সংলাপ কার সঙ্গে হবে— প্রশ্ন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
১৪ নভেম্বর ২০২৩ ২২:৩৯
ঢাকা: গণতন্ত্র সমুন্নত রাখার প্রয়োজনে আওয়ামী লীগ সংলাপে বসতে সবসময় প্রস্তুত বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। তবে সেই সংলাপ কার সঙ্গে হবে, সেই প্রশ্ন রেখেছেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, আমরা গণতন্ত্র ধ্বংস করতে চাই না। গণতন্ত্র সমুন্নত রাখার জন্য যা যা করা দরকার, আমরা তাই করব। সেখানে যদি সংলাপের প্রয়োজন হয়, আমরা করব। কিন্তু কার সঙ্গে (সংলাপ) করব, সেটি আমাদের বিবেচনার বিষয় আছে।
মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে আমরা টিকিয়ে রাখতে চাই। এই হরতাল, অবরোধের নামে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, জনগণের ভোট দেওয়ার অধিকার যেন বানচাল না হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে একটি সংলাপের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেটি কীভাবে দেখে— এমন প্রশ্ন রাখায় হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে। জবাবে তিনি বলেন, আমরা খুব ফ্রি কান্ট্রি, স্বাধীন দেশ। আমাদের দেশে সবাই যে যার মতামত দিতে পার। আমাদের বন্ধু দেশ কোনো পরামর্শ দিলে আমরা কিছু মনে করছি না। আমরা এটি সিরিয়াসলি নেই। মূল্যায়ন করি। যদি মনে করি (সেই পরামর্শ) দেশের জন্য মঙ্গলকর, আমরা গ্রহণ করি।
সংলাপ প্রসঙ্গে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির বিষয়টিকে উদাহরণ হিসেবে টেনে নেন ড. মোমেন। বলেন, শুধু বললেই তো হবে না। যেমন— একজন বলছে শ্রমিকের মজুরি হওয়া উচিত ২৫ হাজার টাকা। আমার এটা দেখতে ভালোই লাগবে। কিন্তু ২৫ হাজার দিয়ে ওই কোম্পানি টিকবে কি না, সেটিও তো দেখা উচিত। আমাদেরও সংলাপে আপত্তি নেই। কিন্তু কার সঙ্গে সংলাপ করব, সে সম্পর্কে আমাদের নিশ্চয়ই প্রশ্ন আছে।
দিল্লিতে ‘টু প্লাস টু’ সংলাপে যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশ নিয়ে তাদের অবস্থান জানিয়েছে ভারত। ভারতের এই অবস্থানের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হবে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ এবং তাদের সরকার অত্যন্ত পরিপক্ব। তারা যেগুলো বলছে সেগুলোতে আমাদের দ্বিমত নেই।
খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের চিঠি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, উনাকে (জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার) বলেন, উনার দেশে অভিযুক্ত ক্রিমিনালকে অন্য দেশে পাঠায় কি না। উনাকেই জিজ্ঞাসা করেন।
জয়েন্ট আরব ইসলামিক এক্সট্রাঅর্ডিনারি সামিট প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিত্ব করি। সেখানে যেটা ভালো লেগেছে, সব দেশেরই সরকারপ্রধান এসেছিলেন। বহুদিন সিরিয়ার প্রেসিডেন্টকে কোথায়ও দেখিনি। এবার উনার সঙ্গে অনেকক্ষণ আলাপ হলো। ইরান, সৌদি আরব, সিরিয়া একই জায়গাতে সবাই এসেছিলেন— এটি কিছুটা ইউনিক। সৌদি একটি নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়েছে।
ওই সামিটে ফিলিস্তিন প্রসঙ্গ আলোচনা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গাজায় যে নৃশংস বর্বরোচিত কাজটা হচ্ছে এবং মানবাধিকার, মানবাধিকার আইন, বাকস্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব সবসময় সোচ্চার হলেও ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে তারা চোখ বন্ধ করে রেখেছে। এটা নিয়ে সবাই উষ্মা প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ একটি প্রস্তাব দিয়েছিল, ইসরাইলের নিন্দা করাই যথেষ্ট না, ৭৫ বছর ধরে আমরা নিন্দা করছি, এখন সময় এসেছে ইসরাইল ও ইসরাইলি পণ্য বয়কট করার। তবে রেজ্যুলেশনে এটি আমরা আনতে পারিনি।
আবদুল মোমেন আরও বলেন, আমরা বলেছি— এটাকে যদিও যুদ্ধ বলা হচ্ছে, কিন্তু আসলে এটি যুদ্ধ নয়। বন্দি কিছু মানুষকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। এখানে অধিকাংশ বাচ্চা ও নারী। নিহতদের ৭৫ শতাংশ নারী বা শিশু। এটি সবচেয়ে নিকৃষ্ট শিশু গণহত্যা।
সারাবাংলা/আইই/টিআর