তিশালী। কোভিড, ইউক্রেন যুদ্ধ কোনো কিছুই আমাদের পরাস্ত করতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো রাষ্ট্রনায়ক যে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকেন সে দেশের মানুষ, সে দেশ কখনো সংকটে পড়বে না।’

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর দেশের জিডিপির ২ থেকে ৩ শতাংশ অবদান রাখবে। ছবি: সারাবাংলা

বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহায়েল বলেন, ‘তিন বছরের মধ্যে এ টার্মিনাল ও রাস্তা দৃশ্যমান দেখবেন। আমরা আশা করছি এর মধ্যেই বন্দরের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম শুরু করতে পারব। এখানে দুটি টার্মিনাল আছে। বছরে ১১ মিলিয়ন কার্গো হ্যান্ডলিং করতে পারব। দেশের জিডিপির দুই থেকে তিন শতাংশ এখান থেকে যুক্ত হবে। সার্বিকভাবে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ খরচ কমে যাবে। সারাবিশ্বে আমাদের রফতানি ও আমদানি সহজ হয়ে যাবে। কলম্বো বা মালয়েশিয়ার বন্দরগুলোতে আর উঠতে হবে না। লোডিং-আনলোডিং খরচ কমে যাবে। এটি শুধু বাংলাদেশ না , পুরো দক্ষিণ এশিয়ার জন্য একটি আনন্দের বিষয়। একটি সুসংবাদ।’

‘বাংলাদেশে প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর হতে যাচ্ছে। এখানে একসঙ্গে চারটি জাহাজ ভিড়তে পারবে। ১৮ মিটার ড্রাফটের জাহাজ এখানে আসতে পারবে। জোয়ারে আরও দুই মিটার বাড়বে। এক লাখ মেট্রিক টন ও ১০-১৫ হাজারের টিউইজ কনটেইনারের যে মাদার ভ্যাসেল এ বন্দরে অনায়াসে ভিড়তে পারবে,’— বলেন বন্দর চেয়ারম্যান।

নির্মাণকাজে কোনো চ্যালেঞ্জ নেই জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এখানে জাপানিজরা আছে। জাইকা আছে। তাদের প্রযুক্তি অনেক ভালো। সব মডার্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। একটি চযানেল কিন্তু তৈরি হয়ে গেছে। একটি বন্দরের মূল বিষয় থাকে চ্যানেল। এটা সুন্দরভাবে তৈরি হয়েছে। বাকি টার্মিনাল করা এটা তেমন কঠিন বিষয় না।’

‘জাপানি প্রযুক্তির মাধ্যেমে এ টার্মিনালটি খুব সুন্দরভাবে তৈরি করতে পারব। চট্টগ্রাম বন্দরে যে জাহাজ ঢুকতে পারে তার থেকে তিন গুণ বড় জাহাজ এখানে আসতে পারবে। সেক্ষেত্রে খরচ কমবে। সময়ও অর্ধেক লাগবে। এ গভীর সমুদ্রবন্দরের মাধ্যেমে আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোও অনেক লাভবান হবে। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে মাতারবাড়ীতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।’

সারাবাংলা/আইসি/টিআর

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী গভীর সমুদ্রবন্দর টপ নিউজ নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী বন্দর কর্তৃপক্ষ মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

চট্টগ্রামে খালে ভাসছিল অর্ধগলিত লাশ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:৩৩

বিএসইসি‘র চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:৫১

সম্পর্কিত খবর