Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

খোকন সেরনিয়াবাতের কাঁধে বরিশাল সিটির ২০০ কোটি টাকার দেনা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৪ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:৩৬

বরিশাল: আজ মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত) আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করছেন। তবে নগর উন্নয়নের পাশাপাশি দায়িত্ব গ্রহণের পর বেশকিছু সংকটের মুখোমুখি হতে পারেন তিনি। যে সমস্যাগুলো বরিশাল সিটি করপোরেশনের দীর্ঘদিনের পুরানো। বকেয়া বিদ্যুৎ ও ঠিকাদারি বিল এবং কর্মচারীদের বকেয়া বেতন-এই তিনটি খাতেই বরিশাল সিটি করপোরেশনের দেনা দুইশ কোটি টাকার বেশি।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে— বিসিসির বহু বছরের পুরানো সমস্যা বকেয়া বিদ্যুৎ বিল। ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানির বিদ্যুৎ সড়ক বাতি এবং বিভিন্ন পাম্প হাউজসহ নগর ভবন সংশ্লিষ্ট সব স্থাপনায় ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘ বছর ধরেই বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে উদাসীন সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে সিটি করপোরেশন এবং বিদ্যুৎ বিভাগের দ্বন্দ্বে নগরবাসীকে কয়েক দফা বিদ্যুৎবিহীন অন্ধকারেও থাকতে হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়ে যায় প্রয়াত শওকত হোসেন হিরন মেয়র থাকাকালীন। কিন্তু ওইসময় বিদ্যুৎ ব্যবহার বাড়লেও নিয়মিত বিল পরিশোধ হয়নি। এমনকি পরবর্তী মেয়র আহসান হাবিব কামালের সময়েও নিয়মিত বিল পরিশোধ না হওয়ায় বকেয়ার পরিমাণ বাড়তে থাকে। সদ্য সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর সময়ে বকেয়ার পরিমাণ ৬০ কোটি ছাড়িয়ে যায়। বকেয়া বিল পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় ২০২২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর এবং পরবর্তী চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি দুই দফা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বিদ্যুৎ বিভাগ। এর ফলে ওই সময় কয়েকদিন অন্ধকারে ছিল নগরবাসী। পরে কিস্তিতে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের শর্তে সংকট নিরসন হলেও বকেয়ার পরিমাণ আগের জায়গাতেই রয়েছে।

ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানির বরিশাল বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক হোসেন বলেন, ‘শুধুমাত্র আমার ডিভিশনেই সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ৩৫ কোটি টাকার ওপরে। আর আমাদের দুইটি বিভাগ মিলিয়ে বকেয়ার পরিমাণ ৬০ কোটির বেশি। সম্প্রতি সময়ে সিটি করপোরেশন কিছু বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেছে। কিন্তু তাতে বেশি একটা লাভ হয়নি। সারচার্জসহ বকেয়া সেই আগের জায়গাতেই রয়েছে। তাছাড়া এখন পর্যন্ত কোনো মেয়রই বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পুরোপুরিভাবে পরিশোধ করে যায়নি।’

বিজ্ঞাপন

তবে জমে থাকা বিদ্যুৎ বিল সবই তৎকালীন মেয়র শওকত হোসেন হিরন এবং আহসান হাবিব কামালের আমলের বলে জানিয়েছে নগর ভবনের হিসাব শাখার একটি দায়িত্বশীল সূত্র।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের তালিকাভুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় আড়াইশ। কিন্তু হাতেগোনা কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গত পাঁচবছরে উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। বাকি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো গত পাঁচবছরে তাদের ঠিকাদারি সনদ এমনকি ট্রেড লাইসেন্সও নবায়ন করেনি। এ কারণে গত পাঁচ বছরে সিটি করপোরেশনের রাজস্ব হারিয়েছে কয়েক কোটি টাকা। তবে ঠিকাদারি এবং ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন না করার পেছনে ভিন্ন যৌক্তিকতা তুলে ধরছেন ঠিকাদাররা।

