Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘রাষ্ট্রীয় নিপীড়নে বিএনপির ২ কোটি নেতাকর্মী বাড়িছাড়া’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৩ নভেম্বর ২০২৩ ১৯:৩৫

ঢাকা: রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের কারণে প্রায় ২ কোটি বিএনপির নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী বর্তমানে বাড়িছাড়া। তারা বর্তমানে ক্ষেতে-খামারে মশারি টাঙিয়ে রাত্রীযাপন করছে। বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে এর আগে ও পরে ৬১৩টি মামলা দায়েরের মাধ্যমে বিরোধী দলীয় ১৩ হাজার ৩৮৬ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (১৩ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ১নং হলে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতারকৃত বিরোধী নেতাকর্মীদের মিডিয়া ট্রায়াল এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের ঢাকার একটি মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় গ্রেফতার দেখানোর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব কায়সার কামাল বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের পুনরুদ্ধার, আইনের শাসন কায়েম এবং সর্বোপরি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে গণতন্ত্রপন্থী মুক্তিকামী জনতা দেশের প্রধান বিরোধী দল- বিএনপির নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির ডাকে ঢাকার নয়াপল্টনে এক শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রযন্ত্রের পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক সেই শান্তিপূর্ণ সমাবেশে কীভাবে পন্ড করে দেওয়া হয়েছিল তা সমগ্র বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন গত ২৮ অক্টোবরের শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে এর আগে ও পরে ৬১৩টি মামলা দায়েরের মাধ্যমে বিরোধীদলীয় ১৩৩৮৬ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এই গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দেশ-বিদেশের প্রায় সকল মিডিয়াতে যা Commonly বলা হচ্ছে Crack Down on BNP। আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতারকৃত অনেক নেতাকর্মীকে রিমান্ডে এনে তথাকথিত ‘স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি’ আদায় করে বিভিন্ন মিডিয়াতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে। যা মিডিয়া ট্রায়ালেরই নামান্তর। এ কাজের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সরকারী দলের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। অথচ মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের দ্বৈত বেঞ্চ গত ২০১২, ২০১৫ এবং ২০১৯ সালের বিভিন্ন মামলায় রিমান্ড, গ্রেফতার ও পরবর্তী ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ না করার জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে এবং যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক অবশ্য পালনীয় বলে আমরা মনে করি। তা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক এই সমস্ত ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ দেশের প্রচলিত আইন এবং সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বটে।’

বিজ্ঞাপন

আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ সমস্ত বেআইনি মিডিয়া ট্রায়াল বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।

কায়সার কামাল আরও বলেন, “বিএনপির গত ২৮ অক্টোবরের শাস্তিপূর্ণ মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর প্রায় সব থানাতেই মামলা করা হয়। এর মধ্যে ২৯ অক্টোবরের পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় বিএনপির মহাসচিবসহ মোট ১৬৪ জন নেতাকর্মীর নামে উল্লেখ করা হয় এবং অজ্ঞাতের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। আমরা অবগত হয়েছি যে, পল্টন থানায় উক্ত মামলায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিএনপির অনেক দায়িত্বশীল নেতাদের ‘গ্রেফতার দেখানো’ হচ্ছে। কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া এ সব মামলায় গ্রেফতার দেখানো সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রণোদিত এবং হয়রানিমূলক। মৃত ব্যক্তিকে আসামি করা হচ্ছে। আইনজীবীদের জনপ্রিয় নেতা মো. সানাউল্লাহ মিয়া সাড়ে তিন বছর আগে মৃত্যুবরণ করলেও গত ২৮ অক্টোবরের ঘটনায় দায়েরকৃত একটি মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে। আমরা এ ধরণের বেআইনি, হীন কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক আরও বলেন, “গত ১০ নভেম্বর ব্রিটিশ প্রভাবশালী পত্রিকা The Guardian এ বাংলাদেশের বিরোধীদলগুলোর ওপর চলমান নিপীড়নের প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘Full prisons and false charges: Bangladesh opposition faces pre-election crackdown’ উক্ত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর হাতে নিপীড়ন নিগ্রহের এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি প্রজাতন্ত্রের পুলিশ বাহিনী কোনো অনির্বাচিত সরকারের বিরোধীদল দমনের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে না। একইসঙ্গে আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহবান জানাবো-দেশের প্রচলিত আইন, বিধি এবং সংবিধান অনুযায়ী স্বীয় দায়িত্ব পালনের জন্য। অন্যথায় আইন ও সংবিধান ভঙ্গকারী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কায়সার কামাল বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের কারণে প্রায় ২ কোটির মতো বিএনপির নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী বর্তমানে বাড়িছাড়া। ক্ষেতে-খামারে মশারি টাঙিয়ে তারা রাত্রী যাপন করছে। সরকারের মামলা-হামলায়ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা সৃষ্টি করতে পারেনি। বরং এতে সরকারি দলের দায়িত্বশীল নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল মা, মাটি ও মানুষের দল। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে সারা বাংলাদেশে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা গণতন্ত্রের জন্য, ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য চলমান আন্দোলনকে আরও বেগবান করবে।’

সারাবাংলা/কেআইএফ/একে

নিপীড়ন বিএনপি মামলা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর