রাজনৈতিক অস্থিরতায় পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই ধাক্কা রাঙ্গামাটিতে
১২ নভেম্বর ২০২৩ ১২:৪৭
রাঙ্গামাটি: পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই রাজনৈতিক অস্থিরতার ধাক্কা লেগেছে পাহাড়ের পর্যটন খাতে। বিএনপি-জামায়াতের ডাকা একদিনের হরতাল আর তিন দফা অবরোধে রাঙ্গামাটির পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্রগুলোর প্রায় সবই ফাঁকা। সড়ক পরিবহনে যাতায়াতে নিরাপত্তা ঝুঁকি, দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকার কারণে পর্যটকরা মোটেও পাহাড়মুখী হচ্ছেন না। এ পরিস্থিতিতে রীতিমতো খরা অবস্থা পাহাড়ের পর্যটনে— এমনটাই বলছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিন ‘সিম্বল অব রাঙ্গামাটি’ হিসেবে পরিচিত ঝুলন্ত সেতুতে গিয়ে দেখা গেছে, দর্শনার্থীর উপস্থিতি একেবারেই হাতেগোনা। টিকিট কাউন্টারে অলস সময় পারছেন বিক্রয়কর্মীরা। তারা বলছেন, সাধারণত বছরের এই সময়ে বিকেলের দিকে পর্যটকের উপস্থিতি থাকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। সে হিসাবে পর্যটক এখন নেই বললেই চলে। পর্যটক ও স্থানীয়দের পদচারণা কম থাকায় সেতুর সৌন্দর্যবর্ধন ও সংস্কারকাজ চালানো হচ্ছে বলে জানান তারা।
ঝুলন্ত সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রায় দেড় মাস কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ঝুলন্ত সেতুটি ডুবে ছিল। সেতুর ওপর থেকে পানির নেমে যাওয়ার পর থেকে পর্যটকদের সমাগম বাড়তে থাকে। তবে এখন দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতির কারণে পর্যটকরা আসছেন না। ফলে পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই ধাক্কা লেগেছে এই শিল্পে।
সাধারণত প্রতি বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে পরবর্তী বছরে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই সময়টাকেই পর্যটন মৌসুম বলা হয়ে থাকে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার স্থিতিশীলতা না আসা পর্যন্ত পাহাড়ের পর্যটনের এই বিপর্যয় কাটার আশঙ্কা কম। জানুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলে এবং এর আগ পর্যন্ত বিরোধী দলগুলো এমন হরতাল-অবরোধ চালিয়ে গেলে এ বছর পুরো মৌসুমই হয়তো এমন পর্যটকশূন্য থাকবে রাঙ্গামাটি।
এদিকে পর্যটকদের আগমনে ভাটা পড়ার প্রভাব পড়েছে ট্যুরিস্ট বোট, হোটেল-মোটেল ও টেক্সটাইলসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসাতেও। ট্যুরিস্ট বোট ভাড়া না হওয়ায় কাপ্তাই হ্রদেও পর্যটকদের ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে না। টেক্সটাইল মার্কেটেও নেই ক্রেতার দেখা।
রাঙ্গামাটি পর্যটন ট্যুরিস্ট বোট ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. রমজান আলী জানান, ‘আমাদের এখানে ১২০টির মতো ট্যুরিস্ট বোট রয়েছে। এখন পাহাড়ে পর্যটক খরার কারণে ট্যুরিস্ট বোটের চালক ও শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়ছেন। অনেকেই অন্য পেশায় যুক্ত হয়ে গেছেন। হরতাল-অবরোধে পর্যটক না এলেও সংসার তো চালাতে হবে। আমার মনে হয় দেশের এই রাজনৈতিক অস্থিরতার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত রাঙ্গামাটিতে আশানুরূপ পর্যটক পাওয়া যাবে না।’
ঝুলন্ত সেতুর টিকেট কাউন্টার কর্মকর্তা মো. সোহেল বলেন, ‘দেড় মাস কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ডুবে থাকার পর পানি নেমে যাওয়ায় পর্যটক ও স্থানীয়দের প্রবেশের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল ঝুলন্ত সেতু। শুরুর দিকে মোটামুটি ভালোই পর্যটক এসেছেন। কিন্তু হরতাল-অবরোধ শুরু হওয়ার পর পর্যটকরা আসছেন না। বলা যায় টিকিট বিক্রি একেবারে ডাউন হয়ে গেছে।’
স্থানীয় টেক্সটাইল পণ্যের ক্রেতার বেশির ভাগই পর্যটক। পর্যটকের সমাগম না হওয়ায় টেক্সটাইল পণ্য বিক্রিতেও পড়েছে ভাটা। দোকানিরা জানিয়েছেন, টেক্সটাইল পোশাক বিক্রি হচ্ছে না বললেই চলে।
রাঙ্গামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন তো পাহাড়ে পর্যটন মৌসুমের শুরু। আমরা এই সময়টাতে যেভাবে হোটেল-মোটেল বুকিং হবে বলে প্রত্যাশা করেছিলাম, সেই প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না। পর্যটকরা নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে রাঙ্গামাটির দিকে আসছেন না। অবরোধ কর্মসূচির মাঝে শুক্র-শনিবারসহ দুয়েকদিন অবরোধ না থাকায় কিছু পর্যটক আসছেন। তবে এই সংখ্যা খুবই সীমিত। আমাদের মৌসুমের শুরুতেই ব্যবসায়ে ধাক্কা লেগেছে। তবে আমরা প্রত্যাশা করি পর্যটকরা রাঙ্গামাটির সৌন্দর্য দেখতে আসবেন।’
রাঙ্গামাটি জেলা আবাসিক হোটেল বহুমুখী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মঈনুদ্দিন সেলিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের সমিতির অন্তর্ভুক্ত আবাসিক হোটেল ৫২টি। হরতাল-অবরোধে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় আমাদের অলস সময় কাটছে। এমন পরিস্থিতি চলমান থাকলে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবে পর্যটন শিল্প।’
রাঙ্গামাটি জেলা শহরের মতো পর্যটক খরা যাচ্ছে দেশের অন্যতম পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত মেঘ পাহাড়ের উপত্যকা সাজেক ভ্যালিতেও। সাজেক কটেজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিংথাং জাওয়া লুসাই (জেরি) সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাজেকে পর্যটক সমাগম অনেক কমে গেছে। হরতাল-অবরোধের প্রভাবে একেবারে শূন্য না হলেও খুবই কম পর্যটক আসছেন।’
সারাবাংলা/টিআর
পর্যটন খাত পর্যটন শিল্প পর্যটনে প্রভাব রাঙ্গামাটি রাজনৈতিক অস্থিরতা