Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ন্যূনতম মজুরি নিয়ে মজুরি বোর্ডে ৩ সংগঠনের আপত্তি

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৪ নভেম্বর ২০২৩ ২২:১৯

ঢাকা: পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা প্রত্যাখান করে মজুরি বোর্ডে আপত্তি দিয়েছে তিনটি শ্রমিক সংগঠন। আরও বেশ কয়েকটি সংগঠনের পোশাক শ্রমিকদের নতুন মজুরি নির্ধারণের খসড়া গেজেটের ওপর আপত্তি দেওয়ার কথা রয়েছে। এসব আপত্তি ও সুপারিশ আমলেও নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী ২৬ নভেম্বর নিম্নতম মজুরি বোর্ডে বৈঠক হতে পারে। ওই বৈঠকে শ্রমিক ও মালিকপক্ষের প্রতিনিধিদের সম্মতির ওপর ভিত্তি করে চূড়ান্ত গেজেট হবে। ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা পরিবর্তন না হওয়ার আভাস মিললেও অন্য গ্রেডগুলোতে বেশকিছু পরিবর্তন আসার কথা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা আফরোজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত তিনটি সংগঠন খসড়া গেজেটের ওপর আপত্তি ও সুপারিশ জানিয়েছে।’ তবে সুনির্দিষ্টভাবে ওই ‍তিনটি সংগঠনের নাম জাননিনি তিনি।

রাইসা আফরোজ বলেন, ‘১১ নভেম্বর খসড়া গেজেট হয়েছে। ২৪ নভেম্বর খসড়ার ১৪ দিন হবে। সেদিন শুক্রবার থাকায় আমরা রোববার (২৬ নভেম্বর) বৈঠক করতে পারি। সেখানে বিভিন্ন সংগঠন যেসব পর্যবেক্ষণ দিচ্ছে, সবকিছুর সারসংক্ষেপ করে তা প্রেজেন্টশন আকারে উপস্থাপন করব। কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আসবে। যেহেতু খুব দ্রুত গেজেট করতে হয়েছে, বানানেও আমাদের বেশকিছু ভুল ছিল। আবার ন্যূনতম গ্রেডের সঙ্গে অন্যান্য গ্রেডের প্রার্থক্য খুব কম থাকার বিষয়টিও আমাদের নজরে এসছে। সবকিছুই পরবর্তী মিটিংয়ে উপস্থাপন করা হবে।’

এক প্রশ্নের উত্তরে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব বলেন, ‘খসড়া যে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে, মিটিংয়ের পরও তাতে কিছু পরিবর্তন আসবে।’

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন-

সচিব নাম প্রকাশ না করলেও যে তিনটি সংগঠন ন্যূনতম মজুরি নিয়ে আপত্তি করেছে, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র তাদের একটি বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সহসভাপতি জলি তালুকদার। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ন্যূনতম মজুরি পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছি। খসড়া গেজেট হওয়ার পর ১৪ দিন সময় থাকে। তাই এই ন্যূনতম মজুরি পুনর্বিবেচনার জন্য আমরা আপত্তি দিয়েছি। ২০ থেকে২৫ টি সংগঠনের ন্যূনতম মজুরির খসড়ায় আপত্তি দেওয়ার কথা রয়েছে।’

এক প্রশ্নের উত্তরে জলি তালুকদার বলেন, ‘ন্যূনতম মজুরি আরও বাড়ানো না হলে, খসড়া পুনর্বিবেচনা করা না হলে এই মজুরি বাস্তবায়ন করতে গেলে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে পারে। ২০১৮ সালেও একই ঘটনা ঘটেছিল। শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল। ফলে এই মজুরি পুনর্বিবেচনা করা মালিক-শ্রমিক ও সরকার সব পক্ষের জন্যই মঙ্গলজনক।’

নিম্নতম মজুরি বোর্ডের আপত্তি জানানোর কথা জানিয়েছেন গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপতি তাসলিমা আখতারও। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘ন্যূনতম মজুরির খসড়া প্রকাশের পরদিন ১২ নভেম্বর আমরা মজুরি বোর্ডে লিখিত আকারেই আপত্তি জানিয়েছি। তখনো আমরা খসড়া প্রজ্ঞাপন হাতে পাইনি। খসড়া হাতে পাওয়ায় এখন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রতিটি বিষয়ে আরেকবার লিখিত আপত্তি দিতে পারি।’

এক প্রশ্নের উত্তরে তাসলিমা আখতার বলেন, ‘১৪ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের এই আপত্তিগুলো আমলে নেওয়ার কথা। নিয়ম অনুযায়ী আপত্তি নিতে তারা বাধ্য। কিন্তু দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন চলছে। দমন-পীড়নের মাধ্যমে শ্রমিক আন্দোলন বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আপত্তিগুলো আমলে নেওয়া না হলে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

এখনো জমা না দিলেও মজুরি বোর্ডে ন্যূনতম মজুরি নিয়ে আপত্তি জানাবে সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন। সংগঠনটির সভাপতি নাজমা আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এখনো মজুরি বোর্ডে আপত্তি জানাতে পারিনি। কাল বা পরশু আমরা আপত্তি জানাব। আমরা ড্রাফট তৈরি করছি। কারণ সময় তো আছে ১৪ দিন। আমরা আশা করি আমাদের আপত্তি মজুরি বোর্ড আমলে নেবে। তবে আমলে না নিলে আর কী করার থাকবে! ধরেই নিতে হবে, মালিকরা অতীতের মতোই শ্রমিকদের ওপর জুলুম করছে।’

জানতে চাইলে নিম্নতম মজুরি বোর্ডে শ্রমিকদের প্রতিনিধি বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘যেসব সংগঠন এসব আপত্তি জানাচ্ছে তারা প্রকৃতপক্ষে গার্মেন্টস খাতের শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করে না। তারা কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তারা রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়।’

মালিকপক্ষ ঘোষিত ন্যূনতম মজুরির চেয়ে এক টাকাও বেশি দিতে পারবে না জানিয়ে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এর চেয়ে বেশি মালিকরা বাড়াবে না। তবে আরও যে চারটি গ্রেড আছে, সেখানে যে অনুপাতে মজুরি বাড়ানো হয়েছে তা নিয়ে মজুরি বোর্ডে আমি আমার আপত্তি জানাব। ১৪ দিন পর একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে অন্য গ্রেডগুলোর বিষয়টি তুলে ধরব। আশা করি তা বিবেচনা করা হবে।’

অন্যদিকে মজুরি বোর্ডে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘খসড়া গেজেটে ভুল-ত্রুটি থাকলে সেটি সংশোধন হবে। এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে যে মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে সেটিই তো মালিকরা দিতে পারবে না। ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের কাজ ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ, আমরা সেটি নির্ধারণ করেছি। অন্যান্য গ্রেডের মজুরিও সেভাবেই নির্ধারণ করা হয়েছে।’ পাঁচ গ্রেডের কোনোটিতেই নতুন করে মজুরি না বাড়ানোর আভাস দিয়েছেন এই পোশাক কারখানার মালিকদের প্রতিনিধি।

এর আগে গত ১১ নভেম্বর পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে খসড় প্রজ্ঞাপন জারি করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রালয়। আগে সাতটি গ্রেড থাকলেও বর্তমানে তা কমিয়ে পাঁচটি করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বনিম্ন গ্রেড-৫-এ ন্যূনতম বেতন ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ টাকা। এর মধ্যে মূল বেতন ৬৭০০ টাকা, বাড়ি ভাড়া ৩৩৫০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৭৫০ টাকা, যাতায়াত ভাতা ৪৫০ টাকা এবং খাদ্যভাতা রাখা হয়েছে ১২৫০ টাকা।

এ ছাড়া গ্রেড-১ বা সর্বোচ্চ গ্রেডের মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৭৫০ টাকা। এই গ্রেডে মাসিক মূল মজুরি বা বেতন ধরা হয়েছে ৮২০০ টাকা, বাড়ি ভাড়া ৪১০০ টাকা, চিকিৎসা ৭৫০ টাকা, যাতায়াত ৪৫০ টাকা ও খাদ্য ভাতা ১২৫০ টাকা। সব গ্রেডের মূল মজুরি মাত্র ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কম বেশি হলেও বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা, খাদ্য ও যাতায়াত ভাতা একই। আর সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মজুরির মূল বেতনের পার্থক্য রাখা হয়েছে মাত্র ২২৫০ টাকা।

৭ নভেম্বর রাজধানীর তোপখানা রোডে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের ষষ্ঠ বৈঠকে মালিক ও শ্রমিকপক্ষের দর কষাকষির ভিত্তিতে এই মজুরি নির্ধারণ করে মজুরি বোর্ড। পরে একই দিন সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান নতুন মজুরি ঘোষণা করেন।

তারও আগে পঞ্চম বৈঠকে আগের দেওয়া ১০ হাজার ৪০০ টাকার প্রস্তাব থেকে সরে আসে মালিকপক্ষ। শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠনের দাবি মেনে পোশাক মালিকরা মজুরি আরও বাড়াতে সম্মত হন। তবে তারা মজুরি কত বাড়াবেন, ওই বৈঠকে তা স্পষ্ট করেননি। শ্রমিকপক্ষও আগের দেওয়া ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার ৩৯৩ টাকার প্রস্তাবে অনড় ছিল। তবে ষষ্ঠ বৈঠকে দুইপক্ষই নূন্যতম নতুন মজুরি সাড়ে ১২ হাজারে সম্মত হয়।

এদিকে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বাড়াতে মজুরি বোর্ডে আলোচনা চলমান থাকা অবস্থাতেই দেশের বিভিন্ন এলাকার পোশাক কারখানায় আন্দোলন চলছিল। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন এখনো মাঠে রয়েছে। তারা এখনো সভা-সমাবেশ ও বিক্ষোভ করছে। এ ছাড়া শ্রমিক আন্দোলনের কারণে দেশের বেশকিছু কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে সেগুলো খুলতে শুরু করেছে। শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে ইচ্ছে প্রকাশ করায় কারখানাগুলো খুলে দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

গার্মেন্টস কারখানা নিম্নতম মজুরি বোর্ড ন্যূনতম মজুরি পোশাক কারখানা পোশাক শ্রমিক বিজিএমইএ মালিকপক্ষ শ্রমিক সংগঠন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর