নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়: দেড় বছরেও হয়নি প্রাচীর, অনিরাপদ ক্যাম্পাস
১০ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:১৩
ময়মনসিংহ: প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর পর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাককানইবি) শুরু হয়েছিল সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ। তবে দেশের আরও শত শত প্রকল্পের মতো এই কাজও শেষ হয়নি সময়মতো। এক বছরের মধ্যে নির্মাণ হওয়ার কথা ছিল সেই প্রাচীরের। তবে দেড় বছরেও সে কাজ শেষ হয়নি। এ অবস্থায় প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে আরও ৯ মাস।
নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও প্রাচীর নির্মাণ শেষ না হওয়ার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দায়ী করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি, নিচু জায়গায় সঠিক সময়ে মাটি ভরাট না করা ও যথাযথ তদারকির অভাবকে। অন্যদিকে সীমানা প্রাচীর না থাকায় বহিরাগতদের ‘উৎপাত’ শুরু করে চুরি পর্যন্ত নানা ঘটনায় ক্যাম্পাস অনিরাপদ হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। যত দ্রুতসম্ভব সীমানা প্রাচীরের নির্মাণকাজ শেষ করার দাবি তাদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বলছেন, সীমানা প্রাচীরের কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় ক্যাম্পাসে অবাধে প্রবেশ ঘটছে বহিরাগতদের। মাদক সেবন, বেপরোয়াভাবে বাইক রাইডিং, ইভটিজিংয়ের মতো বিভিন্ন ঘটনা ঘটছে। এমনকি শিক্ষকদের কক্ষ থেকে পরীক্ষার খাতা ও নথিপত্র, শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ও একাডেমিক ভবন থেকে চেয়ার-টেবিল, এমনকি নির্মাণাধীন স্থান থেকে রড-সিমেন্ট চুরির মতো ঘটনাও ঘটছে। সার্বিকভাবে ক্যাম্পাস হয়ে উঠেছে নিরাপত্তাহীন।
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক শাখা থেকে জানা যায়, দুই কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫০০ মিটার দীর্ঘ সীমানা প্রাচীর নির্মাণ প্রকল্পটির কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সোহেল এন্টারপ্রাইজ। ২০২২ সালের ৩১ মার্চ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন জাককানইবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর।
প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল এ বছরের মার্চে। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ ৯ মাস বাড়িয়ে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে সেই মেয়াদেরও সাত মাস পেরিয়ে গেছে। এখন বর্ধিত মেয়াদের মাত্র দুই মাস বাকি থাকলেও সীমানা প্রাচীরের নির্মাণকাজ এখন বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিনে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকার সীমানায় বড় পুকুর থাকায় সেখানে কোনো ধরনের কাজ শুরু করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। একই অবস্থা নতুন বিজ্ঞান ভবনের পেছনের অংশেও। জলাবদ্ধতার কারণে সেদিকেও কোনো কাজ শুরুই হয়নি। আর কেন্দ্রীয় মসজিদের পেছনের দিকে পিলারের কাজ শেষ হলেও বাকি কাজ অসম্পূর্ণই রয়ে গেছে। বাকি জায়গাগুলোর মধ্যে বেশ কিছু অংশে ইটের গাঁথুনি দেওয়া হলেও প্লাস্টারের কাজ এখনো বাকি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বলেন, সীমানা প্রাচীর না থাকায় হল থেকে জিনিসপত্র চুরি যাওয়া নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া বহিরাগতরা যেভাবে বাধাহীনভাবে ক্যাম্পাসে প্রবেশ ও ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পায়, তাদের সঙ্গেও শিক্ষার্থীদের প্রায়ই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে থাকে। এগুলো থেকে নিস্তার পেতে হলে সীমানা প্রাচীরটির নির্মাণকাজ শেষ করা জরুরি।
এদিকে ক্যাম্পাসের পূর্ব দিকে চারুদ্বীপ এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তাসহ স্থানীয় অনেকের বসবাস। তাদের যাতায়াতের জন্য সেখানেও কিছু জায়গায় সীমানা প্রাচীর নির্মাণ না করে ফাঁকা রাখা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক সারাবাংলাকে বলেন, ‘যেসব শিক্ষক-কর্মকর্তা এখন প্রশাসনের বিভিন্ন দায়িত্বে রয়েছেন, তাদের কারও বাড়ি, কারও জমি রয়েছে চারুদ্বীপের ওই এলাকাটিতে। নিজেদের চলাচলের সুবিধার জন্য তারা জায়গাটিকে অরক্ষিত রেখেছেন। তারা প্রশাসনের দায়িত্বে থাকাকালে চারুদ্বীপের এই ফাঁকা জায়গাটি বন্ধ হবে বলে মনে হয় না।’
কাজ আটকে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক রাকিব হাসান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানার বেশ কিছু জায়গায় পুকুর ও জলাবদ্ধতা রয়েছে। এ কারণে আমাদের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ আটকে আছে। নিচু ও পানি থাকা জায়গায় মাটি ভরাট করে দেওয়ার কাজ প্রকল্প কার্যালয়ের। মাটি ভরাট করে দিলে আমরা দ্রুতই কাজটি শেষ করতে পারব।’
জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. জোবায়ের হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সীমানার কিছু অংশ বেশি নিচু জায়গায় হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত জলাবদ্ধতা এবং সেসব জায়গায় মাটি নেওয়ার কোনো রাস্তা না থাকায় মাটি ভরাট করতে দেরি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে তারা কাজটি তদারকি করছেন। আগামী ডিসেম্বরে কাজটি শেষ হবে বলে আশা করছি।’
তবে মাটি ভরাটের সেই কাজও ঠিকঠাকমতো হচ্ছে না। দায়িত্বরত নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম জহিরুল হাসান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আগের ঠিকাদার চুক্তি অনুযায়ী মাটি ভরাটের কাজ শেষ করেছে। নতুন করে একটি প্রকল্পের ঠিকাদারকে বলা হয়েছে মাটি ভরাট করে দেওয়ার জন্য। শুনেছি সেও করতে চাচ্ছে না। মাটি কে ফেলবে না ফেলবে এটি ঠিক করা আমার দায়িত্ব নয়। এটি প্রকল্প পরিচালক বলতে পারবেন। আমার কাজ হচ্ছে কার্যক্রম শুরু হলে সেটির তদারকি করা।’
নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সীমানা প্রাচীরের নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জি। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দ্রুতসময়ে সীমানা প্রাচীরের কাজ শেষ করা প্রয়োজন।’
সারাবাংলা/টিআর
ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জাককানইবি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সীমানা প্রাচীর