অগ্নিসন্ত্রাস বন্ধে বিএনপির প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
১৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৪:৩০
ঢাকা: বিএনপিকে অগ্নিসন্ত্রাস বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ওদের সমুতি হোক, তারা এই ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করুক। অগ্নিসন্ত্রাস বন্ধ করুক। ইলেকশন হবে জনগণ যদি নৌকায় ভোট দেয় আবার ক্ষমতায় আসব, না দিলে কোনো আপসোস থাকবে না।
মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সারাদেশে ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ১৫৭টি প্রকল্পের আওতায় দেশব্যাপী নির্মিত ১০ হাজার ৪১টি অবকাঠামোর সমন্বিত উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রকল্পগুলোতে ব্যয় হয়েছে ৯৭ হাজার ৪৭১ কোটি তিন লাখ টাকা।
টানা মেয়াদে সরকার গঠন করার প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা জনগণের ভোটেই বারবার নির্বাচিত হয়ে এসেছি। আওয়ামী লীগ কোনোদিন গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ছাড়া সরকার গঠন করে নাই। নির্বাচনে জনগণ যেন ভোটের অধিকার সুষ্ঠভাবে প্রয়োগ করতে পারে, সেজন্য আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও ছবিসহ ভোটার তালিকাসহ যতগুলো সংস্কার হয়েছে, তা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবেই করা হয়েছে। শুধুমাত্র জনগণের ভোট নিশ্চিত করার জন্য। কারণ ওই রাতের অন্ধকারে অস্ত্র তুলে আবার জনগণের ভোগ্য নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
দীর্ঘ সময় সরকারের থাকায় পরিকল্পনা নিয়ে দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে দেখেছেন, কিভাবে আমরা দেশকে বদলে দিয়েছি। এখন আর এই দেশকে দেখে কেউ বলতে পারবে না, বাংলাদেশ দরিদ্র্য দেশ, প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ বা বাংলাদেশ হাত পেতে চলার দেশ না। আমরা এখন মর্যাদাশীল দেশ। উন্নয়নের রোল মডেল। আজকে সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। সকলের সহযোগিতার এত দ্রুত দেশকে উন্নত করতে পেরেছি। মাত্র ১৪ বছরে এই পরিবর্তন।’
তিনি বলেন, ‘এই দেশটাকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ। সারা বাংলাদেশে কথা দিয়েছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ করব, সেটা আমরা করতে পেরেছি। এখন আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ২০৪১ সালের বাংলাদেশ, যেটা হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। তারও পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আঞ্চলিক যোগাযোগেও দেশের উন্নয়ন যাতে ত্বরান্বিত হয় সে ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। ব্যবসা-বাণিজ্য সব ক্ষেত্রেই সকল সুবিধা এনে দিয়েছি।’
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে দেশবাসীকে একযোগে একগুচ্ছ উন্নয়ন প্রকল্পের উপহার দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেগুলো বাকি আছে অন্তত করে দিয়ে যাই। তারপর ইলেকশন হবে জনগণ যদি নৌকায় ভোট দেয় আসব, না দিলে আমার কোনো আপসোস থাকবে না। কারণ দেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় নিয়ে এসেছি, এইটুকু তো করতে পেরেছি। জনগণের ভোটের অধিকার আমরাই নিশ্চিত করেছি। কাজেই জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দেবে। অনেকেই নির্বাচনে আসতে চায় না। কারণ আপনারাই বলেন, ৩০টা আসন যারা পেয়েছিলেন তাদের তো নির্বাচনে আসার আকাঙ্ক্ষা থাকবে না। নির্বাচন বানচাল করে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি করে আবার বাংলাদেশের মানুষকে ভোগান্তির দেওয়াই তাদের চেষ্টা।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের মানুষ একটু শান্তিতে ছিল, স্বস্তিতে ছিল। উন্নয়ন দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিল। ঠিক সেই সময় অগ্নিসন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াও, বাসে ও গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত করা হচ্ছে। স্কুল-কলেজের ছেলে-মেয়েরা ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারছে না। তাদের লেখাপড়া নষ্ট করছে। যেখানে বিএনপির আমলে মাত্র ৩৫ ভাগ ছিল স্বাক্ষরতার হার। আজকে ৭৬.৬ ভাগের উন্নীত করেছি। আজকে ৮৯ ভাগ ছেলে-মেয়েই প্রাইমারি স্কুলে যায়। মেয়েরা পর্যন্ত স্কুলে যাচ্ছে। এসব ব্যাহত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
বিএনপির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এইটুকুই বলব ওদের সমুতি হোক। এই ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করুক, অগ্নিসন্ত্রাস বন্ধ করুক। দেশবাসীকেও বলব, আপনাদেরও এই অগ্নিসন্ত্রাস প্রতিরোধ করতে হবে। কারণ সকলের জানমাল আছে। যারা ২০১৩-২০১৪’তে অগ্নিদগ্ধ তাদের কষ্ট-ভোগান্তি আমরা দেখি। কাজেই এই ভোগান্তি যাতে আর মানুষের না হয়।’
প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন শেষে দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
সারাবাংলা/এনআর/এনএস