তাদের দাবি, গত পাঁচ বছরে তাদের বকেয়া বিলের একটি টাকাও পরিশোধ করা হয়নি। এমনকি নির্ধারিত লাইসেন্সের বাইরে সাধারণ ঠিকাদারদের কোনো কাজ দেওয়া হয়নি। এ কারণে লাইসেন্স নবায়নে আগ্রহ দেখাননি অনেকে। নগর ভবনের একাধিক সূত্র বলছে, ঠিকাদারি কাজে অনিয়ম এবং দুর্নীতির কারণে বেশকিছু ঠিকাদারের বিল আটকে দিয়েছে নগর ভবন কর্তৃপক্ষ।

সিটি করপোরেশনের ঠিকাদার ও সরকারি ব্রজমোহন কলেজ ছাত্র কর্মপরিষদের সাবেক ভিপি মঈন তুষার বলেন, ‘ঠিকাদারি কাজের বিল আটকে আছে সিটি করপোরেশনের অনেক ঠিকাদারের। সব মিলিয়ে বকেয়া বিলের পরিমাণ শতকোটি টাকা ছাড়াবে। যেখানে আমার নিজেরই এক কোটি ৩০ লাখ টাকার বিল পাওনা। সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরনের আমল থেকে ঠিকাদারি বিল বকেয়া থাকলেও গত পাঁচ বছরে একটি টাকাও বকেয়া পরিশোধ করা হয়নি।’

সিটি করপোরেশনে কর্মরত ৫৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর ১৯ মাসের বেতন বকেয়া। এর সঙ্গে সিলেকশন গ্রেড, ইনক্রিমেন্ট এবং টাইম স্কেল বন্ধ রয়েছে চার বছরের অধিক সময় ধরে। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সদ্য সাবেক মেয়র দায়িত্ব নেওয়ার পর ১১ মাস নিয়মিত বেতন-ভাতা পেলেও হঠাৎ করেই তা বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির দায়ে বিভিন্ন সময় শাস্তি পাওয়া অন্তত ৪০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। আবার দুর্নীতির দায়ে চাকরি হারানো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বকেয়াও পরিশোধ হয়নি। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি, সব মিলিয়ে তাদের বকেয়ার পরিমাণ প্রায় শতকোটি টাকা হবে।

এ দেনার দায় নবনির্বাচিত মেয়র নেবেন কি-না তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। আবার দায় নিলেও দেনা পরিশোধে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন। তবে এসব প্রশ্নের উত্তর নবনির্বাচিত মেয়রের দায়িত্বগ্রহণের দিনে আসবে বলে আশাবাদী নগরবাসীর। তাছাড়া দায়িত্বগ্রহণ নিয়ে নতুন নগর পিতার সংবাদ সম্মেলনেও এসব বিষয় উঠে আসতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।

এদিকে মেয়াদ শেষ হওয়ার চারদিন আগে অব্যাহতি নিয়ে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।

বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) সকালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর কাছে লিখিতপত্র দিয়ে অব্যাহতি নেন তিনি। একই সঙ্গে প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটুকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন। মেয়র পদ থেকে বিদায় নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই বরিশাল নগরের উন্নয়নের জন্য প্রকল্প অনুমোদনের খবর আসে।

ওইদিন রাজধানীর শের-ই বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৭৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশন এলাকায় বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়।

ওইদিন অব্যাহতি নেওয়ার পর সদর রোডের লাইন রোডে সংক্ষিপ্ত নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নগরবাসীর উদ্দেশ্যে সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আপনারা আমাকে যে ভালোবাসা দিলেন, তার ঋণ আমি কোনোদিন শোধ করতে পারব না। আমার পূর্বপুরুষ আপনাদের সেবায় ছিলেন। আমি মেয়র ছিলাম। আজকে সাধারণ মানুষের কাতারে চলে এলাম। আপনাদের মাঝে আমাকে যেভাবে বরণ করলেন, তাতে নগরবাসীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’

সারাবাংলা/একে

খোকন সেরনিয়াবাত বরিশাল সিটি সাদিক আব্দুল্লাহ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর