‘জুম্ম জাতীয় শোক দিবস’ পালন
১০ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:৩৪
রাঙ্গামাটি: পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার (এমএন লারমা) ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী ও ‘জুম্ম জাতীয় শোক দিবস’ পালন করেছে জনসংহতি সমিতি। সংগঠনটির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির উদ্যোগে শুক্রবার (১০ নভেম্বর) সকালে প্রভাতফেরি, মহান নেতা ও জাতীয় বীরদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন এবং স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়।
জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জেএসএস জেলা কমিটির সভাপতি গঙ্গা মানিক চাকমার সভাপতিত্বে ও ছাত্র ও যুববিষয়ক সম্পাদক জুয়েল চাকমার সঞ্চালনায় স্মরণ সভার প্রধান আলোচক ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার। আরও বক্তৃতা করেন- বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শিশির চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মনি চাকমা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) সভাপতি নিপন ত্রিপুরা প্রমুখ।
সভায় শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন জনসংহতি সমিতি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নগেন্দ্র চাকমা। শোক প্রস্তাবের পর দুই মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এদিকে, এমএন লারমার ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শিল্পকলা একাডেমি চত্বরের অস্থায়ী বেদিতে ফুল দিয়ে শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়েছে রাঙ্গামাটির বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও।
ঊষাতন তালুকদার বলেন, ‘আমাদের প্রিয় নেতাকে হত্যা নিছক হত্যাকাণ্ড নয়, জুম্মদের আন্দোলনকে হত্যা করার প্রচেষ্টার সমান। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা যুক্ত রয়েছে। জুম্মরা পশ্চাৎপদ, শক্তিহীন হতে পারে কিন্তু ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করলে আমাদের ন্যায্য আন্দোলন অবশ্যই অর্জন করা সম্ভব। জনসংহতি সমিতি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন চায় না বিষয়টি সঠিক নয়, জনসংহতি সমিতি চুক্তি বাস্তবায়ন চায়। আমরা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছি, এর বেশি কিছু চাই না।’
তিনি বলেন, ‘চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে মিথ্যাচার করবেন না। চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো অবাস্তবায়িত অবস্থায় রয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন করে দিন। চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য জনসংহতি সমিতির পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শিশির চাকমা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম আদিকাল থেকে হতে জুম্মরা তাদের নিয়তি ও ভাগ্যকে স্বীকার করে আসছিল। কিন্তু ষাটের দশকের পর হতে লারমা অনুভব করেছিলেন জুম্মদের ভাগ্য ও নিয়তি আমাদেরকেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বসবাসরত ১৪টি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীকে একটি ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তিনি (এমএন লারমা) জুম্ম জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করেছেন।’
প্রসঙ্গত, ১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলায় প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হন তৎকালীন শান্তি বাহিনী ও জনসংহতি সমিতির নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (এমএন লারমা)। তার মৃত্যুর এই দিনটিকে প্রতিবছর ‘জুম্ম জাতীয় শোক দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে তারই সংগঠন জেএসএস।
এমএন লারমার এই মৃত্যুবার্ষিকী পালন করে থাকে ২০০৭ সালের দিকে জেএসএস ভেঙে গড়ে উঠা আরেক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা)। শুক্রবার সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলায় ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা)।
সারাবাংলা/পিডিএনআর/এনএস